মুখোমুখি: রবিবারের আকর্ষণ ইব্রা ও কোস্তার লড়াইও। ফাইল চিত্র
রবিবার তাঁরা ফের মুখোমুখি। চেলসির আন্তোনিও কন্তে এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জোসে মোরিনহো। বিশ্ব ফুটবলের দুই চাণক্য, যাঁরা একে অন্যকে খুব পছন্দ করেন বলে খবর নেই। দ্বৈরথ এ বার মোরিনহোর ‘হোম’ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে।
মুখোমুখি ওঁরা দু’জনও। দু’দলের দুই আগ্রাসী, বদ মেজাজী স্ট্রাইকার। চেলসির দিয়েগো কোস্তা এবং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ। দুই সেরার দ্বৈরথে কে জিতবেন? এক জনের দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। অন্য জনের দল প্রথম চার জনের মধ্যে থাকার জন্য লড়াই করছে। কোনটা কার দল, বলে দেওয়ার দরকার নেই।
মোরিনহোর কাছে এই ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ প্রথম চারের মধ্যে শেষ করার জন্য। কন্তেকে জিততে হবে ইপিএল খেতাব নিশ্চিত করে তোলার জন্য। সাম্প্রতিক ফর্মে পিছিয়ে ম্যান ইউ। তারা শেষ ছ’টি ম্যাচের মধ্যে পাঁচটিতে ড্র করেছে। শেষ ম্যাচে ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে খুব এলোমেলো ফুটবল খেলে ড্র করেছে অ্যান্ডারলেখ্টের সঙ্গে। মোরিনহোর আর একটা প্রধান সমস্যা, ফুটবলারদের ক্লান্তি।
মোরিনহো দাবি করেছেন, ‘‘এটা আর একটা ম্যাচ।’’ কিন্তু তাঁর সেই বক্তব্যকে সঠিক বলে মেনে নেওয়ার কোনও কারণ নেই। চেলসিকে ট্রফি জেতানো তিনি গত বার মাঝপথে কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ চেলসি মানেই বাড়তি তাগিদ নিয়ে তিনি ঝাঁপাতে চাইবেন। প্রমাণ করতে চাইবেন, চেলসি হারে, তিনি হারেন না।
আরও পড়ুন: বারপুজোর সেই জৌলুস কোথায়
এর মধ্যেই দু’বার মোরিনহো বনাম চেলসি যদিও হয়ে গিয়েছে এবং দু’বারই তিনি হেরেছেন। অক্টোবরে চেলসির কাছে তাঁর ম্যান ইউ হারে ০-৪ গোলে। তার পর ফেব্রুয়ারিতে এফ এ কাপে হারেন ০-১। সেই ম্যাচেই বিশ্বাসঘাতক ‘জুডাস’ বলে মোরিনহোকে বিদ্রুপ করেছিলেন সেই সব চেলসি সমর্থকেরা, যাঁরা এক দিন তাঁর নামেই জয়ধ্বনি দিতেন। মোরিনহো পাল্টা অঙ্গভঙ্গি করে তিনটি আঙুল দেখান। চেলসি ম্যানেজার হিসেবে জেতা তিনটি ট্রফিকে ইঙ্গিত করতেই তিনটি আঙুল দেখানো। তার পর বলেওছিলেন, ‘‘যে দিন ওরা চারটে ট্রফি দেওয়ার মতো কাউকে পেয়ে যাবে, আমি দু’নম্বর হয়ে যাব। তত দিন এই জুডাসই এক নম্বর।’’
মোরিনহো ম্যানেজার থাকাকালীন ফর্ম হারিয়ে ফেলা কয়েক জন দুর্দান্ত ফর্মে খেলছেন কন্তের অধীনে। যেমন এডেন অ্যাজার। গত বার মোরিনহোর চেলসিতে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। এ বার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ম্যাচে অ্যাজার আসছেন একটি লিগ মরসুমে ১৫টি গোলের মাইলস্টোনের লক্ষ্য নিয়ে। এ সব টুকরো-টাকরা স্ফুলিঙ্গও থাকবে মোরিনহোকে তাতানোর জন্য।
কন্তে যদিও মোরিনহোর বিরুদ্ধে বাড়তি আগ্রাসনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। চেলসি ম্যানেজার বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে মোরিনহোর জিরো প্রব্লেম (কোনও সমস্যাই নেই)। খেলার মাঠে দু’জনের দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ঠিকই। আমি আমার দল নিয়ে জেতার চেষ্টা করি। ও ওর দল নিয়ে জেতার চেষ্টা করে। মাঠে কেউ কাউকে ছাড়ে না। সেটা তো ঠিকই আছে।’’
চেলসি যে ভাবে মাঝে ঝড় তুলেছিল, সেটা এখন অনেক শান্ত। অতটা অপ্রতিরোধ্য আর তাদের দেখাচ্ছে না। কিন্তু ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দুর্ধর্ষ রেকর্ড তাদের। দু’দলের মধ্যে গত ১২টি ম্যাচে অপরাজিত চেলসি। ২০১২ সালের অক্টোবরে শেষ বার তারা হেরেছিল ম্যান ইউয়ের কাছে। রেড ডেভিল্সের ম্যানেজার তখন ছিলেন কোনও এক আলেক্স ফার্গুসন।
দু’দলের মধ্যে চেলসি বেশি ফিট ফুটবলারও পাচ্ছে। কন্তের হাতে পুরো দলই রয়েছে। পায়ের পাতার চোট সারিয়ে ভিক্টর মোজেসও গত ম্যাচে ফিরে এসেছেন। বোর্নমুথের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ চেলসি জেতে ৩-১ গোলে। মোরিনহোর সে রকম কোনও বিলাসিতা নেই। খুয়ান মাতা বাকি মরসুমের জন্যই ছিটকে গিয়েছেন কুঁচিকতে মারাত্মক চোট পেয়ে। ফিল জোন্স এবং ক্রিস স্মলিংও বাইরে। একমাত্র খুশির খবর হচ্ছে, দাভিদ দ্য গিয়া গোলকিপার হিসেবে ফিরছেন।
এই অবস্থায় প্রথম চারের মধ্যে শেষ করতে গেলে অন্তত আরও চার পয়েন্ট পেতেই হবে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে। ইউরোপা লিগ জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যোগ্যতামান অর্জন করতে পারে ম্যান ইউ। কিন্তু মোরিনহো এখনও জোর দিচ্ছেন, ইপিএলে প্রথম চার দলের মধ্যে শেষ করার ওপর।
‘‘যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে, আমরা প্রিমিয়ার লিগে প্রথম চারের মধ্যে থাকতে পারছি না, তখন ইউরোপা লিগের জন্য ঝাঁপাতে হবে। তবে আমি আশা করব যেন সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়,’’ বলেছেন মোরিনহো। বোঝাই যাচ্ছে, রবিবার ঘরের মাঠে তিনি পুরনো ক্লাব চেলসিকে বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনীও ছাড়বেন না। টটেনহ্যাম চার গোলে জেতার পর কন্তেকেও জিততেই হবে।
ব্লকবাস্টার দ্বৈরথের মঞ্চ প্রস্তুত!