দুরন্ত: সৈকতের বিস্ময় গোল নিয়ে আলোড়ন। —নিজস্ব চিত্র।
সৈকত সরকার কি কলকাতা ময়দানের জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ?
দমদমের অমল দত্ত স্টেডিয়ামে কাস্টমসের বিরুদ্ধে প্রিমিয়ার ডিভিশনের ম্যাচে মঙ্গলবার ১৮ গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে সাইডভলিতে বিস্ময় গোলের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে এরিয়ানের এই প্রতিশ্রুতিমান বঙ্গ উইঙ্গার। এ বার ফিফার পুসকাস পুরস্কারের জন্য সৈকতের নাম পাঠাল আইএফএ! ২০০৯ সাল থেকে ফিফা এই পুরস্কার দিচ্ছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গোলদাতাকে। প্রথম বছর এই সম্মান পেয়েছিলেন সৈকতের প্রিয় নায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। গত বছর জেতেন পোল্যান্ডের মার্সিন ওসেক্সি।
প্রথম পর্যায়ে আগের বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হওয়া ১০টি সেরা গোল প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয় ফিফার তরফে। এর পরে দর্শকদের বিচারে সেরা তিনটি গোল নির্বাচিত করা হয় প্রত্যেক বছর নভেম্বর মাসের শেষে। ফের শুরু হয় ভোট প্রক্রিয়া। যা শেষ হয় পুরস্কার দেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগে। সর্বাধিক ভোট পাওয়া ফুটবলার পান এই সম্মান। এই কারণেই সময় নষ্ট না করে বুধবারই সৈকতের নাম ও গোলের ভিডিয়ো পাঠিয়ে দিয়েছে আইএফএ। সচিব অনির্বাণ দত্ত বললেন, ‘‘সৈকতের গোল প্রথম দশের মধ্যে থাকলেও ঐতিহাসিক ঘটনা হবে।’’
পুসকাস পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম পাঠানো হয়েছে শুনে আপ্লুত সৈকত। ২৬ বছর বয়সি প্রতিশ্রুতিমান বঙ্গ উইঙ্গারের বাড়ি কল্যাণীর কাঁঠালতলায়। বাবা স্থানীয় একটি নার্সারির কর্মী। ফুটবল খেলে সামান্য রোজগার সৈকতের। সংসারের অভাব, চোট-আঘাতের সমস্যা সত্ত্বেও হার মানেননি তিনি। নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। চলতি কলকাতা লিগে পুলিশ এসির বিরুদ্ধেও হ্যাটট্রিক করেছিলেন। পরের ম্যাচে কাস্টমসের বিরুদ্ধে এই বিস্ময় গোল।
রোনাল্ডো-ভক্ত সৈকত বললেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই এ ভাবে গোল করার মহড়া দিয়েছি অনুশীলনে। কাস্টমসের বিরুদ্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে ছিলাম। প্রধান লক্ষ্য ছিল হার বাঁচানো। রাকেশের (কর্মকার) ফ্রি-কিক উড়ে আসতেই সিদ্ধান্ত নিই হাফভলি করব। বল ও পায়ের সংযোগ ঠিক হওয়ায় গোল করতে সমস্যা হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা জিততে পারলাম না।’’ উচ্ছ্বসিত সৈকতের শৈশবের কোচ বিমান মণ্ডল বলেন, ‘‘ওর সবচেয়ে বড় গুণ হার-না-মানা মনোভাব। প্রচণ্ড পরিশ্রম করেই এই জায়গায়পৌঁছেছে সৈকত।’’
কলকাতা ময়দানে সৈকতের অভিষেক বালী প্রতিভার জার্সিতে। খিদিরপুর, রেনবো ও কাস্টমসে খেলেছেন তিনি। ২০২০-’২১ মরসুমে আই লিগ খেলতে যোগ দিয়েছিলেন রিয়াল কাশ্মীরে। কিন্তু কোচের পরামর্শে নিয়মিত খেলার লক্ষ্যেই সৈকত ফেরেন কলকাতায়। বললেন, ‘‘আমার পাখির চোখ এখন আই লিগে খেলে নিজেকে প্রমাণ করা। যাতে আইএসএলে খেলার সুযোগ পাাই।’’