বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের মতো গভীর ম্যাচের মীমাংসার পর ক্যাপ্টেন্স মিটে সাধারণত নাটকের বিশেষ সুযোগ থাকে না। এক পক্ষ সদ্য জিতে উঠে বেশি উত্তেজিত থাকে। অপর পক্ষ হয় বকলমে নানা অভিযোগ তোলে বা শান্ত ভাবে হার মেনে নেয়।
কিন্তু সেমিফাইনাল হেরে ওঠা যথেষ্ট ভাল পারফর্মকারী অধিনায়ককে কোথাও যদি ঢোকামাত্র প্রথম প্রশ্ন হয়, আপনি কবে রিটায়ার করছেন, তিনি তো ক্ষুব্ধ হবেনই। ধোনিকে যেমন ঢোকামাত্র প্রশ্নটা করাই নয়, এর পরেও দু’বার করা হল। তিনি পাল্টা হাসিমুখে মিডিয়াকে সমালোচনা শুরু করলেন। ব্যাপারটা অদ্ভুত দিকে চলে গেল।
ও দিকে মাইকেল ক্লার্ককে বিবিসির সাংবাদিক জিজ্ঞেস করতে গেলেন একটা কিছু। ভুলে বললেন আরও কিছু। বলতে গেছিলেন চোট থেকে এ বার ফিরে আসার পর ইদানীং আপনার যে দুর্ধর্ষ সাফল্য, সে ব্যাপারে কিছু বলুন। কিন্তু তিনি বলে বসেন, ‘ইওর ট্রিমেন্ডাস সেক্স সিন্স কামিং ব্যাক ফ্রম অ্যান ইঞ্জুরি।’
সাক্সেসের জায়গায় বলে ফেলেন সেক্স। মাইকেল প্রথমে বিস্ফারিত হয়ে যান। তার পর হাসতে হাসতে বলেন, “আপনি কী করে জানলেন? আপনি কি আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে এসেছেন নাকি?” অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের পাশে বসা স্টিভ স্মিথ তখন হেসে গড়িয়ে পড়ছেন। পুরো সম্মেলন হাসছে।
সেই রেশ কমতে না কমতে আবার হাসি। এ বার ক্লার্ক নিজে ভুল করলেন। বলতে গেছিলেন ‘আওয়ার রিসেন্ট সাক্সেস’। বলে ফেলেন ‘আওয়ার রিসেন্ট সেক্স’। এ বারও হাসির ফোয়ারা। ক্লার্ক এ বার লজ্জিত ভাবে সামলাতে চাইলেন, “ওই প্রশ্নটা শোনার পর থেকে কথাটা মাথায় ঘুরছে বলে ভুলটা হল।” তিনি বলা শেষ করার পরেও হাসি অবশ্য থেকেই গেল।
আর ভারতেরটা ঠিক উল্টো। হাসির মাধ্যমে দু’পক্ষই সিরিয়াস কিছু আদানপ্রদান করলেন। আর এক বার প্রমাণ হল যে সেমিফাইনালে হারার পরেও ধোনির মিডিয়া বিদ্বেষ যাওয়ার নয়! অন্য অনেক ক্যাপ্টেন জিতলে অহঙ্কার বাড়ায়। হারলে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে বিনয়ী হয়। ধোনি হেরেও বদলাতে নারাজ।
হঠাত্ বললেন, “মিডিয়া ম্যানেজার ডক্টর বাবা আপনাদের সঙ্গে নাকি খারাপ ব্যবহার করছেন।” এটা এমনই জনপ্রিয় মন্তব্য যে সবাই হাততালি দিল। ধোনি দ্রুত পাশে দাঁড়ানো বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি জানবেন মিডিয়া যখন আপনাকে গালাগাল দেবে তার মানে আপনি ঠিক কাজ করছেন।” এর আগে তিনি বলেছেন যে, “অবসর সংক্রান্ত আপনাদের সব সুপারিশগুলো পড়ব তার পর ঠিক উল্টোটা করব।”
মনেই হচ্ছে না সেমিফাইনাল হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নেওয়া দলের অধিনায়ক কথা বলছেন। বলে ফেললেন, “আপনাদের যদি মনে হয় আমি খুব রুক্ষ মানুষ হিসেবে, সেটা ঠিক নয়। আপনারাই বলুন না আলাদা করে কথা বলার সময় আমি কি কখনও কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি।”
ধোনিকে এমন মুডে দেখা যায় না। রাতে ভারতীয় দলের এক সদস্য অবশ্য জানালেন এমএস যখন মানসিক ভাবে প্রচণ্ড বিধ্বস্ত থাকে তখন এ সব হাসিমশকরা করে।
হতেই পারে। কিন্তু একই দিনে পরপর এমন দুটো নাটকের ব্যাখ্যা কী?