সাক্ষাৎ: বৃহস্পতিবার একটি অনুষ্ঠানে বাংলার দুই সেরা তারকা। সৌরভ ও লিয়েন্ডার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রশ্ন: ভারতীয় টেনিসপ্রেমীদের কাছে আপনার এমনই ভাবমূর্তি যে ৪৪ বছর বয়েসেও আপনার কাছে মানুষের প্রত্যাশা আরও ২-৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফির। আপনার নিজের কী মনে হয়?
লিয়েন্ডার পেজ: দারুণ প্রশ্ন। আমারও ঠিক এ রকমই মনে হয়। ১৮টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি, ৩৫টা গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে উঠেছি। তবু আমার কাছে মানুষের প্রত্যাশা এতটাই যে আমি গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে উঠলে, এমনকী রানার্স হলেও সেটা যথেষ্ট নয়। আসলে আমি ব্যাপারটাকে অন্য ভাবে দেখি।
প্র: কী ভাবে দেখেন?
লিয়েন্ডার: আমি কলকাতায় বড় হয়েছি। ময়দানে খেলেছি। বাবাকে দেখেছি মোহনবাগানের হয়ে খেলতে, কলকাতা আমায় শিখিয়েছে যে ল়ড়াই করে যাওয়া, যুদ্ধ করার মনোভাবটা পুরস্কারের চেয়েও দামি। আমি ভাগ্যবান যে কেরিয়ারে আনেক ট্রফি জিতেছি। তবে এখনও জেতার খিদেটা একই রকম আছে। জেতার জন্য মরিয়া ভাবটা একই রকম আছে। আমি গোটা বিশ্ব হাফপ্যান্ট আর টি-শার্টে টেনিস খেলার জন্য ঘুরতে ভালবাসি। নিজেকে বলি, আমার কাজটা হল রোদে পুড়ে লড়াইটা করে যাওয়া। টেনিস আমার এতটাই কাছের।
প্র: বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকার জন্য ডেভিস কাপে কানাডার বিরুদ্ধে আসন্ন টাইয়ে আপনি ভারতীয় দলে সুযোগ পাননি। অথচ আপনার সামনে বিশ্বরেকর্ডের সুযোগ রয়েছে। আর একটা ডাবলস ম্যাচ জিতলেই ইতালির পিয়েত্রাঙ্গেলির রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন। সেই সুযোগ আসবে মনে হয়?
লিয়েন্ডার: রেকর্ডটা কিন্তু আমি স্পর্শ করেছি। পিয়েত্রাঙ্গেলির মতো আমিও ডেভিস কাপে সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড করে ফেলেছি। ডেভিস কাপের মতো অলিম্পিক্সেও কিন্তু আমার রেকর্ড আছে। সব চেয়ে বেশি অলিম্পিক্সে খেলার। আমার তো মনে হয় ডেভিস কাপে খেলার ক্ষেত্রে আমার মতো রেকর্ড বিশ্বে বিরল। ডেভিস কাপে খেলার জন্য ডাকা হলে আমার মতো খুশি কেউ হবে না। কারণ দেশের জার্সিতে খেলার চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে! কিন্তু এ রকম রেকর্ডের পরেও আমাকে যদি ডেভিস কাপের দলের বাইরে রাখা হয়, তা হলে তাই হোক। কিন্তু রেকর্ডটা পাল্টাবে কী করে। আমি এটুকু বলতে পারি দেশের জার্সিতে খেলতে আমি সব সময়ই প্রস্তুত। আমার ফিটনেসও কিন্তু একই কথা বলছে।
প্র: চলতি মরসুমে আপনাকে বিভিন্ন সঙ্গীর সঙ্গে ডাবলস আর মিক্সড ডাবলসে নামতে দেখা গিয়েছে। কখনও পূরব রাজা, আবার কখনও আদিল শামসদিন আপনার সঙ্গী ছিলেন। আগামী মরসুমে আপনার ডাবলস আর মিক্সড ডাবলস সঙ্গী কে হবেন?
