উল্লাস: গোল করার পরে উৎসব গন্সালেসের। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মোহনবাগান ১ • ভারতীয় নৌসেনা ০
মাঠে প্রতিপক্ষ। কিন্তু ভারতীয় নৌসেনাদের সম্মান জানাতেই বিশাল জাতীয় পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। সঙ্গে ফেস্টুন। সেখানে লেখা—জাতীয় ক্লাবের স্যালুট দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে।
ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে সেই ভারতীয় নৌসেনাদেরই ১-০ হারিয়ে যুবভারতীর ওই জায়গাতে গিয়েই দর্শকদের উদ্দেশে ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ দিচ্ছিলেন শেখ ফৈয়াজরা। যা দেখে মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনার গলায় স্বস্তি, ‘‘টানা তিন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে যাচ্ছি। দলের ২২ জন ফুটবলারকেই দেখে নিলাম। ছন্দে রয়েছে দল।’’
গ্রুপ লিগে পর পর দুই ম্যাচ জেতায় ইতিমধ্যেই ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে চলে গিয়েছে মোহনবাগান। শনিবার সন্ধ্যায় নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে খেলতে নামার আগেই সবুজ-মেরুন শিবিরের কোচ জেনে গিয়েছিলেন সেমিফাইনালে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল কাশ্মীর। তাই এ দিন কলকাতা লিগে কাস্টমসের বিরুদ্ধে খেলা দল থেকে সাত জনকে পরিবর্তন করেছিলেন কিবু।
একে ঝুঁকি নিতে না চাওয়ার রণনীতি। তার উপরে শুক্রবার অনুশীলনের পরে বাড়ি গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন মোহনবাগানের স্পেনীয় স্ট্রাইকার সালভা চামোরো। তাই তাঁকে বাইরে রেখেই দল সাজিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ। মাঝমাঠে দলের একমাত্র বিদেশি ফ্রান গন্সালেস।
নৌসেনার ফুটবলারেরা এমনিতেই শারীরিক ভাবে শক্তিশালী। তার উপরে প্রতি-আক্রমণে পাল্টা চাপ দিচ্ছিলেন। তাই প্রথমার্ধে শুভ ঘোষ, ফৈয়াজ়রা গোল করার কাছাকাছি জায়গায় গিয়েও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সুহেইর একে গোলের মধ্যে নেই। তার উপরে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে এটাই ছিল শুভ ঘোষের প্রথম ম্যাচ। তাই প্রথমার্ধে গোল পায়নি মোহনবাগান।
বিদেশীহীন নৌসেনাদের বিরুদ্ধে তাই মোহনবাগানের গোল আসতে লেগে গেল ৫৮ মিনিট। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে প্রতিপক্ষ বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন শেখ ফৈয়াজ়। তাঁকে লাথি মারেন গত বছর মোহনবাগানে খেলে যাওয়া বিপক্ষ ডিফেন্ডার দলরাজ সিংহ। সঙ্গত কারণেই রেফারি পেনাল্টি দিলে সেখান থেকে মোহনবাগানকে জয়ের গোল এনে দেন গন্সালেস। বাড়ি ফেরার সময়ে তিনি বলে গেলেন, ‘‘রক্ষণকে সাহায্য করতে মাঠে নামি। তার পরে গোল করে দলকে জিতিয়ে ফিরলে ভাল তো লাগবেই।’’
দ্বিতীয়ার্ধে দল গোল পেলেও এই সময় কিবু এমন কিছু পরিবর্তন করলেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এ দিন ম্যাচের সেরা ফুটবলার শুভকে তুলে নিয়ে তিনি নামালেন দীপ সাহাকে। ইমরান খান কার্যকর না হলেও তাঁকে মাঠে রেখে দিলেন। ১-০ এগিয়ে থাকা অবস্থায় গুরজিন্দরকে লেফ্ট ব্যাকে নামিয়ে ধনচন্দ্রকে করে দিলেন লেফ্ট উইং!
এই ম্যাচ থেকে মোহনবাগানের প্রাপ্তি অবশ্যই শুভ ঘোষ। অনূর্ধ্ব-১৪ দল থেকে মোহনবাগানে সঙ্গে রয়েছেন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনার ছেলেটির বলের উপর দখল ভাল। বল ছাড়া ও বল-সহ গতি দুরন্ত। হেডিং, শুটিং, টার্নিং চোখে পড়ার মতো। দ্রুত গোলের কাছে পৌঁছতে পারেন। শরীরে একটু শক্তি বাড়াতে পারলে এই ছেলেটি আগামী দিনের তারকা হতেই পারেন।
মোহনবাগান:দেবজিৎ মজুমদার, অরিজিৎ বাগুই, লালছাওয়ান কিমা, সুখদেব সিংহ, ধনচন্দ্র সিংহ, শেখ ফৈয়াজ়, ইমরান খান, ফ্রান গন্সালেস, নংদাম্বা নাওরেম (রোমারিয়ো জেসুরাজ), সুহেইর ভি পি (গুরজিন্দর কুমার, শুভ ঘোষ (দীপ সাহা)।
ইন্ডিয়ান নেভি: ভাস্কর রায়, প্রদীশ, অভিষেক জোশী, নভজ্যোৎ সিংহ, দলরাজ সিংহ, বিবেকানন্দ রাজ (ইনায়েত), ব্রিট্টো, জিজো (অনুপ পওলি), সর্বজিৎ সিংহ, হরিকৃষ্ণ (আকাশ), নবীন গুরুং।