গোলের পর উচ্ছ্বাস লিস্টনের। নিজস্ব চিত্র
শনি-বিকেলে জোড়া ঝড় দেখল যুবভারতী। বিকেলের কালবৈশাখী এক ঘণ্টা বন্ধ রাখল ম্যাচ। এর পর লিস্টন কোলাসের ঝড় উড়িয়ে দিল বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসকে। কালবৈশাখীর ঝড়ে যদি শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে গিয়ে থাকে, তা হলে যুবভারতীতে লিস্টন-ঝড়ে লন্ডভন্ড বসুন্ধরার রক্ষণ। বাংলাদেশের ক্লাবটিকে ৪-০ গোলে হারিয়ে এএফসি কাপে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখল এটিকে মোহনবাগান। কোলাসোর হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি অপর গোল ডেভিড উইলিয়ামসের।
ম্যাচের শুরুটাই হয়েছিল নাটকীয় ভাবে। যুবভারতীতে দুপুর থেকেই কালো করে এসেছিল আকাশ। ম্যাচ শুরু হওয়ার চার মিনিটের মধ্যেই শুরু হল প্রবল ঝড়। উড়ে গেল স্টেডিয়ামের চাল, মাঠ ঢেকে গেল প্লাস্টিক, কাগজে। চারিদিকে ধুলোর ঝড়। এর মধ্যেই সাইডলাইনের বিলবোর্ড লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় কিছুক্ষণ ম্যাচ বন্ধ রেখেছিলেন রেফারি। কিন্তু আরও মিনিট সাতেক গড়ানোর পর ঝড় এবং বৃষ্টি বাড়তে থাকায় ম্যাচ বন্ধ করতে বাধ্য হলেন তিনি। প্রায় ৫৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর শুরু হয় ম্যাচ।
সন্দেশ জিঙ্ঘনকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ধোঁয়াশা ছিল। শনিবার তাঁকে প্রথম একাদশে জায়গা দিলেন জুয়ান ফেরান্দো। দলে আরও কিছু বদল করেন তিনি। অমরিন্দর সিংহের জায়গায় গোলকিপার হিসাবে নিয়ে আসেন অর্শ আনোয়ারকে। প্রথম একাদশে ফেরেন কার্ল ম্যাকহিউ, দীপক টাংরি। এ দিন ৪-২-৩-১ ছকে খেলা শুরু করেছিল এটিকে মোহনবাগান। ডিফেন্স শক্তিশালী করতে টাংরিকে ডিফেন্সিভ ব্লকার হিসাবে খেলানো হয়।
কৃষ্ণের সঙ্গে উল্লাস লিস্টনের। নিজস্ব চিত্র
প্রথম কয়েক মিনিটে দাপট দেখাচ্ছিল বসুন্ধরা। ১৮ মিনিটে রবসনের ফ্রিকিক থেকে রিমন হোসেনের হেড পোস্টে লেগে ফেরে। তিন মিনিট পরেই ফের বসুন্ধরার আক্রমণ। বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো ক্লিয়ার করেছিলেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডার। চলতি বলে বাঁ পায়ে দুরন্ত শট নেন রিমন। আনোয়ারের আঙুলে ছুঁয়ে বল ক্রসবারে লেগে ফেরে। এর পর হঠাৎ করেই এটিকে মোহনবাগানের আক্রমণের সামনে হারিয়ে গেল বসুন্ধরা। ২৫ মিনিটে কার্ল ম্যাকহিউয়ের পাস থেকে বল পেয়েছিলেন লিস্টন কোলাসো। বিশ্বনাথ ক্লিয়ার করতে গিয়েও অবিশ্বাস্য ভাবে মিস করেন। গোলকিপারকে টপকে সহজেই সবুজ-মেরুনকে এগিয়ে দেন লিস্টন।
৩৪ মিনিটে আবার এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। এ বার ডিফেন্সচেরা পাস দেন কাউকো। সুযোগসন্ধানী লিস্টন তৈরিই ছিলেন। বসুন্ধরার সমস্ত ডিফেন্ডারদের টপকে বিপক্ষ গোলকিপার আনিসুর রহমানকে টপকে বল জালে জড়ান। প্রথমার্ধে আক্রমণ বজায় রাখলেও আর গোল পায়নি সবুজ-মেরুন।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করে তারা। লক্ষ্য ছিল গোল তুলে নেওয়া। শুরুতেই অবশ্য এগিয়ে যেতে পারত বসুন্ধরা। ইয়াসিন আরাফতের শট দক্ষতার সঙ্গে বাঁচান আনোয়ার। তবে দু’মিনিট পরেই হ্যাটট্রিক সম্পূর্ণ করেন লিস্টন। মনবীরকে আটকাতে ব্যর্থ হন বিপক্ষের খালেদ শফি। তাঁর পাস থেকে গোল লিস্টনের। ৭২ মিনিটে লিস্টনকে তুলে নেন ফেরান্দো। তাঁর জায়গায় নামেন ডেভিড উইলিয়ামস। মাঠে নামার চার মিনিটের মধ্যেই গোল পেলেন তিনি। শুভাশিস বসুর পাস থেকে গোল করেন উইলিয়ামস।
বসুন্ধরাকে এই গ্রুপে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন এটিকে মোহনবাগান তাদের সাধারণ দলের পর্যায়ে নামিয়ে আনল। বিদেশি রবসন বাদে কেউই নজর কাড়তে পারলেন না। বাকি বিদেশিরা ক’বার বল পেয়েছেন সন্দেহ।