ম্যাচের শেষে বিরাট কোহালির জন্য দুঃখ হচ্ছিল। জ্বর হওয়ার জন্য কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে এবি ডিভিলিয়ার্স খেলতে পারেননি। কোহালি ব্যাটিংকে টানলেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ফিল্ডাররা একের পর এক ক্যাচ ফেললেন, কোহালি দুরন্ত ক্যাচ নিয়ে দীনেশ কার্তিককে ফেরালেন। যাকে আইপিএলের সেরা ক্যাচ বলাই যায়। কিন্তু আরসিবি অধিনায়ক একা কত টানবেন? একটা ক্যাচ ধরলেই যে ম্যাচ জেতা যায় না, সেটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বুঝিয়ে দিচ্ছে। বাকি ফিল্ডারদেরও তো এগিয়ে আসতে হবে।
আরসিবির ১৭৫ রান পাঁচ বল বাকি থাকতে, চার উইকেট হারিয়ে তুলে নিল কেকেআর। কোহালির পাল্টা জবাব দিলেন ক্রিস লিন, কার্তিকরা। লিন ৬২ রানে অপরাজিত থাকলেন। কার্তিক শেষ দিকে ১০ বলে ২৩ রান করলেন, মারলেন দু’টো চার, একটা ছয়। লিন ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার হলেও কার্তিকের কথা আলাদা ভাবে বলতেই হবে। শ্রীলঙ্কায় ভারতকে জেতানোর পর থেকেই ফিনিশার হিসেবে দারুণ উন্নতি করেছেন। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে। পরের দিকে নামছেন বলে বড় রান করার হয়তো তেমন সুযোগ পাচ্ছেন না। কিন্তু ধারাবাহিকতা এবং স্ট্রাইক রেট খুবই ভাল কার্তিকের। যেটা এখনও পর্যন্ত কেকেআরের বড় অস্ত্র।
আরসিবির ইনিংসটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও একটা শট চোখের সামনে ভাসছিল। ১২ নম্বর ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে মারা কোহালির কভার ড্রাইভ। অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়া বলটা সামনে ঝুঁকে, ফ্রন্টফুটে শরীরের ভারসাম্য নিয়ে গিয়ে ব্যাটটা বুলিয়ে দিলেন কোহালি। বলটা কুড়িয়ে আনা ছাড়া ফিল্ডারের কিছু করার ছিল না।
টি-টোয়েন্টিতে কোহালিকে হয়তো বিধ্বংসী ক্রিকেটার বলা যাবে না। কোহালি হয়তো ক্রিস গেল বা ডিভিলিয়ার্সের মতো অত আগ্রাসী ব্যাটিং করেন না। কিন্তু যখন ব্যাট করেন, তখন মুগ্ধ হয়ে দেখতে হয়। আরসিবি অধিনায়ক ৪৪ বলে অপরাজিত ৬৮ করলেন। পাঁচটা চার, তিনটে ছয় মারলেন। কিন্তু যে কভার ড্রাইভে ওই চারটে রান এল, সেটা ভুলতে পারছি না।
অধিনায়ক কোহালি ভাল খেললেও আরসিবি বোলাররা চাপটা রাখতে পারছেন না বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ওপর। কেকেআরের বিরুদ্ধে ম্যাচেও তাই ঘটতে দেখলাম। ওপেন নেমে সুনীল নারাইন (১৯ বলে ২৭) মারতে থাকলেন। লিনও রান পেলেন। উথাপ্পা অবশ্য শুরুটা ভাল করে আউট হয়ে গেলেন। আরসিবিকে ডুবিয়ে দিল ফিল্ডিংও। লিন যখন সাত রানে, সহজ ক্যাচ ছাড়লেন মুরুগান অশ্বিন। পরে অশ্বিন দু’টো উইকেট পেলেও ওই ক্যাচ ফেলার মাশুল দিতে হল। চোট পেয়ে বাইরে থাকার পরে আইপিএলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে লিনের। যত ম্যাচ খেলছেন, তত সাবলীল দেখাচ্ছে। রবিবারও যেমন দেখা গেল। এই ম্যাচ জিতে কেকেআর আবার প্লে-অফে ওঠার দৌড়ে ভালমতো চলে এল। যে কথা একেবারেই বলা যাবে না আরসিবি সম্পর্কে। কোহালির দল ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এ বারের আইপিএল থেকে।