যুযুধান: আইএসএল ট্রফির সামনে দুই দলের কোচ জুয়ান এবং গ্রেসনের সঙ্গে দুই অধিনায়ক প্রীতম এবং সুনীল। ছবি:আইএসএল।
দক্ষিণ গোয়ার বেনোলিমের মাঠে শুক্রবার রাতে অনুশীলন শেষ করে দিমিত্রি পেত্রাতোস, মনবীর সিংহরা গল্পে মেতে উঠেছেন। কিন্তু হুগো বুমোস তখনও একা একাই গোলে বল মেরে চলেছেন। কখনও বক্সের বাইরে থেকে দূর পাল্লার শট মারছেন। কখনও আবার পেনাল্টি কিক করছেন। হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে আইএসএলের সেমিফাইনালের দুই পর্বেই গোল করতে না পারার যন্ত্রণা যেন এটিকে-মোহনবাগানের মাঝমাঠের স্তম্ভকে অস্থির করে তুলেছে। শনিবার ফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে গোল করেই সেই আক্ষেপ ভুলতে চান।
শুক্রবারও এটিকে মোহনবাগান তারকা বললেন, ‘‘বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে আমাদের গোল করতেই হবে। যে কোনও মূল্যে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’’ মুম্বই সিটি এফসি-র হয়ে এর আগেও এই প্রতিযোগিতায় খেতাব জিতেছেন তিনি। তাতেও যেন মন ভরেনি। বললেন, ‘‘এফসি গোয়ার হয়ে ভারতে যখন প্রথম খেলতে এসেছিলাম, তখন বয়স ছিল ২২ বছর। গত পাঁচ বছরে চারটি ট্রফি জিতেছি। এ বার আমার লক্ষ্য পঞ্চম ট্রফি জেতা।’’
হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে দু’টি সেমিফাইনালেই চেনা ছন্দে দেখা যায়নি বুমোসকে। ম্যাচের শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের প্রধান লক্ষ্য ছিল তাঁকে খেলতে না দেওয়া। বেঙ্গালুরুর কোচ সাইমন গ্রেসনও বুমোসকে আটকানোর রণনীতি নিয়েই নামবেন। যদিও তা নিয়ে চিন্তিত নন মোহনবাগান তারকা। বলছিলেন, ‘‘আশিক কুরুনিয়ন ফেরায় এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত। আশা করছি, স্বাভাবিক খেলাই খেলতে পারব।’’
ফাইনালের আগে শেষ প্রস্তুতিতে আশিকের সঙ্গে বেশি সময় কাটালেন বুমোস। একঘেয়েমি কাটাতে কোচ জুয়ান ফেরান্দো এ দিন প্রথমে ফুটবলারদের হ্যান্ডবল খেলান। তার পরে অর্ধেক মাঠে শুরু করেন ম্যাচ অনুশীলন। সব শেষে দীর্ঘক্ষণ টাইব্রেকার অনুশীলন। অনুশীলন ম্যাচে আশিকের সঙ্গে জুটি বেঁধেই আক্রমণে ঝড় তুলছিলেন বুমোস। একের পর এক গোলের পাস দিলেন দিমিত্রি ও মনবীরকে। বলছিলেন, ‘‘দিমি (দিমিত্রি) গোলটা খুব ভাল চেনে। খেলা তৈরিতেও সাহায্য করে। ওর মতো ফুটবলার পাশে থাকলে অনেক খোলা মনে খেলা যায়।’’
বুমোসের মতোই ছটফট করছেন ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। যদিও আইএসএলের শেষ পাঁচটি ম্যাচে তাঁকে বাদ দিয়েই প্রথম একাদশ গড়েছিলেন বেঙ্গালুরু এফসির কোচ সাইমন গ্রেসন। পরিবর্ত হিসেবে নেমেই ফুল ফুটিয়েছেন সুনীল। প্লে-অফে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে গোল করে দলকে শেষ চারে তুলেছেন সুনীল। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে তাঁর একমাত্র গোলেই মুম্বই সিটি এফসিকে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু। ফিরতি ম্যাচেও তিনি টাইব্রেকারে গোল করেছিলেন।
শনিবার আইএসএলের ফাইনালে সুনীলকে নিয়ে বেশি চিন্তিত সবুজ-মেরুন শিবির। প্রশ্ন উঠছে বেঙ্গালুরুর কোচ কি এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে ফেরাবেন অধিনায়ককে? নাকি ‘সুপার সাব’ হিসেবেই ব্যবহার করবেন? শুক্রবার দুপুরে ভার্কার এক হোটেলে সাংবাদিক বৈঠকে সুনীলের দিকে তাকিয়ে গ্রেসনের জবাব, ‘‘ম্যাচের আগে প্রথম একাদশ দেখলেই তা বুঝতে পারবেন।’’ এর পরেই বললেন, ‘‘সুনীল ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। ওর মতো অসাধারণ ও অভিজ্ঞ ফুটবলারকে বাদ দিয়ে প্রথম একাদশ গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই কঠিন। কিন্তু কোচ হিসেবে আমি দলের জন্য যা ঠিক মনে করি, সেটাই করব।’’
কোচের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কতটা কঠিন? সুনীলের জবাব, ‘‘কোনও খেলাতেই আমি কখনও রিজ়ার্ভ বেঞ্চে বসা পছন্দ করি না। আইএসএলের ফাইনাল হোক বা টেবল টেনিস, আমি খেলতে চাই। আমাদের কোচও তা জানেন।’’ তা হলে? যোগ করলেন, ‘‘প্রথম একাদশ নাম না দেখলে যখন কষ্ট হয়, তখন নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি, কোচ তো দলের ভালর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি অনুশীলনে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতাম ও তৈরি থাকতাম। যাতে যখনই সুযোগ পাব, নিজের সেরাটা দিতে পারি।’’