আনন্দবাজার এক্সক্লুসিভ

ভারতের দৌড় সেমিফাইনালের বেশি দেখছি না

বক্তার হাই-এন্ড মেলবোর্ন অ্যাপার্টমেন্টে যখন ইন্টারভিউটা চলছে তখন টিভির পর্দায় চলছে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাটিং গর্জন। অস্ফুটে তার প্রশংসা করতে করতে সাক্ষাৎকার দিলেন। ইন্টারভিউয়ের সময় ছিল দুপুর তিনটে, পাশের একটা কাফেতে। কিন্তু সেখানে কফি পানের পর নিজেই প্রস্তাব দিলেন, “আমার অ্যাপার্টমেন্টে বসে ইন্টারভিউটা হতে পারে।” মেলবোর্ন শহরতলি। এলাকার নাম প্রাহারান। রাস্তার নাম ম্যালভার্ন রোড। বললেন এটা কিনেছেন সবে কয়েক মাস হল। টিভিটাকে মিউট করে নিজের ডাইনিং টেবলে পা ছড়িয়ে এবিপি-র সঙ্গে কথা বললেন ডেভিড ওয়ার্নারের টেস্ট ব্যাটিং পার্টনার ক্রিস রজার্স। তাঁর আরও একটা পরিচয়, ফিল হিউজের অভিন্নহৃদয় বন্ধু। পাশের ঘরে দেখা গেল একটা জার্সি ঝুলছে। যার ওপর নম্বর লেখা ৪০৮...

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৪
Share:

নিজের নতুন অ্যাপার্টমেন্টে একান্তে রজার্স। শুক্রবার মেলবোর্নে। ছবি: গৌতম ভট্টাচার্য।

বক্তার হাই-এন্ড মেলবোর্ন অ্যাপার্টমেন্টে যখন ইন্টারভিউটা চলছে তখন টিভির পর্দায় চলছে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ব্যাটিং গর্জন। অস্ফুটে তার প্রশংসা করতে করতে সাক্ষাৎকার দিলেন। ইন্টারভিউয়ের সময় ছিল দুপুর তিনটে, পাশের একটা কাফেতে। কিন্তু সেখানে কফি পানের পর নিজেই প্রস্তাব দিলেন, “আমার অ্যাপার্টমেন্টে বসে ইন্টারভিউটা হতে পারে।” মেলবোর্ন শহরতলি। এলাকার নাম প্রাহারান। রাস্তার নাম ম্যালভার্ন রোড। বললেন এটা কিনেছেন সবে কয়েক মাস হল। টিভিটাকে মিউট করে নিজের ডাইনিং টেবলে পা ছড়িয়ে এবিপি-র সঙ্গে কথা বললেন ডেভিড ওয়ার্নারের টেস্ট ব্যাটিং পার্টনার ক্রিস রজার্স। তাঁর আরও একটা পরিচয়, ফিল হিউজের অভিন্নহৃদয় বন্ধু। পাশের ঘরে দেখা গেল একটা জার্সি ঝুলছে। যার ওপর নম্বর লেখা ৪০৮...

Advertisement

প্রশ্ন: আজকের খেলা দেখার পর কী মনে হচ্ছে সেমিফাইনাল লাইন-আপ?

Advertisement

রজার্স: মনে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল হতে পারে।

প্র: হলে কে জিতবে?

রজার্স: অস্ট্রেলিয়া।

প্র: নিজের টিম বলে বলছেন?

রজার্স: না, ওয়ান ডে ওয়ার্ল্ড কাপ জেতার জন্য চাই তেজিয়ান ফাস্ট বোলার যারা উইকেট নিতে পারে। এখন ওয়ান ডে-র যা নিয়ম হয়েছে সার্কলের বাইরে মাত্র চার জন করে ফিল্ডার। তাতে রান আটকে জেতার দিন শেষ। উইকেট নিয়ে জিততে হবে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেই সব বোলার আছে। কিছু অলরাউন্ডার আছে ম্যাক্সওয়েলের মতো যারা যে কোনও সময় খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে।

প্র: আপনার খারাপ লাগছে না দেশের মাঠে খেলা। আপনার বন্ধুরা সব খেলছে, অথচ আপনি বাইরে?

