কোহলির সঙ্গে উল্লাস আরশদীপের। ছবি পিটিআই
এশিয়া কাপের পর এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ‘সর্দারজির খেল’। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে আরশদীপ সিংহের জোড়া উইকেটের দাপটে শুরুতেই বেকায়দায় পড়ে গেল পাকিস্তান। ভারতের একটু হলেও ভয় ছিল পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে নিয়ে। বাবর আজ়ম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান নিজের দিনে যে কোনও প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা রাখেন। সেটা ভারতের থেকে কে আর ভাল জানে! গত বছর এই জুটিই ভারতকে ১০ উইকেটে লজ্জাজনক হার উপহার দিয়েছিল। এ বার আর তা হল না। পর পর দু’ওভারে দুই ওপেনারকে পকেটে পুরে নিলেন আরশদীপ। এশিয়া কাপে ক্যাচ ফেলার পর খলনায়ক হয়েছিলেন। সেই অধ্যায় পেরিয়ে এসেছেন আরশদীপ। রবিবার তাঁর নামের পাশে চার ওভারে ৩২ রানে তিন উইকেট।
রবিবার প্রথম বলেই তুলে নেন বাবরকে। আরশদীপের গুড লেংথ বলে পিচে পড়েই ইনসুইং করে। বাবর বুঝতেই পারেননি। পুরোপুরি বোকা বনে যান। বল তাঁর প্যাডে গিয়ে লাগে। আরশদীপ কাতর স্বরে আউটের আবেদন করলে আম্পায়ার মারাইস ইরাসমাস আঙুল তুলে দেন। বাবর ডিআরএস নিলেও বুঝে গিয়েছিলেন লাভ হবে না। প্রথম বলেই তাঁকে ফিরে যেতে হল সাজঘরে।
চতুর্থ ওভারের শেষ বলে রিজ়ওয়ানকে তুলে নিলেন আরশদীপ। তাঁর শর্ট বল পুল করেছিলেন পাকিস্তানের উইকেটকিপার। বলে-ব্যাটে একেবারেই ঠিক মতো হয়নি। ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ধরেন ভুবনেশ্বর কুমার। সম্প্রতি রিজ়ওয়ান ভাল ছন্দে ছিলেন। তাঁকে শুরুতে তুলে নেওয়া পাকিস্তানকে বিপদে ফেলে দেয়। দ্বিতীয় স্পেলে এসে তৃতীয় উইকেট নেন আরশদীপ। চতুর্থ বল এমন ভাবে বাউন্স হয়, যা বুঝতেই পারেননি আসিফ আলি। বল তাঁর গ্লাভসে লেগে উইকেটকিপার দীনেশ কার্তিকের হাতে জমা পড়ে।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্যাচ ফস্কে ‘খলনায়ক’ হয়েছিলেন আরশদীপ। রাতারাতি ভারতীয় সমর্থকদের একটা বড় অংশ ভারতের হারের জন্য দায়ী করেছিলেন তাঁকে। প্রকাশ্যে জুটেছিল ‘গদ্দার’ তকমা। তার ঠিক ২৪ দিন পরে ভারতীয় সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচে প্রথম ওভারেই তিন উইকেট নেন। ধরেন একটি দুর্দান্ত ক্যাচ।
পাকিস্তান ম্যাচে ওই ক্যাচ ফেলার পর আরশদীপকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সমাজমাধ্যমে লাগাতার সমালোচনা করা হয় তাঁর। জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়ায় আরশদীপের পেজের বিবরণ বদলে তাঁকে ‘খলিস্তানি’ হিসাবে অভিহিত করা হয়। অবশ্য যত সমালোচনা বেড়েছে তত সমর্থন পেয়েছেন ভারতীয় বোলার। ইরফান পাঠান, হরভজন সিংহ, সুনীল গাওস্করের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটাররা মুখ খোলেন। ২৩ বছরের আরশদীপ সমর্থন পান সীমান্তের ওপার থেকেও।
আরশদীপের বাবা দর্শন সিংহ ও মা বলজিৎ কৌর ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে জানান, তাঁরা কোনও সমালোচনা কানে নিচ্ছেন না। দর্শন বলেন, “আরশদীপ আমাকে বলেছে, ও সব দেখেশুনে হাসছে। এই সমালোচনা থেকে ও মনে আরও জোর পাচ্ছে। ওর আত্মবিশ্বাস আরও বাড়ছে।” ভারতীয় বোলারের মা বলেছেন, “যদি সমালোচনা না হয় তা হলে জীবনে উন্নতি করা যাবে না। মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছু বলে ফেলে। তাতে আরশদীপের কোনও সমস্যা হবে না। ও জানে ওকে কী ভাবে খেলতে হবে।”