একাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতেন সনি। —ফাইল চিত্র।
তুমি বললে ডার্বি, আমি শুনলাম সনি নর্দে। ডার্বি ম্যাচের আগে এই একটা স্লোগান এক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দিত। সবুজ-মেরুন জার্সি পরে বহু বড় ম্যাচ একা নিয়ন্ত্রণ করেছেন তিনি। উইং ধরে দৌড়তে দৌড়তে শরীরের দোলায় দু’-তিন জনকে যখন মাটি ধরাতেন, তখন গ্যালারি থেকে মোহন-সমর্থকরা ধ্বনি তুলতেন ‘স-নি, স-নি’।
সেই ‘হাইতিয়ান ম্যাজিশিয়ান’ এখন মালয়েশিয়ার ক্লাব মেলাকা ইউনাইটেডে। সেখানকার লিগ শুরু হচ্ছে ১৫ অগস্ট। শেষ হবে ১ নভেম্বর। করোনা আবহেই নিজেকে তৈরি করছেন সনি। তাঁর পুরনো ক্লাব মোহনবাগান এসে মিশে গিয়েছে এটিকে-র সঙ্গে। মোহনবাগানের নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে এটিকে। সমর্থকদের চোখে স্বপ্ন।
সনি নর্দে কী বলছেন? একসময়ের সেরা ক্রাউডপুলার আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘মোহনবাগান দেশের সেরা লিগে খেলবে। এটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’’ বদলে গিয়েছে দেশীয় ফুটবলের ছবি। আইএসএল-কেই এখন দেশের এক নম্বর লিগের মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে। আর সেই লিগেই খেলতে দেখা যাবে মোহনবাগানকে। সনি বলছেন, ‘‘মোহনবাগান আইএসএল-এ খেলবে, এটাই তো চেয়েছিলেন সমর্থকরা। সেটাই হতে চলেছে। এর থেকে ভাল ব্যাপার তো কিছু হয় না।’’
আরও পড়ুন: নেই ধোনি, গেল, দলে বিরাটকে রেখেও নেতা রোহিত! টম মুডির বিশ্ব টি২০ একাদশে বহু চমক
কলকাতা ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায়, গত বার এটিকে-তে ভেসে উঠেছিল তাঁর নাম। কথাবার্তাও এগিয়েছিল কিছুটা। কিন্তু তার পরে বিষয়টা থেমে যায়। স্পেনীয় কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস পছন্দের ফুটবলার নির্বাচন করে এটিকে-কে চ্যাম্পিয়ন করে দেন।
এ বছরও এটিকে-মোহনবাগানের ‘চাণক্য’ হাবাসই। পুরনো ক্লাব নতুন করে পথচলা শুরু করায় সনি কি আর ফিরতে পারবেন? ভূভারতের একাধিক ক্লাব তাঁকে দলে নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। শোনা যায় ইস্টবেঙ্গলও তাঁকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সনি তো আবার মোহনবাগান ছেড়ে অন্য কোনও ক্লাবের জার্সি পিঠে তুলতে চান না।
পছন্দের জার্সির নম্বর ১০ ও ১৬। মোহনবাগানের হয়ে শেষ যে বার খেললেন, সে বার ৫০ নম্বর জার্সি উঠেছিল পিঠে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সনির প্রত্যাবর্তন হয়তো আর সম্ভবই নয়। বাগান কর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল, সমর্থকদেরও প্রিয় ছিলেন। ব্যারেটো-ওডাফা যুগের পর তাঁর হাতেই উঠেছিল মোহনবাগানের ব্যাটন। বাগানে শুরু হয়েছিল সনি-যুগ। সেই কারণেই চোট আঘাতের পরে তাঁকে নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হলেও ফেরানো হয়েছিল সবুজ-মেরুন জার্সিতে।
সনি বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতের কথা এখন থেকে কে বলতে পারে? ফিরতেও তো পারি আমি। এখন মালয়েশিয়াতেই ভাল আছি। কলকাতাকে খুব মিস করি। এটিকে-মোহনবাগান নতুন টিম। ওদের জন্য শুভেচ্ছা রইল। মোহনবাগান আমার হৃদয়ে থেকে যাবে।’’ বিদায়বেলায় ব্যারেটোও এমনই বলেছিলেন। মোহনবাগান ছেড়ে অন্য ক্লাব ঘুরে পছন্দের বাগানে ফিরে এসেছিলেন ‘সবুজ তোতা’। সেখান থেকেই অবসর নিয়েছিলেন। সনির ক্ষেত্রে ফেরার পথটা মসৃণ নয়।
বাংলাদেশের ক্লাব শেখ জামাল ধানমণ্ডি থেকে বাগানে সই করেই ১৩ বছর পরে মোহনবাগানকে ভারতসেরা করেছিলেন। সনি বলছেন, ‘‘নতুন ক্লাবে আমার জায়গা হবে কি না, তা আমার জানা নেই। মোহনবাগান সমর্থকরা আমাকে ভালবাসেন। আমার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা হয় ওঁদের। আমাকে ওঁরা শ্রদ্ধা করেন। এই ভালবাসা-শ্রদ্ধা থেকেই যাবে।’’ মোহনবাগান জার্সিতে বহু স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছেন সনি। আলাদা করে কোন ম্যাচটার কথা বলবেন? সনি বলছেন, “২০১৫ সালের আই লিগে শিলং লাজং ম্যাচটা এখনও আমার চোখে ভাসে। আমরা ৪-৩ গোলে হারিয়েছিলাম লাজংকে।’’
চোট সারিয়ে ফিরে এসে প্রথম ম্যাচেই গোল করেছিলেন সনি।
এক সময়ে ডার্বিতে তিনি অপরাজিত ছিলেন। রামধনুর মতো বাঁক খাওয়ানো ফ্রি কিকে ইস্টবেঙ্গলের জাল কাঁপিয়েছিলেন শিলিগুড়িতে। তার পরেই তাঁর সেই গোল উদ্যাপন নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। কোন ডার্বিকে এগিয়ে রাখছেন? বাগানের একসময়ের প্রাণভোমরা বলছেন, “২০১৫ সালের ডার্বিতে বলবন্ত সিংহের গোলে আমরা ইস্টবেঙ্গলকে ০-১ হারিয়েছিলাম। সেটাই আমার খেলা সেরা ডার্বি।’’
মোহনবাগানের হয়ে শেষ ডার্বিতে তিনি অবশ্য হেরে গিয়েছিলেন। ডার্বিতে অপরাজিত থেকে কলকাতা ছাড়া হয়নি তাঁর। এর জন্য কি অনুতাপ হয়? সনি বলছেন, “২০১৭ সালে আমরা ফের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতেই পারতাম। কিন্তু সে বার আইজল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। আমরা হেরে গেলাম আইজলের কাছে। এটাই খুব খারাপ লাগে।’’
আরও পড়ুন: জীবনযুদ্ধের টেস্টে ব্ল্যাকউডের ব্যাটে জিতল ক্রিকেটই
একসময়ে ১০ ও ১৬ নম্বর সবুজ-মেরুন জার্সি পরে উইংয়ে গতির ঝড় তুলতেন। উইং ধরে দৌড়তে দৌড়তেই ভিতরে ঢুকে এসে বিপক্ষের জালে বল জড়াতেন। সেই ১০ ও ১৬ নম্বর জার্সি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তাঁর কাছে। বাগানের সুখস্মৃতি, ভক্তদের ভালবাসা আর সবুজ-মেরুন জার্সি পড়ন্ত বিকেলে সনিকে ফিরিয়ে দেয় মোহনবাগানের দিনগুলোয়।