রজার্স: না লাগছে না। ওয়ান ডে-তে আমি কোনও দিনই তেমন ইন্টারেস্টেড নই। আমার ক্ষেত্র টেস্ট ক্রিকেট। এখন থেকে অ্যাসেজের জন্য তৈরি হচ্ছি।

প্র: আগের অ্যাসেজে আপনার রান তো খুব ভাল। ভারতের সঙ্গেও ব্রিসবেন টেস্টটা আপনি জিতিয়ে দিলেন ফোর্থ ইনিংসের পঞ্চাশটায়। নইলে কী হত বলা মুশকিল।

রজার্স: হ্যাঁ হঠাৎ করে প্রেশার হয়ে গিয়েছিল। আপনাদের ইশান্ত শর্মা ভাল বল করছিল। ইন ফ্যাক্ট ও-ই আপনাদের বেস্ট বোলার। ইশান্ত না থাকায় ইন্ডিয়ার বিশ্বকাপ বোলার কোথায়?

প্র: রোববার ইন্ডিয়া-সাউথ আফ্রিকা ম্যাচটা দেখবেন নিশ্চয়ই?

রজার্স: না থাকছি না। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার একটা প্রোমোশনের কাজে শহর ছেড়ে যেতে হবে।

প্র: কে জিতবে মনে হয় রোববার?

রজার্স: সাউথ আফ্রিকা জিতলে আমি একটুও অবাক হব না। ডে’ভিলিয়ার্স এখন বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে ব্যাটসম্যান। প্লাস ওদের বিশেষ কিছু হার্ড-হিটার রয়েছে। স্টেইন, মর্কেল রয়েছে। বোলিংয়ে যে কোনও টিমকে ঝাঁকুনি দিয়ে দেওয়ার মতো। ইন্ডিয়ার তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার বোলিং কোথায়? কোহলি দারুণ। ও আমার মতে ডে’ভিলিয়ার্সের পরেই। কিন্তু একা কত লড়বে? মুরলী বিজয় থাকলে আমি বলতাম আর একটা ভাল ব্যাট রয়েছে। ইন ফ্যাক্ট ওকে ওয়ার্ল্ড কাপ টিমে না দেখে আমি অবাক হয়ে গেছি। গোটা টেস্ট সিরিজের মিটিংগুলোয় আমরা কোহলি আর মুরলী বিজয়, এই দু’জনকে নিয়েই আলোচনা করতাম।

প্র: ভারতের তা হলে আপনি বিশ্বকাপে আশা দেখছেন না?

রজার্স: সেমিফাইনাল অবধি যেতেই পারে। আমার মতে সেমিফাইনাল লাইন আপ হতে পারে এ রকম— ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া। অন্যটায় নিউজিল্যান্ড-সাউথ আফ্রিকা।

প্র: বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের অত্যাচার দেখে ব্যারি রিচার্ডস পরামর্শ দিয়েছেন বলের চামড়া তোলা আইনসিদ্ধ করা হোক।

রজার্স: জানি। আমার মনে হয় ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।

প্র: কেন?

রজার্স:উনি যেটা চাইছেন সেটা নিয়মের মধ্যে থেকেই করা সম্ভব। তার জন্য এত বেপরোয়া হওয়ার দরকার নেই। আমার মতে সার্কলের বাইরে ফিল্ডার সংখ্যা যদি বাড়ানো যায় আর ওয়াইডের নিয়ম শিথিল করা যায়, তা হলেই ব্যালান্সটা আবার ফিরবে।

প্র: রিচার্ডস তো এমনও বলেছেন যে, ব্যাটের সুইট স্পটের সংখ্যা কমানো উচিত।

রজার্স: এতে আমি একমত। মাইকেল ক্লার্ক আর ওয়ার্নারের ব্যাট দুটো যদি দেখেন, সুইট স্পটে ভর্তি। লাগলেই বিদ্যুতের মতো ছোটে। বাট কী করা যাবে? এটা ব্যাটসম্যানের জমানা। যারা এ যুগের ব্যাটসম্যান তারা ফায়দা তুলবেই।

প্র: আপনি এত সাবলীল কথা বলেন। সব ব্যাপারেই পরিষ্কার মতামত রয়েছে। দেখে অবাকই লাগছে, কখনও কলাম লেখেননি কেন?

