সিমোনে বাইলস ছবি রয়টার্স।
এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত!
অলিম্পিক্সে চারটি সোনা-সহ ছ’টি পদক। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও ১৯টি সোনা-সহ ২৫টি পদক রয়েছে মার্কিন জিমন্যাস্ট সিমোনে বাইলসের ঝুলিতে। এ বার টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সারা বিশ্ব তাকিয়েছিল তাঁর নতুন অস্ত্র ‘ইউরচেঙ্কো ডাবল পাইক’ ভল্ট দেখার জন্য।
কিন্তু মঙ্গলবার টোকিয়োয় তার প্রয়োগ বাইলস করতে পারলেন কোথায়? ‘আমানার’ ভল্ট দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। তার পরে সরে যান দলগত ইভেন্ট থেকে। অলরাউন্ড বিভাগ থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
দুনিয়া জুড়ে প্রশ্ন কেন এই সিদ্ধান্ত? খেলোয়াড় থেকে মনোবিদ—সকলেই একমত, মানসিক অবসাদের কাছেই হার মেনেছেন এই কিংবদন্তি জিমন্যাস্ট। বাইলস নিজেও তা জানিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠছে, কিংবদন্তি এই জিমন্যাস্ট যেখানে চাপের মুখে কঠিন সব ভল্ট বা এক্সাসাইজ করে অতীতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছেন, তিনি কী ভাবে অবসাদের শিকার হন?
রিয়ো অলিম্পিক্সে জিমন্যাস্টিক্স ফাইনালে এই বাইলসের সঙ্গে লড়েই চতুর্থ হয়েছিলেন ভারতের দীপা কর্মকার। আগরতলা থেকে তিনি ফোনে বললেন, ‘‘মানসিক চাপ একটা বড় কারণ। গত সাত-আট বছর ধরে ও ভল্ট, আনইভন বার, ফ্লোর এক্সাসাইজে অপ্রতিরোধ্য। ওকে ঘিরে রয়েছে গোটা বিশ্বের প্রত্যাশার চাপ।’’ যোগ করেন, ‘‘জিমন্যাস্টদের মনের মধ্যে সব সময়েই চিন্তা থাকে, পিছনে যে রয়েছে সে কোনও ভাবে ছাপিয়ে যেতে পারে কি না। সঙ্গে কঠিন সব ভল্টও নিখুঁত করতে হবে! আশঙ্কা ও মানসিক চাপেই হয়ত এই পরিস্থিতি।’’ প্রশ্ন করা হয়, ‘প্রোদুনোভা’-র মতো বিপজ্জনক ভল্ট দেওয়ার সময়ে আপনার আশঙ্কা হয়নি? ত্রিপুরার মেয়ে বলেন, ‘‘প্রথমে ভয় লাগলেও তা অতিক্রম করেই প্রোদুনোভা দিয়েছি। কিন্তু আমার চেয়েও বেশি চাপ বাইলসের।’’
দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর কথায়, ‘‘কঠিন সব ভল্ট বছরের পর বছর দিয়ে চলেছে বাইলস। বয়সটা তো বেড়েছে। দক্ষতা আগের চেয়েও বাড়াতে হবে। সারা বিশ্বের নজরে। শীর্ষে থাকার চাপ। এটা সামলানো কঠিন।’’
বাঙালি মনোবিদ ডা. রঞ্জন ঘোষ মার্কিন মুলুকে কিংবদন্তি বাস্কেটবল তারকা কোবি ব্রায়ান্টের মানসিক অবসাদের চিকিৎসা করেছেন। তিনি বললেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে ওর ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয়েছে। প্রত্যাশার চাপ তো আছেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক কালে কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে বর্বরোচিত আক্রমণ সংক্রান্ত বেশ কিছু লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে। সেগুলোও মনে প্রভাব ফেলতে পারে।’’
জুনিয়র বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় হকি দল ও জাতীয় টেবল টেনিস, তিরন্দাজ, অ্যাথলেটিক্স দলের সঙ্গে কাজ করেছেন মেন্টাল টাফনেস কোচ মৃণাল চক্রবর্তী। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাশে কেউ না থাকলে অনেক খেলোয়াড়ই কিন্তু মানসিক চাপে ছন্দ হারায়। সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে।’’ যোগ করেন, ‘‘ইঞ্চিয়ন এশিয়ান গেমসে স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দেখে ভারতের এক অ্যাথলিট কাঁদছিলেন। বলেন, আমার হাত-পা নড়ছে না।’’ মৃণাল বলে চলেন, ‘‘উত্তেজনা বা প্রত্যাশার চাপে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে পেশি ও স্নায়ুর সেতুবন্ধন সাময়িক ব্যাহত হয়। তখন শ্বাসপ্রশ্বাস বাড়ে। মস্তিষ্কে স্বাভাবিক ভাবে অক্সিজেন যায় না। তখন হঠাৎ ভয় বা মানসিক চাপ তৈরি হয়। মহড়ায় যা অনায়াসে করা গিয়েছে, প্রতিযোগিতার মঞ্চে তা করা যায় না। বাইলসের ক্ষেত্রে এ রকম ঘটাও অস্বাভাবিক নয়।’’