দুরন্ত: চার উইকেট অশ্বিনের। অভিনন্দন মায়াঙ্কের। ছবি পিটিআই।
টেস্টের একটা দিনে এতটা উত্থান-পতন আগে কখনও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছি না।
অবিশ্বাস্য ভাবে ইনিংসে ১০ উইকেট পেয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিল নিউজ়িল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার অজাজ় পটেল। সেই ইংল্যান্ডের জিম লেকার আর ভারতের অনিল কুম্বলের পরে। তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আবার ভেঙে পড়ল নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটিং। যারা কানপুর টেস্টে ওরকম লড়াই করেছিল, তারা অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করে শেষ হয়ে গেল মাত্র ৬২ রানে! যা ভারতের বিরুদ্ধে নিউজ়িল্যান্ডের সর্বনিম্ন টেস্ট রান।
কোনও সন্দেহ নেই, ওয়াংখেড়ের পিচ স্পিনারদের ভাল মতো সাহায্য করছে। উইকেটে বাউন্স আছে, বল দ্রুত যাচ্ছে। যে কারণে ব্যাটারদের পক্ষে তা সামলানো সহজ হচ্ছে না। কিন্তু তা বলে অজাজ় পটেল একাই ১০ উইকেট নিয়ে নেবে বা নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিং ৬২ রানে ভেঙে পড়বে, এ রকম পিচ নয় ওয়াংখেড়েতে।
নিউজ়িল্যান্ডের সমস্যা হল, ওদের বোলিং আক্রমণ এক-দু’জনের উপরে বড্ড বেশি নির্ভরশীল। যে কারণে অজাজ় যখন এক দিক থেকে উইকেট তুলছে, অন্য দিকের বোলাররা রানটা পর্যন্ত আটকাতে পারছে না। বিশেষ করে স্পিনাররা। কানপুরে সে ভাবে দেখিনি, কিন্তু মুম্বইয়ে দেখলাম অজাজ় খুব ভাল নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে গেল। মারার জায়গা দেয়নি ব্যাটারদের। ক্রমাগত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। মুম্বইয়ের ছেলে বলে ওয়াংখেড়ের এই কৃতিত্ব নিশ্চয়ই অজাজ়কে বাড়তি তৃপ্তি দেবে।
কিন্তু অজাজ় এবং নিউজ়িল্যান্ড শিবিরের আনন্দ খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় দিনেই বোঝা যাচ্ছিল, উইকেট থেকে স্পিনাররা সাহায্য পাচ্ছে। তাই জানতাম, নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটারদের কাজটা কঠিন হতে চলেছে। বিশেষ করে যেখানে কেন উইলিয়ামসন খেলছে না। কিন্তু তা বলে এত কম! মহম্মদ সিরাজের আগুন আর অশ্বিনের ঘূর্ণি সামলাতেই পারল না নিউজ়িল্যান্ড।
কানপুর টেস্টের সফল দুই ওপেনারকে শুরুতেই ফিরিয়ে শনিবার আসল ধাক্কাটা সিরাজই দিল। বার বার বলেছি, ইশান্ত শর্মার জায়গায় সিরাজকে সব সময় খেলানো উচিত। গতি আছে, বলের সিমটাকে খুব ভাল কাজে লাগায়। এ দিন যে বলটায় রস টেলরকে বোল্ড করল, সেটা দিনের সেরা ডেলিভারি। মিডল স্টাম্পে পড়ে দেরিতে সুইং করে, ব্যাটের পাশ দিয়ে গিয়ে অফস্টাম্প ফেলে দিল। হ্যাটট্রিকের সামনেও চলে এসেছিল সিরাজ। কিন্তু হেনরি নিকোলসকে করা বলটা লেগস্টাম্পের ইঞ্চি খানেক বাইরে পড়ায় এলবিডব্লিউটা পেল না।
এই টেস্টে ভারতের দাপটের নেপথ্যে রয়েছে রিজার্ভ বেঞ্চের শক্তি। ব্যাট হাতে মায়াঙ্ক আগরওয়ালের ১৫০, এর পরে অলরাউন্ডারের ভূমিকায় বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর পটেলের সাফল্য (৫২ ও ২-১৪)। নতুন বলে সিরাজের (৩-১৯) ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা। সবই নতুনদের জয়গান গাইছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে, প্রথম একাদশের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার বাইরে থাকলেও ভারতের শক্তি কমছে না। এর সঙ্গে তো অশ্বিনের অফস্পিন আছেই। বল হাতে নিলেই যেন বুঝিয়ে দেয়, বিশ্বের সেরা স্পিনার ওকেই বলতে হবে। এ দিনও আট রান দিয়ে চার উইকেট তুলে নিল। দ্বিতীয় ইনিংসে এই অশ্বিনকে সামলানোর ক্ষমতা নিউজ়িল্যান্ডের নেই। নিউজ়িল্যান্ডকে ফলো অন করালে তৃতীয় দিনে খেলা শেষ হত। এখন চতুর্থ দিনে গড়াবে।
মায়াঙ্কের ১৬ টেস্টে বারোশোর বেশি রান। চারটে সেঞ্চুরি। একটা ডাবল, আজকে দেড়শো। ইশান্তের জায়গা নেওয়ার জন্য তৈরি সিরাজ। অক্ষরও যে কোনও পরিবেশে দলে ঢুকে যেতে পারে। এসে গিয়েছে শ্রেয়স আয়ার। কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে কিন্তু নবীনদের কথা এ বার ভাবতেই হবে।
ওয়াংখেড়ের পিচে প্রথম ইনিংসে ২৬৩ রানে এগিয়ে যাওয়া মানে ম্যাচ হাতের মুঠোয়। এখনও তিন দিন খেলা বাকি। শুভমন গিল চোট পাওয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে চেতেশ্বর পুজারা ওপেন করেছে। তিন নম্বরে নেমে বিরাট কোহালিও নিশ্চয়ই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে রান পেতে চাইবে। এবং, অবশ্যই চাইবে সিরিজ় জয়। যা মুঠোয় মনে হচ্ছে।