ইপিএলে হিচককের ছবি, ওয়েঙ্গার যেন রবিন হুড

পপকর্ন, কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে তৈরি তো? মরসুমের সেরা ব্লকবাস্টারের ক্লাইম্যাক্স এসে পড়েছে। ব্লকবাস্টার ছবির নাম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। দুই প্রধান চরিত্রে লেস্টার সিটি আর টটেনহ্যাম।

Advertisement

সোহম দে

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:৩০
Share:

ইপিএল জমিয়ে দিয়েছে হ্যারি কেনের টটেনহ্যাম।

পপকর্ন, কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে তৈরি তো? মরসুমের সেরা ব্লকবাস্টারের ক্লাইম্যাক্স এসে পড়েছে। ব্লকবাস্টার ছবির নাম ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। দুই প্রধান চরিত্রে লেস্টার সিটি আর টটেনহ্যাম। শেষ পর্যন্ত কী হবে! ফরেস্ট গাম্প কি রূপকথার দৌড় শেষ করতে পারবে? নাকি উত্তর লন্ডনের টটেনহ্যাম রূপকথার ক্লাইম্যাক্সকে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স করে দিয়ে যাবে!

Advertisement

লা লিগাতে যতই মেসি, রোনাল্ডো, নেইমার, বেল, সুয়ারেজ, তোরেসরা থাকুন, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ইপিএলের ধারেকাছে কোনও ফুটবল লিগ নেই বিশ্বে। হংকং হোক বা সিঙ্গাপুর। কলকাতা হোক বা কুয়ালা লামপুর, এখন শনি-রবি রাত মানেই তো টিভির সামনে বসে পড়া। আর উপভোগ করা ব্র্যান্ড ইপিএল। চলতি মরসুমের দিকে তাকালেও অধিকাংশ বছরের মতো সেই একই ছবি। শেষ চার ম্যাচের আগেও কেউ জানে না চ্যাম্পিয়ন কোন দল হবে? গত রবিবার রাতে ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে লেস্টার সিটি ২-২ ড্র করেছে। টটেনহ্যাম আবার ৪-০ হারিয়েছে স্টোক সিটিকে। আর তাতেই ইপিএল এই মুহূর্তে অ্যালফ্রে়ড হিচককের থ্রিলারের মতো। শেষ পর্যন্ত কী ‘টুইস্ট’ অপেক্ষা করছে কেউ জানে না। লিগ টেবলে ফার্স্ট আর সেকেন্ড বয়ের মধ্যে এখন পাঁচ পয়েন্টের পার্থক্য।

ইপিএল ইতিহাস ঘাঁটলে সাম্প্রতিককালে অনেক মরসুম আছে যখন শেষ দিন অবধি লিগ দখলের লড়াই ছিল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি তার প্রথম ইপিএল খে‌তাব জিতেছিল গোলপার্থক্যে। কেন না শেষ দিনেও ম্যান সিটি আর ম্যান ইউনাইটেডের পয়েন্ট ছিল সমান। ২০০৭-০৮ মরসুমে চেলসি আর ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের খেতাবি লড়াই গড়িয়েছিল শেষ দিন পর্যন্ত। এ বারও সে দিকেই এগোচ্ছে ইপিএল। যখন হয়তো শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার জন্য।

Advertisement

শীর্ষে থাকা লেস্টারের বাকি ম্যাচগুলোর মধ্যে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড (ম্যান ইউ) আর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের (চেলসি) মতো কঠিন ভেনু অপেক্ষা করছে। শেষ চার ম্যাচে অন্তত আট পয়েন্ট মতো লাগবে। টটেনহ্যামের সামনে আবার ওয়েস্ট ব্রম, নিউক্যাসলের মতো দুর্বল দল। কিন্তু তারা বাকি চার ম্যাচ জিতলেও খেতাবের চাবি এখনও লেস্টারের হাতে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাকি দলগুলো কি ঘুমোচ্ছিল? এমন কী হল যে, চেলসি, ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, আর্সেনাল, ম্যাঞ্চেস্টার সিটি, লিভারপুল এ ভাবে আত্মসমর্পণ করে বসল!

এই সপ্তাহের স্কোরলাইনগুলো কিছুটা হলেও তার উত্তর দিচ্ছে। অ্যাস্টন ভিলার মতো জঘন্য দলের বিরুদ্ধেও মাত্র ১-০ জিতেছে ইউনাইটেড। এতেই বোঝা যায় হেভিওয়েট টিমেও গোল করার লোক নেই। চেলসি আবার ০-৩ হেরেছে ম্যান সিটির কাছে। চেলসির এখন শেষ পাঁচ ম্যাচে ‘ওয়াকওভার’ দেওয়ার দশা! দলের যা কন্ডিশন তাতে লেস্টার, টটেনহ্যামের বিরুদ্ধেও না লজ্জার হারের সামনে পড়তে হয়। আর ম্যান সিটি? চেলসিকে হারানোর তিন দিনের মধ্যে অবনমন-আশঙ্কায় থাকা নিউক্যাসলের সঙ্গে ড্র! ধারাবাহিকতা কোথায়? আর্সেনাল? এ বছর নাকি গানার্সের সেরা সুযোগ ছিল। কিন্তু বড়দিনের পর থেকে ফের আর্সেনাল সেই পুরনো আর্সেনাল। আর্সেন ওয়েঙ্গার ইপিএলের রবিন হুড! ধনী ক্লাবদের হারায় ওয়েঙ্গারের দল। যে ক্লাবগুলো আর্থিক ভাবে দুর্বল তাদের বিরুদ্ধে নিজে হারে।

ইপিএলের মতো না হলেও লা লিগাও কিন্তু জমে উঠেছে। এমএসএন-কে কিছু সপ্তাহ আগেও দেখাচ্ছিল, ইউরোপিয়ান ত্রিমুকুট নিয়েই চলে যাবেন! সেখান থেকে এখন হয়তো তাঁদের বার্সাকে খালি হাতেও শেষ করতে হতে পারে মরসুম। ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ১-২ হেরে বাকি দুই মাদ্রিদকে রক্তের গন্ধ পাইয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। যাদের প্রথম একাদশ ফেরারি হলেও রিজার্ভ বেঞ্চ ছ্যাকড়া গাড়ি। তার উপরে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে আসল সময় ফর্ম হারিয়েছেন মেসি-সুয়ারেজরা। আর লুইস এনরিকে সেই ডুবন্ত জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে ‘প্ল্যান বি’ খুঁজে পাচ্ছেন না। ন্যু কাম্পও আস্তে আস্তে বের্নাবাও হয়ে উঠেছে। নিজেদের মহাতারকাদের কটাক্ষ করে বসছেন বার্সা সমর্থকরাও।

ম্যান অব দ্য উইক অবশ্য সেই কোচ যিনি রিয়ালের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ক্লাবের গোটা মরসুমের ছবি পাল্টে দিয়েছেন। লা লিগা থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।

দ্য নেম ইজ জিদান। জিনেদিন জিদান।

ম্যান অব দ্য উইক:জিনেদিন জিদান

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement