আই লিগ: ইস্টবেঙ্গল ৫ • লাজং এফসি ১

ইস্টবেঙ্গলের বড় জয়েও ম্লান প্লাজা

গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় দলকে নানা ফর্মেশনে অনুশীলন করিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল। আক্রমণে কখনও ক্যারিবিয়ান উইলিস প্লাজার সঙ্গে ব্রাজিলীয় চার্লস ডি’সুজাকে জুড়ে। কখনও বা প্রকাশ সরকারকে মাঝমাঠে রেখে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

উল্লাস: গোল করার পর উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গল তারকা আল আমনা। সঙ্গী প্রকাশ সরকার। শনিবার বারাসাত স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

ম্যাচের আগেই তিনি বলে দিয়েছিলেন শনিবার ইস্টবেঙ্গলের ‘ডু অর ডাই’ লড়াই।

Advertisement

এ দিনের জয়টা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না তা বোঝা গেল ইস্টবেঙ্গলের প্রথম গোলের পর। যখন গোল করেই মহম্মদ আল আমনা মাঠেই বসে পড়লেন প্রার্থনায়। আর তার পরে বাকি ম্যাচে যে উজ্জ্বীবিত ফুটবল তিনি খেললেন, তাতেই এ বারের আই লিগে প্রথম তিন পয়েন্ট পেল ইস্টবেঙ্গল।

এ দিন বারাসতে শিলংয়ের দলটিকে ৫-১ হারিয়ে ইস্টবেঙ্গল আই লিগের প্রথম জয়ের সঙ্গে নিল মধুর প্রতিশোধও। দু’বছর আগে আই লিগে এই লাজং এফসি-র কাছেই ১-৫ হারতে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। সেই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের একমাত্র গোলদাতা কেভিন লোবো এ দিন খালিদ জামিলের প্রথম দলে ছিলেন। কাতসুমি পেনাল্টি থেকে ৫-০ করতেই রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে লাফিয়ে উঠলেন ইস্টবেঙ্গলের এই গোয়ান মিডফিল্ডার।

Advertisement

গত দু’বছরে সেই লাজং এফসি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এ দিন তাঁদের কোচ ববি লিংডো নংগবেট যে দল নামিয়েছিলেন তার প্রথম একাদশে তিন বিদেশি ছাড়া বাকি ছয় ফুটবলারই অনূর্ধ্ব-২২ কোটার। আগের সেই মরিয়া মনোভাবটা নেই এই লাজংয়ের।

যা মানছেন, ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে প্রাক্তন ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর প্রিয় দলের পাঁচ গোলে জয়ের দিনেও ভাস্কর বললেন, ‘‘এই লাজং-এর আগের তেজ আর নেই। তবে তিন পয়েন্ট পেলে তো ভালই লাগবে। অর্ণবের কথা বলেছিলাম। ও আসতে কিন্তু রক্ষণ কিছুটা পোক্ত হয়েছে।’’

গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় দলকে নানা ফর্মেশনে অনুশীলন করিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল। আক্রমণে কখনও ক্যারিবিয়ান উইলিস প্লাজার সঙ্গে ব্রাজিলীয় চার্লস ডি’সুজাকে জুড়ে। কখনও বা প্রকাশ সরকারকে মাঝমাঠে রেখে। কিন্তু ম্যাচের ঠিক আগের মুহূর্তে প্রথম একাদশ গড়তে গিয়ে তিনি কী করবেন তার হদিশ বোধহয় ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কাছেও নেই।

মোহনবাগানে ম্যাচের দলে এ দিন পাঁচটি পরিবর্তন করেছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। গোলে মিরশাদ মিচু। রাইট ব্যাকে প্রকাশ সরকার। লেফট ব্যাকে সালাম রঞ্জন সিংহ। স্টপারে অর্ণব। আর মাঝমাঠে কাতসুমিকে লেফট উইংয়ে সরিয়ে তাঁর জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন গেমমেকার কেভিন লোবো-কে। যাতে আক্রমণে আরও ঝড় তোলা যায়। কিন্তু আক্রমণে উইলিস প্লাজাকে সেই একা রেখেই খালিদ দল সাজিয়েছিলেন ৪-৪-১-১ ছকে। যেখানে প্লাজার পিছনে আমনা।

ম্যাচের ফল দেখে মনে হতে পারে, বড় ম্যাচের পর নিজেদের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তা মোটেও নয়। এ দিনও প্লাজা সহজ গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। বিপক্ষের ফ্রিকিক থেকে গোলরক্ষক মিরশাদ যে পোস্টে দাঁড়িয়েছিলেন সেই পোস্টেই গোল খেলেন।

ইস্টবেঙ্গলের এ দিন বড় জয়ের নেপথ্যে রয়েছে আমনাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা। চোদ্দো মিনিটে আমনার প্রথম গোলের সময় বল লাজং ডিফেন্ডার রাকেশ প্রধানের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করেছিল। এর পাঁচ মিনিট পরে হেডে এদুয়ার্দোর দ্বিতীয় গোলের সময়ও ব্যক্তিগত দক্ষতা।ম্যাচের সেরা লালডানমাউইয়া রালতের কাট করে ঢুকে জোড়া গোলের ক্ষেত্রে আমনার ঠিকানা লেখা পাস ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। বরং পেনাল্টির সময় আমনা, রালতে-র বদলে কাতসুমির স্বার্থপরের মতো আগেভাগে পেনাল্টি স্পটে দাঁড়িয়ে পড়াটাও দলের একতার জন্য সঠিক বিজ্ঞাপন নয়।

লাজং কোচ নংগবেট ম্যাচ শেষে বলছিলেন, দুই অর্ধ মিলিয়ে শুরুতেই গোল খাওয়ায় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে তাঁর দল। আসলে এ দিন আমনা একটু উপর থেকে খেলায় খুব সহজেই মাঝমাঠে অপারেট করতে পেরেছেন। আর সেখানেই হেরে যায় লাজং।

এ দিন জিতলেও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে। এক, প্লাজার ফিনিশিং কবে ঠিক হবে। দুই, মিরশাদ মিচুর মতো শিক্ষানবীশ গোলকিপারকে নামিয়ে কেন ঝুঁকি নিচ্ছেন খালিদ। তিন, কেন সেটপিস থেকে গোল হজমের ভূত তৃতীয় ম্যাচেও দূর হল না।

ইস্টবেঙ্গল কোচ যদিও বলছেন, ‘‘দল জিতেছে। এ বার সব ঠিক হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement