অভিষেকেই ২৫২ রানের ইনিংস। —নিজস্ব চিত্র
অজিঙ্ক রহাণে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায় প্রথম একাদশে সুযোগ। এমনই একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন বিরাট কোহলীর ভক্ত সুভেদ পারকার। রঞ্জিতে প্রথম বার নেমেই আড়াইশো রান। বি.কম. পরীক্ষা দিয়ে রঞ্জি খেলতে নেমে অভিষেকেই ২৫২ রান করলেন ২১ বছরের সুভেদ। ৩-৪ বছরের মধ্যে তাঁকে ভারতীয় দলে দেখতে চান কোচ দীনেশ লাড।
মুম্বইয়ের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসাবে অভিষেকে দ্বিশতরান করলেন বরেলির সুভেদ। তাঁর আগে এই কীর্তি গড়েছিলেন অমল মজুমদার। ঘটনাচক্রে, অমলই এখন মুম্বই দলের কোচ। সুভেদের আগে রঞ্জিতে এগারো জন অভিষেকে দ্বিশতরান করেছেন। আড়াইশো বা তার বেশি রানের কীর্তি রয়েছে তিন জনের। রঞ্জিতে অভিষেক ম্যাচে সব থেকে বেশি রানের তালিকায় সুভেদ চার নম্বরে। ছেলের এই কীর্তিতে খুশি সুভেদের বাবা বিজয় পার্কার। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “ছোট থেকে ক্রিকেট নিয়েই থাকে। অন্য কোনও কিছুতে খুব শখ নেই সুভেদের।”
রঞ্জি খেলতে যাওয়ার আগে সুভেদ ফোন করেছিলেন তাঁর কোচ দীনেশকে। যিনি রোহিত শর্মার কোচও বটে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দীনেশ বললেন, “যাওয়ার আগে আমাকে কথা দিয়েছিল রান করবে। করে দেখাল।” একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী বিজয়। সুদেবের মা মাধুরী জাতীয় স্তরে খো খো খেলেছেন। বাড়িতে এক দিদিও আছে সুদেবের। ক্রিকেট ছাড়া কিছু ভাবতেন না এই ব্যাটার। পড়াশোনাতেও মনযোগী। দ্বাদশ শ্রেণির একটি পরীক্ষার সময় মাত্র এক মাস পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলেন সুদেব। স্নাতকস্তরের অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার পরেই মুম্বইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলতে চলে গিয়েছেন তিনি।
বিজয় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ছেলের এ বারে রঞ্জিতে সুযোগ পাওয়া নিয়ে। সিকে নাইডু ট্রফিতে রান পেয়েছেন। বয়সভিত্তিক সমস্ত খেলায় নিয়মিত রান করেছেন। দীনেশ বললেন, “পাঁচ-ছ’মাস ওর ব্যাটিং দেখার পর বুঝতে পারি এ ছেলের হবে। সুদেবের বাবাকে বলি, পড়াশোনা করুক না করুক ওকে ক্রিকেটটা খেলিয়ে যাবেন।” কোচের কথা রেখেছেন বিজয়। ছেলের খেলায় কখনও বাধা দেননি। তিনি মনে করেন সব বাচ্চার মাঠে নামা উচিত। বাড়িতে বসে থাকলে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে যাবে তারা। তাতে ক্ষতি হবে ছোটদের।
রঞ্জির আগে শেষ চার মাসে আট-ন’টি ম্যাচে সাতটি শতরান করেছিলেন সুদেব। দীনেশ বললেন, “শুধু শতরান নয়, বড় রানের ইনিংস খেলেছিল। ১৯৫, ১৯২, ১৭১, ১৬৪, ১২০ রানের ইনিংস খেলেছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।”
একটা সময় যদিও রান পাচ্ছিলেন না। সেই সময় দীনেশের কাছে গিয়েছিলেন সুদেব। দীনেশ বললেন, “একটা সময় রান পাচ্ছিল না। আমরা বেসিকে ফিরে যাই। প্রতি দিন দু’ঘণ্টা ‘কোন প্র্যাকটিস’ করতাম আমরা। একটা ত্রিভুজের উপর বল রেখে সোজা মারার চেষ্টা করা হয় এই অনুশীলনে। সেটা ও একা একা করে যেত। একাগ্রতা আনে এই অনুশীলন। নিশ্চুপে অনুশীলন করে যেত ও। সব সময় পরিশ্রম করতে তৈরি থাকে সুদেব। কখনও অভিযোগ করেনি ও।”
রঞ্জিতে ২৫২ রানের ইনিংস দেখে আপ্লুত সুদেবের কোচ, বাবা। ধারাবাহিকতা ধরে রাখুক সুদেব, এটাই তাঁদের একমাত্র প্রত্যাশা। রোহিত শর্মা, শার্দূল ঠাকুর ভারতের হয়ে খেলছেন। তাঁদের কোচ দীনেশ বললেন, “রঞ্জিতে ২৫২ রানের ইনিংস খুব বড় ব্যাপার। এই ভাবে খেললে ৩-৪ বছরের মধ্যে ভারতের হয়ে সাদা জামা পরে খেলতে দেখা যেতে পারে সুদেবকে।”
মুম্বইয়ের হয়ে উত্তরাখণ্ডের বিরুদ্ধে চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন সুভেদ। দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে বাঁহাতি স্পিনার স্বপ্নিল সিংহের বল ড্রাইভ করে এক রান নেন তিনি। সেই রানেই দ্বিশতরান সম্পূর্ণ হয় ২১ বছরের সুভেদের। ইনিংস শেষ করেন ২৫২ রানে। ২১টি চার এবং চারটি ছয় মারেন সুভেদ।
প্রথম দিনের শেষে ১০৪ রানে অপরাজিত ছিলেন সুভেদ। সরফরাজ খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে মুম্বইকে বড় রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সরফরাজ আউট হন ১৫৩ রানে। রান পেয়েছেন মুম্বইয়ের আরমান জাফর (৬০), শামস মুলানিও (৫৯)। সুভেদ রান আউট হন। তিনি আউট হতেই ইনিংস ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত নেয় মুম্বই। প্রথম ইনিংসে ৬৪৭ রান তোলে মুম্বই। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩৯ রানে দুই উইকেট হারিয়েছে উত্তরাখণ্ড।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।