কীর্তি: হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ১২ সেকেন্ডে গোল করার পরে ডেভিডকে নিয়ে উচ্ছ্বাস সতীর্থদের। আইএসএল আইএসএল
ধন্যবাদ ডেভিড উইলিয়ামস। ৪৬ বছর আগে মোহনবাগানের হয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মহম্মদ আকবরের ১৭ সেকেন্ডে করা গোলের স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহের ব্যর্থতায় জয়ের হ্যাটট্রিক করে এটিকে-মোহনবাগানের টেবলের শীর্ষ স্থান দখলের আশা অপূর্ণই থাকল।
বুধবার হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে এটিকে-মোহনবাগানের প্রথম একাদশ দেখে অবাকই হয়েছিলাম। রয় কৃষ্ণ নেই। জুয়ান ফেরান্দো প্রথম দলে রেখেছেন উইলিয়ামসকে। কে ভেবেছিল আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করে রয়েছে!
খেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হুগো বুমোসের ব্যাক পাস থেকে বল পেয়ে হায়দরাবাদ পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে বাঁ-পায়ের দুরন্ত শটে বল জালে জড়িয়ে দিল উইলিয়ামস। ম্যাচের বয়স তখন ১২ সেকেন্ড! আইএসএলের ইতিহাসে দ্রুততম গোল। বাহবা দিতে হবে জুয়ানকেও। এটিকে-মোহনবাগান কোচ জানত, বিপক্ষের ফুটবলাররা কৃষ্ণকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেবে না। উইলিয়াসমকে নামিয়েই বাজিমাত করল জুয়ান।
উইলিয়ামসের এই গোল আমার ১৯৭৬ সালের ডার্বির স্মৃতি ফেরাল। আমি তখন ইস্টবেঙ্গলে। ১৭ সেকেন্ডে উলগানাথনের সেন্টার থেকে হেডে করেছিল আকবর। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। বুধবার আমাদের মতোই অবস্থা হয়েছিল হায়দরাবাদের ফুটবলারদের। ওদের গোলরক্ষক লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণির ভুলেই উইলিয়ামস গোলটা করতে পেরেছিল।
এটিকে-মোহনবাগান গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহও যে কোনও অংশে কাট্টিমণির চেয়ে কম নয়, প্রমাণ করল ১৮ মিনিটেই। বাঁ-প্রান্ত থেকে অনিকেত যাদব বল ভাসিয়ে দেয় সবুজ-মেরুনের পেনাল্টি বক্সে। অবিশ্বাস্য ভাবে অমরিন্দর বল গ্রিপ করতে গিয়ে ফেলে দেয়। সামনে দাঁড়ানো বার্তোলোমেউ ওগবেচের মতো ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার পায়ের টোকায় বল জালে জড়িয়ে দিতে ভুল করেনি।
মুম্বই সিটি এফসি থেকে অমরিন্দরকে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে কী কারণে এটিকে-মোহনবাগান সই করিয়েছে, তা আমার কাছে রহস্য। ওর ভুলে প্রথমার্ধেই আরও গোল খেতে পারত উইলিয়ামসরা। এক বার তো বল বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে সরাসরি ওগবেচের পায়ে জমা দিয়েছিল অমরিন্দর। অবিশ্বাস্য ভাবে হায়দরাবাদের স্ট্রাইকার ফের সবুজ-মেরুন গোলরক্ষকের হাতেই বল তুলে দিয়েছিল বলে রক্ষা। হতাশ হয়েছি লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিংহের খেলা দেখেও।
এটিকে-মোহনবাগান বনাম হায়দরাবাদ ম্যাচের ছন্দ কিছুটা নষ্ট হয় ৪১ মিনিটে ওগবেচের কনুইয়ের আঘাতে কার্ল ম্যাকহিউ মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারানোয়। আট মিনিট বন্ধ ছিল ম্যাচ। স্বস্তি ফিরল কার্লকে উঠে দাঁড়াতে দেখার পরেই। যদিও আর ও খেলতে পারেনি। অ্যাম্বুল্যান্সে করে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল কার্লকে। পরিবর্তে নেমে দারুণ খেলল জনি কাউকো।
প্রথমার্ধ ১-১ শেষ হওয়ার পরে বারবার মনে হচ্ছিল, কৃষ্ণকে নামানো উচিত জুয়ানের। কারণ, উইলিয়ামসের সঙ্গে ওর বোঝাপড়া দুর্দান্ত। ওরা একসঙ্গে খেললেই গোল হবে। এই ম্যাচে যা অত্যন্ত জরুরি ছিল। কারণ, অমরিন্দরের উপরে ভরসা করা যায় না। ৬৪ মিনিটে এটিকে-মোহনবাগান ২-১ এগিয়ে গেল সেই উইলিয়ামসের জন্য। বল নিয়ে বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের মধ্যে থেকে বিদ্যুৎ গতিতে ছিটকে বেরিয়ে বক্সে ঢুকে ও সেন্টার করে। শরীর ছুড়ে হেড করে জনি। বল আশিস রাইয়ের পায়ে গেলে গোলে ঢোকে। জনির দুর্ভাগ্য, রেফারি আত্মঘাতী গোলের নির্দেশ দেন।
এটিকে-মোহনবাগান ২-১ এগিয়ে যাওয়ার পরেও স্বস্তিতে ছিলাম না। তবে ৭২ মিনিটে কৃষ্ণকে মাঠে নামার জন্য তৈরি হতে দেখে সেই চাপ কিছুটা কমেছিল। ভাবিনি যে উইলিয়ামসকে তুলে কৃষ্ণকে নামাবে স্পেনীয় কোচ। তখনই মনে হচ্ছিল, এর মূল্য দিতে হবে এটিকে-মোহনবাগানকে। আমার আশঙ্কাই ঠিক হল। সংযুক্ত সময়ে (৯০+১ মিনিট) আকাশ মিশ্র বল ভাসিয়ে দিয়েছিল সবুজ-মেরুনের বক্সে। পরিবর্ত হিসেবে নামা সিভেরিরো হেডে ২-২ করে।
এই গোলের জন্য দায়ী তিরি ও অমরিন্দর। প্রথম জন বলের ফ্লাইট বুঝতে পারেনি। দ্বিতীয় জন একটু তৎপর হলেই বলে হাত ছোঁয়াতে পারত। নাটকীয় ভাবে হার বাঁচিয়ে ৯ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট অর্জন করে লিগ টেবলের শীর্ষে চলে গেল হায়দরাবাদ। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকল এটিকে-মোহনবাগান। উইলিয়ামসের জন্যই কষ্ট বেশি হচ্ছে।
এটিকে-মোহনবাগান: অমরিন্দর সিংহ, আশুতোষ মেহতা, প্রীতম কোটাল, তিরি, প্রবীর দাস, দীপক টাংরি, কার্ল ম্যাকহিউ (জনি কাউকো), মনবীর সিংহ, হুগো বুমোস, লিস্টন কোলাসো (শুভাশিস বসু), ডেভিড উইলিয়ামস (রয় কৃষ্ণ)।