প্র্যাকটিসে রোহিত। শুক্রবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
আইপিএল ফাইনালের দু’টো পাঁচশো টাকার টিকিট সঙ্গে আছে? বিক্রি করলে দাম তো পাবেনই, এমনকী সঙ্গে ফ্রিতে রান্নাঘরে একটা ইলিশ মাছও ঢুকে যেতে পারে!
গ্রীষ্মের অসহ্য দাবদাহে অফিস-কাছারি দুষ্কর মনে হচ্ছে? দু’টো ছবি দেখে নিন। মহমেডান মাঠ এবং ইডেন টিকিট কাউন্টার। হাজারে-হাজারে দাঁড়িয়ে সেখানে। কাঠফাটা রোদকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে! একটা, ফাইনালের মাত্র একটা হলেই চলবে। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে অবিরাম ঘোষণা চলছে ‘প্লিজ আপনারা ফিরে যান,’ বারবার ঘোড়সওয়ার পুলিশ তেড়ে আসছে— তবু কে শোনে কার কথা?
স্বয়ং জামাইকে এনে হাজির করিয়ে সিএবি কর্তাদের কাছে বিনয়ী ‘বাউন্সার’— আপনারাই বলুন জামাইষষ্ঠীর দিনে জামাইকে একটা টিকিট না দিলে মুখরক্ষা হয় কী ভাবে! দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে যাচ্ছেন বাবা! কাতর মিনতিতে বলে চলেছেন, ছেলের মন ভাল রাখতে একটাই উপায়। শুধু একটা টিকিট চাই!
কেউ কেউ বলতে পারেন, আইপিএল ফাইনাল। উন্মাদনা তো হবেই। টিকিট কাউন্টার ঘিরে অগুনতি লোকের চরম অসূয়া প্রকাশ, পুলিশের ঠ্যাঙানি অগ্রাহ্য করে ঠায় কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা, দু’শো বাইশ রকম উপায়ে পরিচিত কর্তাদের কাছে টিকিটপ্রার্থনা, আইপিএল ফাইনালের মতো মহাযুদ্ধের তো এটাই নিয়ম হওয়া উচিত। কিন্তু শহরে আইপিএল ফাইনালের ইতিহাস সেটা বলবে না। বলবে, দু’বছর আগেও কলকাতা ফাইনালে কেকেআর ছিল না। যুযুধান টিম দু’টো এরাই ছিল—মুম্বই আর চেন্নাই। কিন্তু উত্তেজনার দু’টোর কোনও মিল হয় না।
সিএবি কর্তাদের কথা ছেড়ে দেওয়াই ভাল। শহরের ‘মতিগতি’ বুঝতে না পেরে মিনিটে-মিনিটে দিশাহারা এবং হুঙ্কার দিচ্ছেন, শনিবার থেকে সোজা নাকি ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’! আসলে একই শহরের আইপিএল নিয়ে দু’রকম মনোভাব থাকতে পারে, সেটাই কেউ ধরতে পারেনি। আইপিএল আটে একই ইডেনে কেকেআর বনাম সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে লোক যায়নি। ফাইনালে কেকেআর নেই, কিন্তু টিকিট তিন দিন আগে থেকে নিঃশেষিত।
শোনা গেল, সংগঠকরা দু’টো ভুল নিয়ে এখন পস্তাচ্ছেন। এক, কেকেআর খেলবে না বলে আশঙ্কিত হয়ে টিকিটের দাম কমিয়ে ফেলা। যা ব্যূমেরাং হয়ে এখন সংগঠকদের দিকেই তেড়ে যাচ্ছে। দুই, অনলাইনে প্রচুর টিকিট আগেভাগে ছেড়ে দেওয়ায় কাউন্টারে তেমন কিছুই রাখা যায়নি।
দেখলে মনে হবে, আইপিলের অপ্রত্যাশিত ফল এ বার বোধহয় এটাই। মুম্বই বা সিএসকে যে টিমই শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হোক, সেটা নয়। মুম্বই যদিও তার মধ্যে অমর কীর্তি স্থাপনে প্রবল লড়ে যাচ্ছে। শোনা গেল, টিমটাকে সম্পূর্ণ একটা আলাদা ‘জোনে’ ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে। টিমটা অপ্রয়োজন নাকি কথাই বলছে না। কারণ, মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। বলা হচ্ছে, স্বপ্নের কামব্যাক ঘটিয়ে ফাইনালে উঠেছে টিমটা। অন্তিম যুদ্ধে হড়কানো অর্থহীন। সচিন তেন্ডুলকর গত কাল টিমের সঙ্গে আসেননি। জল্পনা সত্যি হলে, শনিবার ঢুকে পড়ছেন। হরভজন সিংহ আবার এ দিন সিএবি ঢুকেই সোজা চলে গেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। ‘গুরু’র কাছে কী চাইলেন ‘টার্বুনেটর’? সাফল্য-মন্ত্র? শুনে সৌরভ হাসতে-হাসতে বললেন, ‘‘আরে, না না। ওকে কনগ্র্যাচুলেট করলাম।’’
পিচ দেখে অবশ্য হরভজনের কতটা হাসি ফুটল, কে জানে। নতুন পিচ দেওয়া হচ্ছে আইপিএল ফাইনালে। যেখানে ঘাস আছে, টার্ন নেই। বাইশ গজের বাইরের মেনুকার্ডে আবার ‘নেই’ কম। ‘আছে’র আধিক্য। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট-প্রশাসনের প্রধানরা আসছেন। এমনকী দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের সিইও হারুন লর্গ্যাট পর্যন্ত (২০১১ বিশ্বকাপে ইডেন থেকে ম্যাচ সরানোর পিছনে যাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল)। বলিউড তারকা— তাঁরাও বাদ যাচ্ছেন না। হৃতিক রোশন। ফারহান আখতার। অনুষ্কা শর্মা।
শুধু একজনই থাকছেন না। বিরাট কোহলিই তো থাকছেন না!
কাল ফের মুখোমুখি