ভরসা: মুম্বই ম্যাচের প্রস্তুতিতে মগ্ন দিমিত্রি। মোহনবাগান এক্স।
অনুশীলন শেষ করে ব্রেন্ডন হামিল ও দিমিত্রি পেত্রাতস মাঠ ছেড়ে বেরোতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন শ’খানেক মোহনবাগান সমর্থক। কারও হাতে সবুজ-মেরুন জার্সি। কেউ নিয়ে এসেছেন গোলের পরে দিমিত্রি-র উল্লাস করার বিশাল পোস্টার। কারও হাতে আবার ডায়েরি। পাশ দিয়ে লিস্টন কোলাসো, গ্লেন মার্টিন্সরা বেরোচ্ছিলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধের যুবভারতীতে তাঁদের নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই সমর্থকদের। যাবতীয় আকর্ষণ দিমিত্রিকে নিয়েই।
আইএসএলে গত মরসুমে মোহনবাগানের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন দিমিত্রি। এ বারও দুরন্ত ছন্দে অস্ট্রেলীয় তারকা। ২২ ম্যাচে ১০টি গোল করেছেন তিনি। গোলের পাস দিয়েছেন সাতটি। শনিবার যুবভারতীতে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে সবুজ-মেরুন জনতা ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্ন দেখছেন দিমিত্রিকে ঘিরেই। তুঙ্গে টিকিটের চাহিদা। অনলাইনের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার সকালে মোহনবাগান মাঠে টিকিট পাওয়ার আশায় ভিড় করেছিলেন কয়েকশো সমর্থক। বিকেলেও যুবভারতীর টিকিট কাউন্টারের সামনেও এক ছবি। দিমিত্রি ও হামিলের কাছেও টিকিটের আব্দার করলেন সমর্থকরা। সবুজ-মেরুন তারকা হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘আমাদের কাছে টিকিট নেই।’’ এক সমর্থক বলেই ফেললেন, ‘‘টিকিট দিতে হবে, ফাইনালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গোল করতেই হবে।’’ দিমিত্রির আশ্বাসবাণী, ‘‘ফাইনালে জিতে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব।’’
ফাইনালের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে দিমিত্রি-রা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও সতর্ক কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। রণকৌশল ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনুশীলনের সময় মাঠের ৫০০ মিটারের মধ্যেও কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না তিনি। হাবাসের প্রধান চিন্তা মুম্বইয়ের তিন তারকা হর্ঘে পেরেরা দিয়াস, লালিয়ানজ়ুয়ালা ছাংতে ও বিপিন সিংহকে নিয়ে। দুই প্রান্ত দিয়ে ঝড় তোলেন ছাংতে ও বিপিন। মাঝখান থেকে আক্রমণ করেন হর্ঘে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার অনুশীলনে হাবাস মূলত জোর দিয়েছেন, মুম্বইয়ের আক্রমণের সময় ফুটবলাররা কী ভাবে মাঠে জায়গা নেবেন তার উপরে।
গত ১৫ এপ্রিল যুবভারতীতেই মুম্বইকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম লিগ-শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। শনিবার আইএসএলের ফাইনালেও ফের দিমিত্রিদের মুখোমুখি ছাংতে-রা। কয়েক দিন আগে ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সাব্বির আলি বলেছিলেন, ‘‘আইএসএলে ফাইনালে মোহনবাগানই এগিয়ে থাকবে। ঘরের মাঠে নিজেদের দর্শকদের সামনে খেলবে হাবাসের দল। তা ছাড়া এই মুহূর্তে দুরন্ত ছন্দে থাকা মোহনবাগানকে আটকানো মুম্বইয়ের পক্ষে কঠিন।’’ মোহনবাগান জনতাও বিশ্বাস করেন, মুম্বইকে হারিয়ে মোহনবাগানের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ব্যতিক্রম হাবাস। তাঁর মতে লিগ-শিল্ড জয়ের স্বপ্নভঙ্গের বদলা নিতে মরিয়া থাকবেন মুম্বইয়ের ফুটবলাররা। যদিও বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় পৌঁছনোর আগেই মুম্বইয়ের কোচ পেত্হ ক্রাটকি বলেছেন ‘‘যুবভারতীতে ষাট হাজার দর্শকের সামনে দারুণ ম্যাচ হতে চলেছে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলা একেবারেই সহজ হবে না। ফাইনালে আরও ভাল খেলার ব্যাপারে আশাবাদী। ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ করেছি। শারীরিক ভাবে তরতাজা হয়ে শেষ ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।”
মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বসু আত্মবিশ্বাসী চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারে। তাঁর কথায়, ‘‘কঠিন পরিস্থিতিতেই সবসময় ঘুরে দাঁড়াই আমরা। ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধেও তা প্রমাণ করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘পুরো মরসুম জুড়ে আমরা যে কঠোর পরিশ্রম করেছি, তার ফল আমরা পেয়েছি।” সতীর্থদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে শুভাশিস আরও বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে আমি গর্বিত। আমাদের সামনে আর একটা ম্যাচ বাকি রয়েছে। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’’