ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল। ফাইল ছবি।
বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা নির্বাসনে পাঠাল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে। সকালের আলো ফোটার আগেই খবরটা নাড়িয়ে দিয়েছে ভারতের ক্রীড়ামহলকে। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে অনেকটা সময়, এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বলে পরিচিত প্রফুল্ল পটেলের।
ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনে শেষ নির্বাচিত প্রধান ছিলেন প্রফুল্ল। কিন্তু মেয়াদ ফুরোনোর পরও দীর্ঘ দিন এআইএফএফ-এর সভাপতি পদ আটকে রাখার কারণে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তাঁকে সরতে হয়। তার পর থেকেই নানা ডামাডোলে ক্রমশ ডুবছে ভারতীয় ফুটবল। চূড়ান্ত ধাক্কাটা এল ১৬ অগস্ট, ফিফার নির্বাসনের মধ্যে দিয়ে। ঘটনাচক্রে এই দিনটি দেশে ফুটবলপ্রেমী দিবস হিসাবে পালিত হয়।
ভারতের ক্রীড়াজগতে রাজনীতিবিদদের রমরমা নতুন নয়। ফুটবলে দীর্ঘ কাল ধরেই ধারাবহিক ভাবে রাজনীতিবিদদের শাসন। অধুনা প্রয়াত বাংলার কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে নিয়ে যে ঘরানার শুরু, তারই ঐতিহ্য বহন করছেন আজকের প্রফুল্ল। অথচ, ভারতীয় ফুটবলের এমন দুঃসময়ে তিনিই ‘স্পিকটি নট’!
এমনিতে টুইটারে যথেষ্ট সক্রিয় প্রফুল্ল। কিন্তু এমন বিপর্যয়ের কয়েক ঘণ্টা পরেও রা কাড়েননি। ভোর পেরিয়ে সকাল, বেলা পেরিয়ে দুপুর পর্যন্ত ফুটবল বা ফিফার নির্বাসন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তাঁর কোনও বক্তব্য নেই। অথচ মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনটি টুইট করেছেন তিনি। তাঁর টুইটারে জ্বলজ্বল করছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার্ঘ্যের টুইট, জন্মবার্ষিকীতে আরআর পাটিলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং পারসি নববর্ষের শুভেচ্ছা।
ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসনের রিংমাস্টার কে হবেন, প্রাক্তন খেলোয়াড় না কি অন্য কেউ, এ নিয়ে মতামত আড়াআড়ি দু’ভাগ। একাংশ সওয়াল করেন প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ক্রীড়া প্রশাসনে আসা উচিত, কারণ মাঠে খেলাটা তাঁরাই খেলেন। খেলোয়াড়দের ভালমন্দ বোঝার ব্যাপারে তাঁদের ‘ফার্স্ট হ্যান্ড’ অভিজ্ঞতা। আবার অন্য অংশের দাবি, মাঠে খেললেই যে মাঠের বাইরের প্রশাসন সামলানো সহজ হবে, ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। আর তাই গোটা বিশ্বে প্রশাসন সামলাতে অভিজ্ঞদেরই রমরমা। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিকরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ সামলাতে পারেন।
প্রফুল্লের পক্ষে-বিপক্ষেও অজস্র মতামত আছে। ভারতীয় ফুটবল মহলের একটি অংশের মত, প্রফুল্লের হাতযশেই ফিফার নির্বাসনের চিঠি। আবার অন্য একটি মহল বলছে, প্রফুল্ল তো নিমিত্ত মাত্র। সামগ্রিক প্রশাসনিক গড়িমসির মাসুল গুনছেন সুনীল ছেত্রীরা। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায় যা-ই হোক, ভারতীয় ফুটবল প্রশাসনের খোলনলচের যে আমূল বদল দরকার, তা নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। কিন্তু যে দিন নির্বাসনের ধাক্কা এল, সেই দিনই প্রফুল্লের নৈঃশব্দ্য কি অতিরিক্ত বাঙ্ময় হয়ে উঠল না? প্রশ্নেরা উঁকি মারে আনাচেকানাচে।