পরীক্ষা: ইডেেনর বাইশ গজ দেখে নিচ্ছেন দ্রাবিড়। নিজস্ব চিত্র।
সিরিজ়ের মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ় জিতে গিয়েছে রোহিত শর্মা নেতৃত্বাধীন ভারত। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে সিরিজ কেন্দ্রিক গুরুত্ব সে রকম না থাকলেও কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা কমছে না।
ভারতীয় দলের প্রস্তুতি আছে ভেবে ইডেনের সামনে ভিড় করেছিলেন সমর্থকেরা। এক ঝলক তাঁদের প্রিয় তারকাদের দেখার জন্য কেউ ছুটে এসেছেন মেদিনীপুর থেকে। কারও বাড়ি রায়গঞ্জ। দেখা গেল, রাঁচীতে ম্যাচ দেখার সুযোগ না পাওয়া এক ব্যক্তি ইডেনের সামনে দাঁড়িয়ে খোঁজ করে চলেছেন টিকিটের। বিকেলের মধ্যেই তাঁরা জানতে পারলেন, শুক্রবার ম্যাচ খেলার ধকল নিয়ে কলকাতায় এসেছে ভারতীয় দল। ক্লান্তি কাটেনি। তাই রবিবারের ইডেন দ্বৈরথের আগের দিন তাঁরা হোটেলেই বিশ্রাম নেবেন।
যদিও ক্রিকেটারেরা না এলেও তিনি এলেন। ঠিক পৌনে চারটের সময় একটি ‘পাইলট কার’ এসে দাঁড়ায় ইডেনের ১৭ নম্বর গেটের সামনে। তার পিছনে আরও একটি গাড়ি থামে। বেরিয়ে আসেন স্বয়ং রাহুল দ্রাবিড়, ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর ও বোলিং কোচ পরস মামব্রে।
ভারতীয় দলের বর্তমান হেড কোচ গাড়ি থেকে নামতেই ধ্বনি ওঠে ‘দ্রাবিড়... দ্রাবিড়...’। ভিভিএস লক্ষ্মণের সঙ্গে ইডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর ৩৭৬ রানের জুটি কে ভুলতে পারেন? এ দিনও সমর্থকদের ভিড়ে কেউ কেউ হয়তো সেই ইনিংসের সাক্ষী। দ্রাবিড়কে দেখেই একজন বলে উঠলেন, ‘‘ব্যাটসম্যান হিসেবে কতই সুখস্মৃতি দিয়েছে। কোচ হিসেবে এ বার তাঁর থেকে অনেক কিছু আশা করছি।’’ কিন্তু জৈব সুরক্ষা বলয়ের ব্যবস্থাপনা এতটাই কড়া যে ১৭ নম্বর গেটের আশে পাশে ভিড় করতে দেওয়া হল না দর্শকদের। সেই রাস্তা দিয়েই কোচিং স্টাফ মাঠে প্রবেশ করেন পিচ ও আউটফিল্ড পরিক্রমা করার জন্য।
দ্রাবিড় মাঠে প্রবেশ করেই সরাসরি পিচ দেখতে ছুটে যান। ইডেনের বাইশ গজের মাটি ছুঁয়ে দেখে তিনি খুশি বলেই জানা গিয়েছে। ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের কাছে হেড কোচ জানতে চান, ‘‘এখানে ভাল রান উঠবে? পিচ তো ভালই মনে হচ্ছে।’’ সুজনবাবু বলছিলেন, ‘‘উইকেটে কতটা বাউন্স আছে, বল উইকেটকিপারের কাছে দ্রুত পৌঁছবে কি না জানতে চাইছিলেন। ইডেনের পিচ বরাবরই স্পোর্টিং। এখানে শুরুর দিকে পেসাররা কিছুটা সাহায্য পাবেই। সেটাই জানিয়ে দিলাম। এমনিতে কোচ খুবই খুশি।’’
শিশির নিয়ে যদিও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। দ্রাবিড় তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন শিশির কতটা পার্থক্য গড়তে পারে? রাঁচীর মতো শুরু থেকেই কি শিশিরের জন্য পিচ ও আউটফিল্ড ভিজে থাকবে? পিচ প্রস্তুতকারকের থেকে জানা যায়, শেষ কয়েক দিন ধরে শিশিরের মাত্রা কম। দ্রাবিড়কেও একই তথ্য দেন সুজনবাবু। জানিয়ে দেন, রাতের দিকে শিশির বাড়তেও পারে। তবে ম্যাচ শুরুর দিকে সে ভাবে হয়তো প্রভাব ফেলবে না।
ক্রিকেটারদের সুরক্ষিত ভাবে মাঠে প্রবেশ করানোর জন্য বিশেষ ‘গ্রিন করিডোর’ তৈরি করা হবে টিম হোটেল থেকে। টিম বাস যে রাস্তা দিয়ে আসবে, সেই সময় প্রত্যেকটি সিগনাল সবুজ করে দেওয়া হবে, যাতে মাঝরাস্তায় বাস দাঁড় করাতে না হয়। দর্শকেরাও যাতে বাস ঘিরে ভিড় করতে না পারেন। ১৭ নম্বর গেট থেকে সরাসরি ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করবেন রোহিত শর্মারা। তাঁদের মাঠে প্রবেশ করার রাস্তা শনিবারই স্যানিটাইজ় করা হয়। সেই রাস্তায় প্রবেশ করতে পারবেন না দলের বাইরের কেউ। ধারাভাষ্যকারদের প্রবেশ করানো হবে সিএবি-র মধ্য দিয়ে গ্রিন করিডোর তৈরি করে। তাঁরা প্রবেশ করার সময় থাকতে পারবেন না সিএবি-র কোনও কর্তা। দর্শকদের সুরক্ষার কথা ভেবে প্রত্যেকটি আসন স্যানিটাইজ় করা হল শনিবার। দর্শকাসনেই রাখা থাকবে মুখাবরণ ও স্যানিটাইজ়ারের পাউচ। বাইরে থেকে কোনও খাবার নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না।
গ্যালারির নীচেই আগের মতো ফুড স্টলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাঁরা খাবার বিক্রি করবেন, প্রত্যেককেই আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট দেখাতে হবে।
ইডেনের ম্যাচ সিরিজ়ের বিচারে যতই গুরুত্বহীন হোক, কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদের উন্মাদনা কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। ইডেনেই সিরিজ় শেষে কাপ উঠবে নতুন অধিনায়ক রোহিত শর্মার হাতে। দ্রাবিড় যুগের প্রথম ট্রফির সাক্ষী হয়ে থাকবে ইডেন। সেই মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দি করে রাখার জন্য বহু দূর থেকেও মাঠে ছুটে আসাই যায়!