জুটি: প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকারের সঙ্গে মেহুলি ঘোষ। নিজস্ব চিত্র
কমনওয়েলথ গেমসের জন্য আইএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাতে আফসোস নেই। আফসোস রয়েছে আক্ষরিক অর্থে এক চুলের জন্য শুটিংয়ে সোনা না পাওয়ায়। সেই আক্ষেপ দূর করতে একটা স্বপ্নের জন্য নিজেকে তৈরি করে চলেছে বাংলার মেহুলি ঘোষ। সতেরো বছরের মেয়েটি চায়, অলিম্পিক্সে ভারতের পতাকা তুলে ধরতে।
বুধবার অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট থেকে দেশে ফিরেছে মেহুলি। তবে বাড়ি ফিরছে না এখনই। দিল্লি থেকে সরাসরি চলে যাবে দক্ষিণ কোরিয়ায়, বিশ্বকাপ শুটিংয়ে অংশ নিতে। তার আগে ফোনে কথা বলার সময় পরিষ্কার করে দিচ্ছিল নিজের লক্ষ্য, ‘‘২০২০ অলিম্পিক্সের কথা ভেবে তৈরি হচ্ছি। অলিম্পিক্সে নামা আমার স্বপ্ন,’’ দেশে ফিরে দিল্লি থেকে ফোনে বলছিল মেহুলি। পাশাপাশি আরও একটা লক্ষ্যের কথা শোনা গেল, ‘‘আমার বিশ্ব র্যাঙ্কিং এখন ছয়। আমি এক নম্বরে পৌঁছতে চাই।’’
বছর তিনেক ধরে বাংলার অন্যতম সেরা শুটার এবং অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকারের অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করছে মেহুলি। যার জন্য বৈদ্যবাটী থেকে নিয়মিত সল্টলেকে আসতে হয়েছে। রোজ দু’ঘণ্টার ওপর ট্রেন-বাসের ধকল সামলে। একটা ১৪-১৫ বছরের মেয়ের কাছে কতটা কঠিন ছিল এই রুটিন? মেহুলি বলছিল, ‘‘খুবই কষ্ট হত একটা সময়। আমাদের ওই ট্রেন লাইনে প্রচণ্ড ভিড় হয়। মনে হত, পারব তো? তার পর নিজেকে বোঝালাম, কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হবে। শুটিংকে আমি এত ভালবাসি, তার জন্য যে কোনও কষ্ট স্বীকার করতে রাজি ছিলাম।’’
অথচ যখন প্রথমে শুটিংয়ে আসে মেহুলি, স্থানীয় প্রশিক্ষকের কাছে শুনতে হয়েছিল, এই মেয়েটার কিছু হবে না। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘বছর তিনেক আগে মেহুলি যখন প্রথম আমার কাছে আসে, বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল। ওকে বলা হয়েছিল, শুটিংয়ে তুমি কিছু করতে পারবে না। সে অবস্থা থেকে ওকে আস্তে আস্তে বার করে আনি।’’ মেহুলিও বলছিল, ‘‘আমার কাছে ওটাই সব চেয়ে কঠিন সময় ছিল। ২০১৫ সালে আমি যখন জয়দীপ স্যরের অ্যাকাডেমিতে আসি, তখন খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। একটা সময় মনে হত, শুটিংয়ে কিছু করতে পারব না। শুটিং ছেড়েই দেব। সেখান থেকে জয়দীপ স্যর, বিভাসন স্যর (বিভাসন গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি অ্যাকাডেমির অন্যতম কোচ) আমাকে ফিরিয়ে আনেন ঠিক রাস্তায়।’’
যে রাস্তা মেহুলিকে ধীরে ধীরে নিয়ে যাচ্ছে সাফল্যের শিখরে। এসেছে সিনিয়র বিশ্বকাপে ব্রোঞ্জ, কমনওয়েলথ গেমসে রুপো। এখন পর্যন্ত সেরা সাফল্য কী? মেহুলির মন্তব্য, ‘‘সব পদকই আমার কাছে সমান। কারণ সব কিছুর জন্যই সমান পরিশ্রম করতে হয়। সিনিয়র বিশ্বকাপে নেমে পদক জিতলাম। প্রথম কমনওয়েলথ গেমসেই রুপো। সবই আমার কাছে অমূল্য।’’
কমনওয়েলথ গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে আক্ষরিক অর্থে এক চুলের জন্য সোনা আসেনি। শুট আউটে প্রতিপক্ষ যেখানে ১০.৩ পয়েন্ট তোলে, সেখানে মেহুলির স্কোর ৯.৯। অথচ তার ঠিক আগেই ১০.৯ স্কোর করেছিল মেহুলি। শুট আউটে কী সমস্যা হয়েছিল? ‘‘আমি আমার জায়গা ছেড়ে সরে গিয়েছিলাম। সাধারণত লক্ষ্য স্থির করতে তিন থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ওখানেই আমি সমস্যা পড়ে যাই। কিন্তু আমি যে লড়াই করতে পেরেছিলাম, তাতেই খুশি। তবে সন্তুষ্ট নই।’’
শুটিং শুরু করার সময় মেহুলির আদর্শ ছিল অভিনব বিন্দ্রা। যে বিন্দ্রা অলিম্পিক্স থেকে ভারতের প্রথম ব্যক্তিগত সোনা জিতেছিলেন। সেই আদর্শকে সামনে রেখেই কিন্তু নিজেকে তৈরি করছে মেহুলি।