India Vs West Indies

আজহার, সৌরভদের ছুঁয়ে ফেললেন যশস্বী, অভিষেক টেস্টে শতরান তরুণ ওপেনারের

রঞ্জি ট্রফি এবং আইপিএলে ভাল খেলার পর ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম সুযোগই কাজে লাগালেন যশস্বী জয়সওয়াল। অভিষেক ম্যাচের টুপি পেয়েছিলেন রোহিত শর্মার হাত থেকে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ ২৩:২১
Share:

যশস্বী জয়সওয়াল। ছবি: পিটিআই।

অভিষেক টেস্টেই শতরান করলেন যশস্বী জয়সওয়াল। ভারতীয় দলে তাঁকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তা বুঝিয়ে দিলেন ২১ বছরের তরুণ ওপেনার। রঞ্জি ট্রফি এবং আইপিএলে ভাল খেলার পর ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। প্রথম সুযোগই কাজে লাগালেন তিনি। অভিষেক ম্যাচের টুপি পেয়েছিলেন রোহিত শর্মার হাত থেকে। তাঁর সঙ্গে জুটি গড়েই শতরান করলেন যশস্বী। রোহিতও অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রথম ইনিংসের রানও (১৫০) টপকে গিয়েছে ভারত।

Advertisement

যশস্বী ১৭তম ভারতীয় ব্যাটার যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন। ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম এই কীর্তি গড়েছিলেন লালা অমরনাথ। ১৯৩৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের প্রথম ম্যাচে শতরান করেছিলেন। এর পর একাধিক ক্রিকেটার নিজের প্রথম টেস্টে শতরান করেছেন। তাঁদের মধ্যে গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সহবাগ, সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ানেরা রয়েছেন। ২০২১ সালে অভিষেক হয় শ্রেয়স আয়ারের। তিনিই শেষ ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন। তার আগে ২০১৮ সালে পৃথ্বী শ অভিষেক টেস্টে শতরান করেছিলেন।

এ বারের আইপিএলে শতরান করেছিলেন যশস্বী। ১৪ ম্যাচে ৬২৫ রান করেছিলেন। রঞ্জি ট্রফিতেও ধারাবাহিক ভাবে রান করছিলেন। তাই তরুণ ওপেনারের সুযোগ পাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। ক্যারিবিয়ান সফরে ডাক পাওয়ার পর তাই প্রথম স্বপ্নপূরণ হয়ে গিয়েছিল। সে দিন ফোনটা পেয়ে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সত্যিই তিনি ভারতীয় দলে সুযোগ পেলেন! এ এক স্বপ্নপূরণ। যে স্বপ্ন দেখে একটা পরিবার উত্তরপ্রদেশ ছেড়ে মুম্বই চলে এসেছিল। সেই স্বপ্ন সত্যি হল। যশস্বী জয়সওয়াল ভারতের টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছেন। যে খবর শুনে কেঁদেই ফেলেছিলেন তাঁর বাবা। এত দিনের সব কষ্ট এখন আনন্দ হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। বৃহস্পতিবার সেই আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে ছেলের শতরান দেখার পর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মাটিতে যশস্বীই প্রথম ভারতীয় যিনি অভিষেক টেস্টে শতরান করলেন।

Advertisement

গত মরসুমে একের পর এক ম্যাচে খারাপ খেলার কারণে দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন। এই মুহূর্তে তিনি এতটাই ভাল ছন্দে, যে দল থেকে বাদ দেওয়ার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারছেন না। কয়েক মাসের ব্যবধানে যশস্বীর জীবনটা বদলে গিয়েছে এ ভাবেই। তবে সেই পরিবর্তন এক দিনে আসেনি। এর পিছনে জড়িয়ে রয়েছে কঠোর পরিশ্রমও।

মুম্বই থেকে তালেগাঁওয়ে গিয়ে অনুশীলন করার কাহিনি জানা গিয়েছে আগেই। কী ভাবে সেখানে অনুশীলন করতেন যশস্বী তা-ও জানা গিয়েছে। ঘরোয়া মরসুমের শেষে গত বছর মুম্বই থেকে নাগপুরের তালেগাঁওয়ে রাজস্থান রয়্যালসের ডিরেক্টর জুবিন ভারুচার অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতে যান যশস্বী। সেখানে গিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ডুবিয়ে দেন নিজেকে।

প্রতি দিন সেই অ্যাকাডেমিতে পাঁচশোটি থ্রোডাউন নিতেন যশস্বী। সিমেন্টের পিচে অনুশীলন করতেন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বলে। বেশ কয়েক বার আঘাতও খেয়েছেন শরীরে। এ ছাড়া লাল মাটি এবং কালো মাটির পিচে আলাদা করে অনুশীলন করেন। অফসাইডে শট খেলতে যশস্বীর কিছুটা দুর্বলতা ছিল। সেটা কাটিয়ে ওঠেন নাগাড়ে অনুশীলন করে। এ ছাড়া নিজের পায়ের আরও ব্যবহার, সুইপ মারা এবং সুইচ হিটে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। এখন পিচের যে কোনও জায়গায় বল ফেললে তা মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন তিনি।

শুনেছিলেন আর একজনের পরামর্শ। তিনি সূর্যকুমার যাদব। আইপিএলে একটি ম্যাচের পর সূর্য তাঁকে বলেছিলেন, “নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করতে থাকো। মাঠে গিয়ে শুধু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করো। ক্রিকেট শুধু মাত্র মস্তিষ্কের খেলা।”

একই সঙ্গে বড়দের উপদেশ তো রয়েছেই। যশস্বী বলেছিলেন, “ক্রিকেটীয় পরিবেশের মধ্যে থাকতে ভালবাসি। আমার চারপাশে অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার রয়েছে। সুযোগ পেলেই এমএস ভাই, বিরাট ভাই, রোহিত ভাই, জস ভাই, সঞ্জু ভাইদের সঙ্গে কথা বলি। জেনে নিই কী ভাবে নিজেকে শান্ত রাখা যায়। কী ভাবে ভাবনাচিন্তায় বদল আনা যায়। সব সময় কিছু শেখার চেষ্টা করে খেলায় উন্নতি করার চেষ্টা করি।” শুধু খেলা নয়, তাঁর শেখার চেষ্টা থাকে সব কাজেই। ক্রিকেট ছাড়াও আরও একটি বিষয়ে উন্নতি হয়েছে তাঁর। তা হল ইংরেজিতে কথা বলা। যশস্বীর সাফ কথা, “দলের সবাই ইংরেজিতে কথা বলে। আমি পিছিয়ে থাকি কী করে?” এই জেদই যশস্বীকে বাকিদের থেকে ছাপিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement