মহড়া: ইউরোর উদ্বোধনী ম্যাচে নামার আগে শেষ মুহূর্তের অনুশীলনে টোনি ক্রোস, টমাস মুলাররা। বৃহস্পতিবার মিউনিখে। ছবি: সংগৃহীত।
অপেক্ষার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। শুক্রবার ভারতীয় সময় রাত ১২.৩০ থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে ফুটবলে ইউরোপ সেরা হওয়ার লড়াই। মিউনিখে উদ্বোধনী ম্যাচে আয়োজক দেশ জার্মানির প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড।
ব্রাজিলে ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চতুর্থবার বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই ছন্দপতন জার্মানির। ২০১৮ ও ’২২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন টোমাস মুলার-রা। ছবিটা বদলায়নি ইউরোতেও। ২০১৬ সালে শেষ চার থেকে বিদায়। চার বছর আগে ইংল্যান্ডে শেষ ষোলোতেই থেমে গিয়েছিল জার্মানি। ১৯৯৬ সালে শেষ বার ইউরো জিতেছিল জার্মানি। দেশের মাটিতে ২৮ বছরের অপেক্ষার কি অবসান এ বার ঘটাতে পারবেন জামাল মুসিয়ালা-রা?
ইউরোয় যাত্রা শুরুর আগে জার্মানি হারিয়েছে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও গ্রিসকে। ড্র করেছে ইউক্রেনের সঙ্গে। সম্প্রতি জার্মানির কোচ য়ুলিয়ান নাগেলসমানের অস্বস্তি বেড়েছে চোট পেয়ে আলেকজ়ান্ডার পাভলোভিচ ছিটকে যাওয়ায়। পরিস্থিতি সামলাতে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তোলা এমরে কান-কে নিয়েছেন তিনি।
ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল জার্মানি ও স্পেন। দু’টি দেশই তিনবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর স্কটল্যান্ড কখনও গ্রুপ পর্বের বাধাই টপকাতে পারেনি। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা জার্মানিকেই এগিয়ে রাখছেন। কিন্তু অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের কথা। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোনও মতে ২-১ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। সৌজন্যে স্কটল্যান্ডের টোমাস বয়েডের আত্মঘাতী গোল। সেই ম্যাচের পরে ফুটবল সম্রাট পেলে বলেছিলেন, ‘‘ব্রাজিল বিশ্বের সেরা দল। কিন্তু এই ম্যাচে স্কটল্যান্ড খেলতেই দেয়নি। রক্ষণ মজবুত করে প্রতিআক্রমণে উঠে ব্রাজিলের যাবতীয় পরিকল্পনাভেস্তে দিয়েছিল।’’
ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে ইউরোর উদ্বোধনী ম্যাচে জার্মানিকেও কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারে স্কটল্যান্ড। হয়তো এই কারণে উদ্বিগ্ন নাগেলসমান। জার্মান কোচ বলেছেন, ‘‘স্কটল্যান্ড দুর্দান্ত খেলে মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করেছে। ওদের চার-পাঁচ জন অসাধারণ ফুটবলার রয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে। এই ম্যাচে আমরাই চাপে থাকব।’’ জার্মানির প্রধান সমস্যা গোল করার মতো ফুটবলারের অভাব। তরুণ মুসিয়ালা তুরুপের তাস হতে পারেন নাগেলসমানের। এ ছাড়াও টোনি ক্রোস, ম্যানুয়েল নয়্যার, ইকেই গুন্দোয়ান, মুলারের মতো অভিজ্ঞরা রয়েছেন দলে। জার্মান কোচ বলছেন, ‘‘ফুটবলারদের বলেছি অতীত নিয়ে না ভেবে সামনের দিকে তাকাতে হবে। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ সবসময়ই কঠিন হয়। আশা করছি, ছেলেরা হতাশ করবে না।’’ স্কটল্যান্ড ছাড়াও ‘এ’ গ্রুপে জার্মানির সঙ্গে রয়েছে হাঙ্গেরি ও সুইৎজ়ারল্যান্ড।
জার্মানির রক্ষণের অন্যতম ভরসা আন্তোনিয়ো রুডিগার জানিয়ে দিয়েছেন অতীত নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘স্কটল্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, আমরা ওদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে মাঠে নামব না। অতীত নিয়েও ভাবতে চাই না।’’ যোগ করেছেন, ‘‘উত্থান-পতন সর্বত্রই থাকে। প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন হয়। আমাদের মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে।’’
স্কটল্যান্ডের একাধিক ফুটবলারই ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেন। এই কারণেই শক্তিশালী জার্মানির মুখোমুখি হওয়ার আগে স্বস্তিতে কোচ স্টিভ ক্লার্ক। তিনি বলেছেন, ‘‘ইউরোর মূল পর্বে ফের যোগ্যতা অর্জন করতে পেরে আমরা সকলেই গর্বিত। প্রত্যেকেই উত্তেজিত এবং মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। আমার দলের অধিকাংশ ফুটবলারেরই বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে সব ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য ওরা তৈরি। চাপ সামলাতেও ওদের কোনও সমস্যা হবে না।’’ এর পরেই জার্মানির প্রশংসা করে স্টিভ যোগ করেছেন, ‘‘অনেকে জার্মানিকে দুর্বল মনে করছে। আমি মনে করি, নাগেলসমানের কোচিংয়ে অন্যতম সেরা দলের মতোই ওরা খেলব।’’