লিয়েন্ডার: এখনও সবটা জানি না। কারণ কার সঙ্গে খেলতে নামব সেটা পুরোপুরি ঠিক হয়নি। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহ আমি পূরব রাজার সঙ্গে জুটি বেঁধেই খেলব।
ত্রয়ী: কলকাতার তিন গর্ব। ঝুলন, লিয়েন্ডার, সৌরভ। নিজস্ব চিত্র
প্র: পূরবের সঙ্গে আপনার সার্কিটে নামার অভিজ্ঞতা কেমন? অনেক দিন পরে পেশাদার সফরে আপনার সঙ্গী কোনও ভারতীয় খোলোয়াড়। এই ব্যাপারটা কেমন লাগছে?
লিয়েন্ডার: আমরা এখন আমাদের খেলায় নিজস্ব টেনিস স্টাইল তৈরি করার চেষ্টা করছি। কে কী বলছে আমাকে নিয়ে, বা আমাদের নিয়ে, বা আমাদের জুটি নিয়ে খুব বেশি এগিয়ে কিছু ভাবতে চাইছি না। আমি এক একটা ধাপ ধরে এগোতে চাই। তাই এখন আমার মাথায় শুধু আগামী কয়েক সপ্তাহে আমরা কতটা এগোতে চাই, কোথায় পৌঁছতে চাই, সেটাই ঘুরছে।
প্র: লিয়েন্ডার পেজকে হয়তো এই প্রশ্নটার অনেক বার মুখোমুখি হতে হয়েছে, আরও এক বার হতে হবে। ৪৪ বছর বয়সি পেজ কোথায় থামতে চান?
লিয়েন্ডার: রজার ফেডেরারকে দেখুন এ বছর। গত বছর বা তার আগের বছরও অনেকে কিন্তু ফেডেরারকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল। অনেকে তো বলেই দিয়েছিল, আরে ফেডেরার ১৮ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যামও জিততে পারবে না। এখন দেখুন, ফেডেরার এ মরসুমে দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে সংখ্যাটা ১৯-এ নিয়ে গিয়েছে।
প্র: নিজেকেও কি আপনি সে ভাবেই তৈরি করছেন?
লিয়েন্ডার: একদম তাই। শুধু রজার ফেডেরার কেন, রাফায়েল নাদালকেও দেখুন। গত বছর চোটের জন্য প্রায় অর্ধেক মরসুমই নামতে পারেনি। এ বছর দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতল। একটা নয়, দুটো। তাও কী দুরন্ত ভঙ্গিতে। গত বছর অক্টোবরে টেনিস র্যাঙ্কিংয়েও দেখুন কে শীর্ষে ছিল? অ্যান্ডি মারে। আর দু’নম্বরে নোভাক জকোভিচ। এখন দেখুন কী অবস্থা! নাদাল আর ফেডেরার এক আর দু’নম্বরে চলে এসেছে। একই ভাবে আমার নিজেরও মনে হয়, আর একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম যদি জিততে পারি তা হলেই সবাই বলে উঠবে, আরে দেখ দেখ ৪৫ বছর বয়সেও লিয়েন্ডার ট্রফি জিতছে। তাই আমি লোকে কী বলল তা নিয়ে মাথা ঘামাই না।
প্র: সামনেই দুর্গাপুজো। এ বার আপনার প্রার্থনা কী?
লিয়েন্ডার: আমি চাই দুর্গাপুজোর উৎসব যেন শুধু বাংলায় নয় গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যাক। সেটাই প্রার্থনা আমার। যে রকম ব্রাজিলের রিও কার্নিভাল। স্থানীয় মানুষ রিওতে উৎসবটা তো করে, কিন্তু বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ ফেব্রুয়ারিতে ওই সময় রিওতে গিয়ে রিও কার্নিভালকে আন্তর্জাতিক উৎসব করে তুলেছে। ঠিক সে রকমই দুর্গাপুজো শুধু বাংলা বা দেশের মানুষের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে, গোটা বিশ্বের বাঙালিরা যেন কলকাতায় এসে দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক উৎসব করে তোলে।