হতাশার সঙ্গে জলের অভাব। কষ্ট দ্বিগুণ। ফাইল চিত্র।
শনিবার তখন রাত ১০টা বেজে ১০ মিনিট। ক্লান্ত, অবসন্ন লাগছিল উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শিবনাথ ঘোষকে। বছর দশেকের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন যুবভারতীতে। পরনে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি। চার নম্বর গেট দিয়ে বেরোতে বেরোতেই ক্ষোভটা বেরিয়ে এল শিবনাথের মুখ দিয়ে। ‘‘জোড়া গোল খেলাম বটে, কিন্তু এক ফোঁটা জল পাইনি। হোম ম্যাচ যাদের, তাদের তো সব দর্শকের কথাই ভাবা উচিত।’’ রাগ আর অবসাদ মেশানো মুখে মেয়ের হাত ধরে জলের খোঁজে রাস্তা পার হয়ে চলে গেলেন।
শুধু শিবদাসই নন, শনিবার ডার্বির শেষে এমন ক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছে অনেকের মুখেই। তবে তাঁরা বেশির ভাগই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। জোড়া গোলে জয়, তা-ও আবার টানা সাত বার চির প্রতিদ্বন্দ্বী লাল-হলুদকে হারানোর উচ্ছ্বাস। খেলা শেষে উল্লাসে মাতা বাগান সমর্থকদের আর ক্ষোভপ্রকাশের সময় কোথায়? তবে তাঁদেরও অনেকে মেনে নিয়েছেন, এত মানুষ মাঠে আসবে জানা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না যুবভারতীতে।
সল্টলেক স্টেডিয়ামে যাওয়ার জন্য মেট্রো রেল চালু হওয়ার পরে দ্বিতীয় ডার্বি যুবভারতীতে। দুই পক্ষের সমর্থকদের অনেকেই এসেছেন মেট্রো পথে। তবে বেশির ভাগই এসেছেন সড়কপথে। মাঠের কাছে পৌঁছেই স্টেডিয়ামে ঢোকার উপায় ছিল না। টিকিট অনুযায়ী নির্দিষ্ট গেটে হেঁটে যাওয়ার পরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। তিন দফায় নিরাপত্তা কর্মীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এর পরে সিঁড়ি বেয়ে স্টেডিয়ামে ওঠা। আসন খুঁজে বসা। মোটামুটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে ভরে গিয়েছিল গ্যালারি। কিন্তু খেলা শুরু হতে হতে প্রায় ৮টা বেজে যায়।
স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে সাধারণ ভাবে দর্শকদের জন্য পাউচ প্যাকেটে জল রাখার কথা। কিন্তু শনিবার জলের দেখা বিশেষ পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘অনেকেই এসে আমাদের কাছে জল চাইছেন। কিন্তু আমরা তো সেটা দেখি না। আমাদের কর্মীরাও জল পাচ্ছেন না।’’ নিয়ম অনুযায়ী মাঠে জলের বোতল নিয়ে ঢোকা যায় না। ফলে যাঁরা বোতল নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের তা বাইরে রেখেই ঢুকতে হয়েছে।
পানীয় জল না পেয়ে ক্ষুব্ধ এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক বলেন, ‘‘ফুটবল মাঠে খেলোয়াড়রা ৯০ মিনিট ছোটেন। আর দর্শকরা চিৎকার করেন গোটা সময়টা। হাফ টাইম তো বটেই, খেলা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থাকতে। অথচ সামান্য জলটুকু পাওয়া যায়নি। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। এই রকম কষ্ট দেওয়ার কোনও মানে হয় না।’’ এর পরে এই লাল-হলুদ সমর্থকও বিপক্ষ দলকে গাল দিতে শুরু করেন। আরে মোহনবাগানের কী দোষ? উত্তর এল, ‘‘কী দোষ মানে! ওদেরই তো হোম ম্যাচ। ওদের দায়িত্ব নিতে হবে না!’’
এক মোহনবাগান সমর্থককে এ নিয়ে বলাতে তিনি পাল্টা কটাক্ষ করলেন। আবিরে আবিরে সবুজ হয়ে যাওয়া বেলঘরিয়ার সায়ন্তনের বক্তব্য, ‘‘প্রথম ৪৫ মিনিট ওদের গলা শোকায়নি। বুমোসের গোলটা খাওয়ার পরে তেষ্টা পেয়েছিল। আর মনবীর যখন ওঁদের সব আশা শেষ করে দিয়েছে, তখনই গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। এর পরে ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য স্যালাইনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে।’’