ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায়। অস্ট্রেলিয়ার নেটে স্মিথ। ছবি: গেটি ইমেজেস।
দু’হাজার পনেরো বিশ্বকাপে তাৎপর্যের দিক দিয়ে অন্যতম অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ায় টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হওয়াটা। শনিবার তার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আগে নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ শুরু হয়ে গেলেও এমসিজি-তে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের তাৎপর্য আলাদা। টেস্ট ক্রিকেটের মতোই ৪৪ বছর আগে ১৯৭১-এ প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ম্যাচেরও আয়োজক ছিল মেলবোর্ন।
তা সত্ত্বেও গড়পরতা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট-উৎসাহী দেড় মাস ব্যাপী এ বারের বিশ্বকাপের মেলবোর্ন-ফাইনাল নিয়েই যেন এখন থেকে অনেক বেশি আগ্রহী। ঐতিহাসিক সেই ক্রিকেট-মাঠেই বিশ্বক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর শনিবারের লড়াইয়ের তুলনায়। বেশির ভাগ অস্ট্রেলীয়ের বিশ্বাস, ২৯ মার্চের ফাইনালে তো অস্ট্রেলিয়াকে এ মাঠে আবার দেখা যাবেই!
ওয়াকিবহাল মহল যে জন্য মনে করছে, এমসিজি-তে চিরকালীন অ্যাসেজ বক্সিং ডে টেস্টের মতো দর্শক সমাগম শনিবার দু’দেশের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ম্যাচে ঘটা যথেষ্ট কঠিন। অ্যাসেজ বক্সিং ডে টেস্টে বিশালাকায় এমসিজির গ্যালারি পরিপূর্ণ থাকে। তবে তার কাছাকাছি না হোক, বেশ একটা বড়সড় দর্শক-ভিড় শনিবারের এমসিজিতেও থাকবে। আর ঘরের দলের জন্য অস্ট্রেলীয় দর্শকদের চিলচিৎকারে ইয়ন মর্গ্যানের ইংল্যান্ড সম্ভবত ঠিক ততটাই চাপে পড়বে, যতটা চাপে বাইশ গজে তাদের ফেলবে অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলিং।
অস্ট্রেলিয়া ফেভারিট হিসেবে টুর্নামেন্টটা শুরু করছে। অন্য দিকে, প্রথম ম্যাচের আগে ইংল্যান্ডকে চিন্তায় রাখছে বেশ কয়েকটা কারণ।
সবচেয়ে বড় কারণটা মিচেল জনসন।
গত কয়েক বছর যাবত জনসন-জুজু ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের উপর চেপে রয়েছে। হয়তো কেউ ভোলেনি জনসনের হাতে দু’বছর আগে এ দেশে অ্যাসেজ সফরে আসা ইংল্যান্ডের হেনস্থাকে। ইংল্যান্ডের এই নতুন চেহারার ওয়ান ডে দলও সেই আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পেরেছে কি না তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞের সন্দেহ আছে। যেহেতু একটা লম্বা বিশ্রামের পরে সদ্যসমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজ ফাইনালে ফিরেই জনসন ইংল্যান্ডের টপ অর্ডারকে তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
মজাটা হল, জনসনেই রক্ষে নেই, সঙ্গে দোসর জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্করা। যাঁরা প্রত্যেকেই একশো পঞ্চাশ প্লাসে বলটা করেন। ডারেন লেম্যানের বরং সমস্যা, প্রতিপক্ষের ঘাড়ের উপর কাকে ছেড়ে কাকে লেলিয়ে দেবেন। যে মূলধন এ বারের বিশ্বকাপে বাকি তেরো দলের সম্ভবত কারও নেই। এই একটা ব্যাপারই চার বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে এ বার ঘরের মাঠে এক নম্বর ফেভারিট করে তুলেছে।
এমনকী অস্ট্রেলিয়ার শনিবারের প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির, বিশেষ করে বিপক্ষ বোলাররা জানেন, মেলবোর্নে কাল তাঁদের টিমমেটদের ব্যাটের দিকে কী গোলাগুলি ছুটে আসতে পারে! ইংল্যান্ডের এক নম্বর পেসার জেমস অ্যান্ডারসন যেমন স্বীকার করে নিলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে জনসন শুধু কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেটাই তো সব নয়। ওদের হাতে একটা দুর্ধর্ষ পেস বোলিং প্যাকেজ আছে। এমন নয় যে, কেবল জনসনকে নিয়ে ভাবলেই আমাদের ব্যাটসম্যানদের চলে যাবে।”
পাশাপাশি অ্যান্ডারসন মনে করছেন, তাঁর দলের ব্যাটসম্যানদের যেমন দরকার জনসন অ্যান্ড কোং-কে নিয়ে সঠিক হোমওয়ার্কের, তেমনি তাঁরা পাল্টা চিন্তাভাবনা শুরু করুন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের পেড়ে ফেলা নিয়ে। নিজে বলছেন, “আমি তো ওয়ার্নার আর স্মিথকে নিয়ে আলাদা করে হোমওয়ার্ক করে চলেছি। এই মুহূর্তে ওরা দু’জনই জীবনের সেরা ব্যাটিং ফর্মে আছে। বিশেষ করে ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে আগে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি, ওকে বেশি শর্ট বল দিয়ে বাড়তি তাতিয়ে তোলার দরকার নেই। আমাদের উচিত, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলা। সেটা অবশ্যই আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে। উইকেট তোলার চেষ্টা করাটাই বোধহয় এ রকম একটা বিগ ম্যাচে সবচেয়ে সঠিক স্ট্র্যাটেজি।”
আইসিসি এ বারের বিশ্বকাপে মাঠের মধ্যে প্লেয়ারদের স্লেজিংয়ের দিকে বিশেষ নজর রাখবে, কিন্তু মাঠের বাইরে সমর্থকদের স্লেজিং কে সামলাবে? মেলবোর্নের রাস্তায় বিশ্বকাপ দেখতে আসা ইংরেজ সমর্থকদের দেখলেই অস্ট্রেলীয়দের টিটকিরি দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে, ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই। এই ম্যাচে স্বয়ং তাঁদের জাতীয় অধিনায়ক যে সমস্যা জর্জরিত সেটা পাত্তাই পাচ্ছে না অস্ট্রেলীয়দের কাছে। মাইকেল ক্লার্কের অনুপস্থিতিতে ফর্মহীন জর্জ বেইলি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে ক্লার্ক ফিরলে বেইলির ক্যাপ্টেন্সি যাবে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু শনিবারও তাঁর ব্যাটে রান-খরা চললে এই টুর্নামেন্টে বেইলিকে হয়তো আর দেখাই যাবে না।
ফেভারিটদের কিন্তু হাতের কাছে সব সময় অনেক বিকল্প থাকে!