অ্যাশেজ আধার। —ফাইল চিত্র।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ়ে এক মাত্র ভারতীয় ধারাভাষ্যকার দীনেশ কার্তিক। রবিবার খেলার শেষে সুযোগ বুঝে তিনি সামান্য খোঁচা দেন দুই সহ-ধারাভাষ্যকার অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং এবং মার্ক টেলরকে। তাঁরাও পাল্টা জবাব দেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটারকে।
রবিবার খেলার শেষে অপরাজিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার উসমান খোয়াজা (৬৯) এবং ডেভিড ওয়ার্নার (৫৮)। অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১৩৫। সে সময় কার্তিক দুই অস্ট্রেলীয় ধারাভাষ্যকারকে মনে করিয়ে দেন কয়েক বছর আগের অ্যাশেজ সিরিজ়ের একটি ম্যাচের কথা। কার্তিক বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার দুই ধারাভাষ্যকার খুশি হতেই পারে। কারণ অস্ট্রেলিয়া বেশ ভাল খেলছে। তবে একটা চিন্তার ব্যাপারও আছে। কয়েক বছর আগে একটা ঘটনা ঘটেছিল। পন্টিং এবং মাইকেল হাসি ১২৭ রানের জুটি গড়েছিল। তার পর যা হয়েছিল, সেটার ব্যাখ্যা সব থেকে ভাল পন্টিং দিতে পারবে। ওরা সেই টেস্ট এবং অ্যাশেজ হেরেছিল।’’
কার্তিকের এই খোঁচা হজম করতে পারেননি দুই প্রাক্তন অধিনায়ক পন্টিং এবং টেলর। কার্তিককে টেলর বলেন, ‘‘বেশ ভালই করছ। তুমি দেখছি রাতারাতি ইংরেজ হয়ে গিয়েছ। তাই না?’’ কার্তিকের কথায় খুশি হননি পন্টিংও। তিনি বলেন, ‘‘তুমি কি আগামী বছরের চুক্তি এখনই নিশ্চিত করতে চাইছ? পরের বছরও তুমি স্কাই স্পোর্টসের হয়ে ধারাভাষ্য দিতে চাও, তাই তো। খুব ভাল কাজ হচ্ছে ডিকে।’’
অস্ট্রেলিয়ার দুই অধিনায়ক আসলে অ্যাশেজ হারের খোঁচা মেনে নিতে পারেননি। কারণ, অ্যাশেজ আর পাঁচটা টেস্ট সিরিজ়ের থেকে অনেক আলাদা। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দু’দেশের জাত্যাভিমান, আবেগ। অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ১-০ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ অগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।