ভারত আবার বিদেশে একটা টেস্ট সিরিজ হারল। আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা ইনিংস হার গিলতে হল মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের। বিদেশে আমাদের ট্র্যাক রেকর্ডটা চরমতম লজ্জার দিকে এগিয়ে গেল। পরপর দুটো ম্যাচে প্রমাণ হয়ে গেল, বিদেশে আমরা টেস্টে নামলে সেটা পাঁচ দিনের নয়, আড়াই দিনের হয়। প্রমাণ হয়ে গেল সচিন-দ্রাবিড়-সৌরভদের উত্তরসূরি দূরে থাক, ধোনির তরুণরা এখনও ওদের নখের যোগ্য হয়ে উঠতে পারেনি। আমরা একটা অতি মাঝারি মানের বিদেশি টিমকেও আর তাদের দেশে গিয়ে হারাতে পারি না। প্রমাণ হয়ে গেল, লর্ডস টেস্টটা স্রেফ ফ্লুক ছিল। কপালে ছিল, জিতে গিয়েছে। বরং সাউদাম্পটন, ম্যাঞ্চেস্টার, ওভালের ভারতই আসল ভারত। যাদের জেতাটাই খবর হওয়ার মতো।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই টিমটার কী হবে? এরা পারবে ভবিষ্যতে কোনও দিন বিদেশ সফরে গিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে? টিমটার যথেষ্ট প্রতিভা আছে কি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের রগড়ানি সহ্য করার? ফল কী হবে আমি জানি না, কিন্তু কয়েকটা বদল যদি দ্রুত না আনা হয়, আরও জঘন্য সব রেজাল্ট কিন্তু এই টিমের জন্য অপেক্ষা করে আছে।
ধোনি হঠাও, টেস্ট বাঁচাও: এত জঘন্য টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি আজ পর্যন্ত কাউকে করতে দেখিনি। এত ডিফেন্সিভ ক্যাপ্টেন্সিও দেখলে বিশ্বাস হয় না। উপমহাদেশের বাইরে ধোনি আজ পর্যন্ত টেস্ট জিতেছে চারটে। জিতবে কী করে? ও তো একটা বাউন্ডারি খেলে ফিল্ডারদের ডিপে পাঠিয়ে দেয়। এতই সাধারণ ক্যাপ্টেন যে, সতীর্থদের ন্যূনতম মোটিভেটও করতে পারে না। পার্টনারশিপ হতে দেখে, কিন্তু সেটা ভাঙতে চেষ্টা করে না। জানে না টেস্ট ক্রিকেটটা কুড়ি উইকেট তোলার খেলা। পালিয়ে ওখানে বাঁচা যায় না। টেস্টের ধোনি ম্যাচ সিচুয়েশন হারে। ওকে এখনই না সরালে এ রকমই চলবে। সমস্যা হল, ধোনির পরিবর্ত হিসেবে বিরাট কোহলির নামটা আর ভাবা যাচ্ছে না। কিন্তু দ্রুত ধোনির জায়গায় বিকল্প টেস্ট অধিনায়ক বার করতে হবে।
বিদেশের হোমওয়ার্ক: নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট-সূচি এত গায়ে-গায়ে যে কাউন্টি খেলার সময়টাই এখন ধোনিদের নেই। মাঝে আবার আইপিএল ঢুকে পড়েছে। কাউন্টি খেললেই যে বিরাট পরিবর্তন হত, বলছি না। কিন্তু আড়াই দিনে টেস্ট শেষ হত বলে মনে হয় না। সুইং খেলার বেসিক পড়াশোনাটা হয়ে থাকত।
