আইপিএলের দিকেই তাকিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব। ফাইল ছবি।
শুধু ক্রিকেটাররা নন, বিভিন্ন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছেও আইপিএল, বিগ ব্যাশের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলি অনেকটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করে দেওয়ার মধ্যে সেই ছবিটাই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মাধ্যমে দেশের ক্রিকেট অর্থনীতি বাঁচাতেই দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সফরে না গেলেও চলবে। এর ফলে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগকেও ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে গিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কর্তারা। এর মধ্যে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড। সেটি হল, বিরাট কোহলী-রোহিত শর্মাদের বিরুদ্ধে না খেললে আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।
আগামী জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ খেলার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। তেম্বা বাভুমা-সহ দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা সেই সিরিজে খেলতেই চেয়েছিলেন। কিন্তু বোর্ড কর্তারাই ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোচ মার্ক বাউচার এবং সাদা বলের ক্রিকেটের অধিনায়ক বাভুমা-সহ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বোর্ড কর্তারা।
ক্রিকেট অর্থনীতির স্বাস্থ্য ফেরাতে আইপিএলের আদলে টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা শুরু করছে ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা। আগামী জানুয়ারিতে হবে প্রথম বারের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার নাম এবং আকর্ষণ বজায় রাখতে প্রোটিয়া ক্রিকেট কর্তারা চান দেশের সেরা সব ক্রিকেটার অংশ নিক। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলুন তাঁরা। ক্রিকেট কর্তাদের দাবি, প্লে-অফ পর্ব খেলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেওয়া কঠিন হবে না। কিন্তু টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা প্রথম বছরেই বিবর্ণ হয়ে গেলে সেই চাপ সামলানো অসম্ভব হবে। বোর্ডের কোষাগারের অবস্থা আরও বেহাল হবে।
বোর্ডের এক কর্তা লসন নাইডু বলেছেন, ‘‘টি-টোয়েন্টি লিগকেই আমরা এই মুহূর্তে সবথেকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আইপিএলের পরে এটা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লিগ হতে চলেছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতিযোগিতা আয়োজনের সব কিছুই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। যাঁরা ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েছেন তাঁরা দেশের সেরা ক্রিকেটারদের দলে পেতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।’’ নাইডু অন্য দেশের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘‘এখন সব দেশই টাকার জন্য নিজেদের টি-টোয়েন্টি লিগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আইপিএল হোক বা বিগ ব্যাশ— এই প্রতিযোগিতাগুলির সঙ্গে সমঝোতা করে না কোনও দেশের বোর্ডই। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ সবাই সেটাই করছে। ইংল্যান্ডে ১০০ বলের ক্রিকেট হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও ২০ ওভারের লিগ করছে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের দাবি, একমাত্র ভারতের সঙ্গে সিরিজ হলেই তারা লাভের মুখ দেখে। অন্য দেশের সঙ্গে সিরিজ হলে খরচও ওঠে না। এমন চলতে থাকলে দেশের ক্রিকেট সঙ্কটের মধ্যে প়ড়বে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোর্ডের সিইও ফোলেতসি মোসেকি বলেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এক দিনের সিরিজ বাতিল হওয়ায় ক্রিকেটাররা খুবই হতাশ। ওরা অবশ্য সিরিজ বাতিল হওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছে। নতুন টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতায় বহু মানুষ প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। এই প্রতিযোগিতা যাতে সফল হয়, তার জন্য আমাদের সব রকম ব্যবস্থা করতেই হবে।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমরা ৪৫ মিনিট বৈঠক করেছি। সেখানে টেস্ট অধিনায়ক ডিন এলগারও ছিল। ওরা সিরিজ না হওয়ায় অখুশি হলেও দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে।’’
অস্ট্রেলিয়া অন্য সময় এক দিনের সিরিজ খেলতে না চাওয়ায় কিছুটা বিরক্ত নাইডু। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা একাধিক বিকল্প সময়ের কথা বলেছিলাম। কিন্তু ওরা রাজি হয়নি। এক দিনের ক্রিকেটে পয়েন্ট টেবিলের যা অবস্থা, তাতে আমাদের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন কঠিন হতে পারে। সরাসরি খেলতে পারলে অবশ্যই ভাল হত। যোগ্যতা অর্জন পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হলেও আমাদের আপত্তি নেই। আমরা সেটাই করব। ক্রিকেটাররাও জানে ওদের ক্রিকেটজীবনে বিশ্বকাপের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।’’
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা শুরু করলেও সফল হয়নি। সম্প্রচার, স্পনসর ঠিক মতো না পাওয়ায় ২০১৯ সালেই সেই প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দিতে হয়। তাই এ বার সব দিক বিবেচনা করে এবং সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে তারা। ক্রিকেটারদের নিলামের জন্য একটি বিখ্যাত সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।