নজরে: চলছে ইডেন পিচের কাজ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
পেস বোলারের হাত থেকে গোলার মতো বেরনো বল সাঁই সাঁই করে ছুটছে।
ব্যাটসম্যানরা নাজেহাল।
স্পিনাররা নীরব দর্শক। তাঁদের তেমন কোনও কাজ নেই।
ইডেনের ম্যাচে এখন এমন দৃশ্য ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এমনও দেখা যাবে যে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা ইডেনের বাইশ গজ দেখে বলছেন, এ যেন তাদের ঘরের মাঠের উইকেট। এখনই অনেকে দেশের সবচেয়ে গতিময় আন্তর্জাতিক ম্যাচের উইকেট দেখতে পাচ্ছেন ইডেনে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গতি ও বাউন্সে ভরা উইকেট এমনই আদুরে যে, তার যত্নের একটু এ দিক থেকে ওদিক হলেই সে বেঁকে বসে। ব্যাটসম্যানদের বিপদ ডেকে আনতে পারে। যেমন হল বুধবার, বিজয় হাজারে ট্রফির ঝাড়খন্ড বনাম সৌরাষ্ট্র ম্যাচে। পিচে জলের ভাগ একটু এদিক থেকে ওদিক হয়েছে কী, ইডেন-পিচ ব্যাটসম্যানদের কাছে ত্রাস হয়ে ওঠে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাঠে এমন উইকেট দেখে শুধু অবাকই নন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ক্ষুব্ধও। আগেও তিনি ভারতের ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলতে এসে ইডেনের উইকেটকে ‘কদর্য’ বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার যে উইকেট দেখলেন, তা শুধু কদর্য-ই নন বিপজ্জনকও বটে।
গত জনুয়ারিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচের পর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালিকেও উইকেট সম্পর্কে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘বেশ চ্যালেঞ্জিং’’।
বুধবার ইডেনের চিফ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, প্রয়োজনাতিরিক্ত জল থেকে যাওয়ায় পিচে স্যাঁতসেঁতে ভাব বেশি ছিল। তাই এমন হয়েছে। বল হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে।
কিন্তু অসমান বাউন্স তো ইডেনের উইকেটে ইদানীং নতুন কিছু নয়। প্রায়ই এ রকম দেখা যাচ্ছে। কেন এই অবস্থা?
বৃহস্পতিবার খোঁজখবর করে ইডেন পিচের এই চরিত্র বদল নিয়ে যে সব কারণ উঠে এল, সেগুলো পরপর সাজালে এ রকম দাঁড়ায়।
ইডেনের পিচের চরিত্র বদল মূলত তার ঘাস ও মাটি বদলানোর জন্য। সাধারণ প্রাকৃতিক ঘাস বদলে এখন বার্মুডা ঘাস ব্যবহার হয় ইডেন-পিচে, যা সাধারণ ঘাসের চেয়ে বেশ দ্রুত বাড়ে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, মাটির সঙ্গে এই ঘাস ও জলের অনুপাত যদি ধারাবাহিক ভাবে ঠিক না থাকে, তা হলেই পিচ অদ্ভুত আচরণ করতে শুরু করে দেয়। ম্যাচ চলাকালীন এই তিন উপাদানের অনুপাত নিখুঁত না হলে পিচে অসমান বা নিয়মিত বাউন্স দেখা যেতেই পারে।
আন্তর্জাতিক ম্যাচের উইকেট তৈরি করা এক কিউরেটর জানালেন, ‘‘এই অনুপাত ঠিক রাখতে হলে পিচের সঠিক তদারকির প্রয়োজন। অনুপাতটা ঠিকমতো জানাও দরকার। পিচ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল বিদ্যা না থাকলে সবসময় এটা জানা থাকে না। কারণ, বাতাসে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই অনুপাতটাও পাল্টাতে থাকে।’’
প্রশ্ন উঠেছে এই জায়গাটাতেই। সিএবি-র চিফ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের কি সেই টেকনিক জানা আছে? তিনি তো বিসিসিআই-এর কিউরেটরদের যে কোর্স রয়েছে, তা তো করেনইনি। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই কাজ করে চলেছেন তিনি। মাঝে মাঝে পড়াশোনা করেন ঠিকই, কিন্তু তা যথেষ্ট কি না, কেউ জানেন না। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, ইডেনে এখন যে ধরনের উপাদানে উইকেট তৈরি হয়েছে, তা দেখভালের জন্য একজন পেশাদার ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কিউরেটর প্রয়োজন।
তাই সিএবি-র অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠেছে, ক্রিকেটার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে সংস্থায় ভিভিএস লক্ষ্মণ, মুথাইয়া মুরলীধরন, টিএ শেখরের মতো বিশেষজ্ঞদের আনা হয়, পিচের জন্য সেখানে কোনও বিশেষজ্ঞ আনা হয় না কেন?
জানা গেল, বাংলা থেকে তিনজন বোর্ডের কিউরেটদের এই কোর্স করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন পাস করেছেন, একজন করেননি। যাঁরা পাস করেছেন, তাঁদের একজন সফি আহমেদ মূলত স্থানীয় ক্রিকেটে উইকেটের তদারকি করে বেড়ান। লিগে কোথায় কেমন উইকেট হচ্ছে সে সব দেখে বেড়ান তিনি।