বিনা নোটিশে ফ্লেচার বিদায়: ওঁকে অনেক সময় দেওয়া হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে ফ্লেচার যত দিন থাকবেন, টিমে ওঁর প্রভাব তত খারাপ হবে। ভগবান জানেন ওঁর কী টেকনিক্যাল জ্ঞান। একটা ক্রিকেটারের ভুলত্রুটিও তো শোধরাতে পারেন না। বোর্ডের দেখি তবু ফ্লেচারকে নিয়ে মায়ার শেষ নেই। আমার মতে বিদেশি কোচের দিকে যাওয়াই আর উচিত নয়। তোমার হাতে কি ভাল ভারতীয় কম আছে? একটা সৌরভ বা একটা দ্রাবিড় কি ফ্লেচারের চেয়ে আধুনিক ক্রিকেটটা কম বোঝে? সৌরভ বা দ্রাবিড় কাউকে এখনই ভারতীয় টিমের কোচ করা উচিত।
বিপর্যয়ের তদন্ত: হলে খুব ভাল। কিন্তু হবে না। আর্গাস কমিশন অস্ট্রেলিয়াতেই সম্ভব। ভারতে ও সব চলে না। কয়েকটা দিন ধৈর্য ধরুন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসুক। তিন দিনে এ বার ধোনিরা টেস্ট শেষ করে দেখবেন কী লম্ফঝম্প করছে। কিন্তু তার পর আবার যখন অস্ট্রেলিয়া যাবে, দেখবেন ক্লার্করা তিন দিনে টেস্ট শেষ করছে। ভারতীয় বোর্ড যদি ক্রিকেটারদের প্রতি কড়া না হয়, প্রশ্রয় যদি দিয়েই যেতে থাকে, এটাই হবে।
রিজার্ভ বেঞ্চ: ভেবে লাভ নেই। যারা প্রথম একাদশে খেলছে আর যারা রিজার্ভে আছে, ফারাক উনিশ-বিশ। রোহিত শর্মা তো খেলল। কী করেছে? পঙ্কজ সিংহ তো খেলল। কোনও প্রভাব দেখলেন? খেলল না শুধু ঈশ্বর পাণ্ডে। খেললেও বা হাতি-ঘোড়া কী হত? অনেকে বলবেন আমাদের মনোজ তিওয়ারি কী দোষ করল? ওকে তো নিতে পারত। কিন্তু নেবে কার জায়গায়? কোহলিকে কে বাদ দেবে? পূজারা ছাড়াও টেস্টে নামা যাবে? এরা যতই খারাপ খেলুক, দ্বিতীয় লটটাকে দেখবেন বসেই থাকতে হচ্ছে। কারণ এই থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোড়টাই হচ্ছে এখনকার ভারতীয় ক্রিকেট!
ভারত প্রথম ইনিংস ১৪৮
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৮৫-৭)
রুট ন.আ. ১৪৯
জর্ডান ক ধোনি বো ইশান্ত ২০
ব্রড ক কোহলি বো ইশান্ত ৩৭
অ্যান্ডারসন এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১
অতিরিক্ত ৩৩
মোট ৪৮৬।
পতন: ৬৬, ১৯১, ২০১, ২০৪, ২২৯, ৩০৯, ৩১৮, ৪০০, ৪৬৩।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ২৪-৩-৮৬-১, ইশান্ত ৩০-৮-৯৬-৪, অ্যারন ২৯-১-১৫৩-২, বিনি ১২-০-৫৮-০, অশ্বিন ২১.৩-২-৭২-৩।
ভারত দ্বিতীয় ইনিংস
বিজয় এলবিডব্লিউ অ্যান্ডারসন ২
গম্ভীর রান আউট ৩
পূজারা ক বাটলার বো অ্যান্ডারসন ১১
কোহলি ক কুক বো জর্ডান ২০
রাহানে ক ব্যালান্স বো ব্রড ৪
ধোনি ক রবসন বো ওকস ০
বিনি ন.আ. ২৫
অশ্বিন ক বেল বো জর্ডান ৭
ভুবনেশ্বর ক বেল বো জর্ডান ৪
অ্যারন রান আউট ১
ইশান্ত ক মইন বো জর্ডান ২
অতিরিক্ত ১৫
মোট ৯৪।
পতন: ৬, ৯, ৩০, ৪৫, ৪৬, ৬২, ৭০, ৭৪, ৮৪।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ৮-৩-১৬-২, ব্রড ১০-২-২২-১, ওকস ৭-০-২৪-১, জর্ডান ৪.২-০-১৮-৪।