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের পিচটা একটু মন্থর লাগল অন্যান্য ম্যাচের তুলনায়। সেটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক। চিন্নাস্বামীর পিচ লাল মাটির। মে মাসের মুখে এসে যে পিচের মন্থর হয়ে যাওয়া তাই প্রত্যাশিত। কিন্তু সেই পিচেই কোহালির টাইমিং অবাক হয়ে দেখতে হয়। পরের দিকে কার্তিকের ব্যাটিংয়েও সেই টাইমিংয়ের ছাপ দেখলাম।
কেকেআর ফর্মুলা অনুযায়ীই খেলল। জোড়া স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু করে। পীযূষ চাওলা এবং নারাইন। চাওলার শুরুটা ভালই হয়েছিল। তবে স্পিনাররা নন, আরসিবি-কে শুরুতে বড় ধাক্কা দিয়ে গেলেন রাসেল। রবিবার ছিল ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডারের জন্মদিন। রাসেলকে সতীর্থরা কে কী উপহার দেবেন জানি না, কিন্তু দলকে আগেই উপহার দিলেন তিনি। একেবারে জোড়া উপহার। প্রথম ওভার বল করতে এসেই তুলে নিলেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম এবং মনন ভোরাকে। পরে দ্বিতীয় স্পেলে এসে মনদীপ সিংহকে।
তবে কেকেআরের আর একটা কৌশল আমাকে অবাক করল। মিচেল জনসনকে খেলানো এবং শেষ ওভার বল করতে আনা। এটা খুব স্পষ্ট, জনসন আগের ছায়া মাত্র। ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতে পারছেন না। তিন ওভারে ৩৮ রান দেওয়ার মধ্যেই সেটা স্পষ্ট।
স্কোরকার্ড
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ১৭৫-৪ (২০)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৭৬-৪ (১৯.১)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স রান বল
ডি’কক ক গিল বো কুলদীপ ২৯ - ২৭
ম্যাকালাম ক কার্তিক বো রাসেল ৩৮ - ২৮
বিরাট কোহালি ন.আ. ৬৮ - ৪৪
মনন ভোরা বো রাসেল ০ - ১
মণদীপ সিংহ ক মাভি বো রাসেল ১৯ - ১৪
কলিন ডি’গ্র্যান্ডহোম ন.আ. ১১ - ৬
অতিরিক্ত ১০
মোট ১৭৫-৪ (২০)
পতন: ৬৭-১ (ডি’কক, ৮.১), ৭৪-২ (ম্যাকালাম, ৯.৫), ৭৫-৩ (ভোরা, ৯.৬), ১৪০-৪ (মণদীপ, ১৭.৩)।
বোলিং: পীযূষ চাওলা ৩-০-২২-০, সুনীল নারাইন ৪-০-৩৮-০, মিচেল জনসন ৩-০-৩৮-০, শিবম মাভি ৩-০-২১-০, কুলদীপ যাদব ৪-০-২০-১, আন্দ্রে রাসেল ৩-০-৩১-৩।
কলকাতা নাইট রাইডার্স রান বল
ক্রিস লিন ন.আ. ৬২ - ৫২
নারাইন ক গ্র্যান্ডহোম বো মুরুগন ২৭ - ১৯
উথাপ্পা ক সাউদি বো মুরুগন ৩৬ - ২১
নীতীশ রানা (আহত ও অবসৃত) ১৫ - ১০
রাসেল ক ডি’কক বো সিরাজ ০ - ১
কার্তিক ক কোহালি বো সিরাজ ২৩ - ১০
শুভমান গিল ন.আ. ৫ - ২
অতিরিক্ত ৮
মোট ১৭৬-৪ (১৯.১)
পতন: ৫৯-১ (নারাইন, ৭.১), ১০৮-২ (উথাপ্পা, ১২.২), ১৩৯-৩ (রাসেল, ১৬.৩), ১৭১-৪ (কার্তিক, ১৮.৫)।
বোলিং: টিম সাউদি ৪-০-৩৪-০, উমেশ যাদব ৩.১-০-৩৬-০, যুজবেন্দ্র চহাল ৪-০-২৯-০, মহম্মদ সিরাজ ৪-০-৪০-২, মুরুগন অশ্বিন ৪-০-৩৬-২।
ম্যাচের সেরা ক্রিস লিন
ছয় উইকেটে জয়ী কলকাতা