রজার্স: খেলা ছাড়ার পর হয়তো ভেবে দেখব। তবে আমার তো জার্নালিজমে ডিগ্রি আছে।

প্র: আপনার পাশের ঘরে ৪০৮ লেখা একটা জার্সি চোখে পড়ল। শুনেওছি ফিল হিউজ আপনার খুব বন্ধু ছিলেন।

রজার্স: ইয়েস ফিল-আমি খুব ক্লোজ বন্ধু ছিলাম। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল, আদ্ধেক সময় এমন হত যে, হয় ও খেলবে নইলে আমি। তবু আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়নি। অসাধারণ একটা ছেলে। ও চলে যাওয়ার পর অনেক দিন আমাদের চোখের জল শুকোয়নি। আসলে তেমনই মানুষ ছিল। এমন অবস্থা ছিল যে, আমাদের প্র্যাকটিসে কেউ বাউন্সার দিতে চাইছিল না। অ্যাডিলেডে কোহলির যখন প্রথম বলটাই মাথায় লাগল, আমি সবচেয়ে কাছে— শর্ট লেগে। দৌড়ে ছুটে যাই। দেখি আমাদের গোটা টিম চলে এসেছে। সবার মুখচোখ শুকনো কোহলির কিছু হয়নি তো? বিপক্ষের জন্য এত উদ্বেগ আমরা কোনও দিন দেখাইনি।

প্র: অথচ ফিল হিউজের মৃত্যুর পর যে স্পিরিট মেনে আপনারা খেলবেন বলেছিলেন, সেটা মোটেও খেলেননি। এটা নিয়ে প্রচুর সমালোচনাও হয়।

রজার্স: হয়েছিল। তখন টিমের তরফে আমি বিবৃতি দিয়ে বলি, এই সমালোচনাটা খুব হতাশাজনক।

প্র: আপনারা কোহলি বা রোহিতকে যা-তা গালাগাল দিলেন আর কেউ সেটা লিখলে হতাশাজনক?

রজার্স: গালাগাল নয় ওটা স্লেজিং। মাঠে তো একটু-আধটু কথাবার্তা হবেই। একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করবেন, ইন্ডিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার মতো দুটো প্যাশনেট দেশ মাঠে লড়াই করলে ভেতরটা কী করে শিশুদের সিট অ্যান্ড ড্র কম্পিটিশন হতে পারে? একটু-আধটু কথা তো হবেই ব্যাটসম্যানকে গুবলেট করে দেওয়ার জন্য। তবে ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের জিজ্ঞেস করে দেখবেন, মাঠে যা হয়েছে তা মাঠেই পড়ে রয়েছে। কেউ বাইরে কিছু আনেনি।

প্র: এটা আপনাদের মনে হতে পারে। কিন্তু কোহলিরা এখনও সেই গালাগালগুলো হজম করেননি।

রজার্স: বারবার গালাগাল বলবেন না।

প্র: তা হলে ওটা কী? হাউ আর ইউ দিস মর্নিং?

রজার্স: সেটা নয়। তবে গালাগালও নয়। অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য থাকে আসলে ব্যাটসম্যানকে মানসিক বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া। কখনও তাতে কাজ হয়। কখনও হয় না। বিরাটেরটা যেমন পুরো ব্যাকফায়ার করেছে। ওকে রাগাতে গিয়ে উল্টে আমরা কেস খেয়ে গেলাম। ও বেটার করে ফেলল নিজেকে। বিশ্বকাপেও বিরাট কোহলি ইন্ডিয়ার সেরা আশা। ছেলেটার জেতার সীমাহীন ইচ্ছে আমাকে চমৎকৃত করেছে।

প্র: আর আজ ম্যাকালাম?

রজার্স: ম্যাকালাম তো নিশ্চয়ই! তার আগে সাউদি কী বোলিংটাই করল। দেখে মনে হল নিউজিল্যান্ড জিততে নয়, ইংল্যান্ডকে লজ্জা দিতে নেমেছিল। এই নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া দেখা হলে দারুণ হবে!

প্র: ক্লার্ক আর ওয়ার্নার আমাদের কাগজকে গত সপ্তাহে দেওয়া ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, বিশ্বকাপ জিতলে সেটা ফিল হিউজ স্মৃতিতে উৎসর্গ করতে চান।

রজার্স: অবশ্যই করা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement