সিসিএফসি-তে খুদে ফুটবলারদের সঙ্গে ডোয়াইট ইয়র্ক। বুধবার।ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ক্রিকেটের ডোয়াইট ইয়র্ক
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ দাপালেও ত্রিনিদাদের গলির ছোট্ট ইয়র্ক এক সময় ক্রিকেট খেলতেন। আসলে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মতো দ্বীপে এ ভাবেই খেলা চলে। গরমে ফুটবল, শীতে ক্রিকেট। ইয়র্কও তাই ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও চুটিয়ে খেলেছেন। ছয় বছর বয়সেই ইয়র্কের বন্ধুত্ব হয় একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের সঙ্গে। যাঁর নাকি এতটাই খুনে ফুটবল প্রতিভা ছিল যে অনূর্ধ্ব ১৪ ত্রিনিদাদের জাতীয় দলের ট্রায়ালে প্রায় দলে ঢুকে পড়েছিলেন। যে উঠতি তারকাকে সবাই চেনে ব্রায়ান চার্লস লারা বলে। ইয়র্ক বলছিলেন, ‘‘ছ’বছর থেকে আমি আর লারা দারুণ বন্ধু। আমরা দু’জনে চুটিয়ে ফুটবল-ক্রিকেট দুটোই খেলতাম। ভাববেন না লারা খারাপ ফুটবলার ছিল। ত্রিনিদাদ ও টোবাগো দলেও প্রায় ঢুকে যাচ্ছিল।’’
বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের ফুটবল মাঠে পছন্দের পজিশন ছিল মাঝমাঠ। কারণ গোল করার থেকেও গোল করানোর নেশা বেশি ছিল লারার মধ্যে। সেই সব দিনে ফিরে গিয়ে হাসতে হাসতে ইয়র্ক বলছিলেন, ‘‘লারাকে কেউ মাঝমাঠ থেকে সরাতে পারত না। আসলে ও পাস দিতে খুব ভালবাসত।’’ বারো বছর বয়সে দুই বন্ধু তার পর আলাদা রাস্তায় চলে যান। ‘‘লারা আমাকে বলল, আমি ক্রিকেট……ই খেলব। আমি বললাম তুই যা ক্রিকেটে, আমি ফুটবলটা নিয়ে পড়ে থাকি।’’
ব্রায়ান লারার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ তিনি। মাঠের বাইরের লারাকেও তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। যাঁর পার্টি জীবন বাইশ গজ জীবনের চেয়ে কম রঙিন ছিল না। প্রসঙ্গ উঠতেই থামিয়ে দিয়ে লারার বন্ধু বলছেন, ‘‘মাঠ এবং মাঠের বাইরের লারা কিন্তু সম্পূর্ণ দুটো আলাদা ব্যক্তিত্ব। লারা যত পার্টি করুক, যত আনন্দ করুক, ক্রিকেটটা নিয়ে সব সময় কিন্তু সিরিয়াস থাকত। মাঠ এবং মাঠের বাইরের লারাকে এক করে ফেললে চলবে না। না হলে কেউ একটা খেলায় এ রকম সফল হতে পারে না। আমি জানি ও কতটা পরিশ্রম করত।’’
প্রাক্তন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ডকে ভারতের আইএসএল নিয়ে প্রশ্ন করলে জবাব পাওয়া যায় না। কিন্তু আইপিএল শুনলেই গড়গড় করে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমি নিয়মিত আইপিএল দেখি। ক্রিকেট আমার অন্যতম প্যাশন।’’ একই সঙ্গে জানাচ্ছেন, তিনিও এখন কোহালি ফ্যান ক্লাবের অন্যতম সদস্য। যদিও আগে ছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভক্ত। ‘‘কোহালি এই মুহূর্তে সেরা ক্রিকেটার। কী অসাধারণ টেকনিক। ধোনিরও খেলার ভক্ত আমি। তবে এখন আমার এক নম্বর ক্রিকেটারের নাম বিরাট কোহালি।’’
ফুটবলের ডোয়াইট ইয়র্ক
১৯৯৮-তে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে সই পর থেকে তিনি একটু ভয় ভয় থাকতেন। টিমে তখন পল স্কোলস, রয় কিন, ইয়াপ স্ট্যাম, পিটার স্কিমিচেলের মতো ফুটবলার ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই অ্যাস্টন ভিলা থেকে আসা ইয়র্ক তখন ড্রেসিংরুমের নতুন সদস্য। কিন্তু তার পরই সেই কিংবদন্তি কোচের ভোকাল টনিক। আর ভয় বদলে যায় আত্মবিশ্বাসে। ‘‘স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো ম্যান ম্যানেজার বিশ্বে আর নেই। আমাকে বলেছিলেন, দেখো তোমায় আমি নিয়েছি মানে আমি মনে করি তুমি এই দলকে অনেক কিছু দিতে পারবে। তুমি একশো কুড়ি লক্ষ মানুষের হাসি-কান্নার কারণ হতে পারো। এ বার তোমার উপর নির্ভর করছে তাদের তুমি হাসাতে চাও না কাঁদাতে।’’ ইয়র্কের প্রথম মরসুমই তারপর হয়ে যায় ক্লাবের ইতিহাসে সেরা— প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-সহ ঐতিহাসিক ত্রিমুকুট।
ম্যাঞ্চেস্টারের সোনার মরসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন ইয়র্কই। ‘‘ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে প্রথম মরসুমে ত্রিমুকুট জেতার থেকে বেশি আর কী চাইব। বায়ার্নের বিরুদ্ধে সেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আমরা সব সময় নিজেদের বলেছিলাম, কিছুতেই হারব না। ইতিহাস গড়বই। ২-১ জেতার পর সারা রাত পার্টি করেছিলাম,’’ বললেন ইয়র্ক। পার্টিটা কি খুব উদ্দাম হয়েছিল? হেসে ইয়র্ক বলছেন, ‘‘সে দিন রাতে আমরা কী করেছিলাম, এখন আর আপনাকে বলা যাবে না।’’
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলবেন। পনেরো ঘণ্টা করে দিনে সময় দিতেন ফুটবলকে। ২০০৬ বিশ্বকাপে এসে ইয়র্কের সেই আশা পূর্ণ হয়। ‘‘কলকাতার থেকেও কম জনসংখ্যা ত্রিনিদাদে। সেই দেশের জাতীয় সঙ্গীত যখন বিশ্বকাপে বাজছে তখন গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছিল।’’ স্পনসরদের এক অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলেন ইয়র্ক। বুধবারই ভারত ছাড়লেন। তার আগে ছোটদের সঙ্গে ফুটবল ক্লিনিকে অংশ নিলেন। মোহনবাগানের ড্যারিল ডাফির বিরুদ্ধে ম্যাচেও খেললেন। ইউনাইটেড ক্লাব অ্যাম্বাস্যাডর অবশ্য এর মাঝেও বলতে ভুললেন না, ‘‘মোরিনহোর ওপর ভরসা করাই যায়। দলকে ঠিক সামলে নেবে। এই মরসুমে প্রিমিয়ার লিগ আমরাই জিতব।’’