—প্রতীকী চিত্র।
স্থানীয় ক্রিকেটে গড়াপেটা নিয়ে ঝড় বইতে থাকলেও রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার তরফে তেমন কোনও পদক্ষেপ শনিবার পর্যন্ত দেখা যায়নি। উল্টে প্রধান অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে সেই টাউন ও মহমেডান স্পোর্টিং দু’টো দলকেই স্থানীয় ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। শনিবারও তারা খেলেছে স্থানীয় প্রথম ডিভিশন লিগে। ক্যালকাটা কাস্টমসের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছে টাউন। যা নিয়ে তীব্র বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনা কী? স্থানীয় লিগের ম্যাচে টাউনের বিরুদ্ধে মহমেডানের ব্যাটসম্যানদের ইচ্ছাকৃত ভাবে আউট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আউট হওয়ার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে জনরোষ তৈরি হয়েছে। সেই ম্যাচের আম্পায়ারেরা তাঁদের রিপোর্টে লিখেছেন, অক্রিকেটীয় এবং অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে আউট হয়েছে মহমেডানের ব্যাটসম্যানেরা। ঘটনার পরে অন্তত দিন চারেক পেরিয়ে গিয়েছে। তার পরেও সিএবি-র মধ্যে এ নিয়ে কোনও তৎপরতা নেই কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সাধারণত, গড়াপেটা নিয়ে এমন উত্তাল করা ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট সংস্থা তদন্তের আদেশ দেবে, এটা ন্যূনতম প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে সিএবি তা তো করেইনি, উল্টে অভিযুক্ত দু’টো ক্লাবকে স্থানীয় ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যেতে দিচ্ছে। যা নজিরবিহীন। প্রশ্ন উঠেছে, সিএবি কি আদৌ গড়াপেটা নিয়ে এমন মারাত্মক অভিযোগের কুলকিনারা করতে চাইছে নাকি পুরো ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছে? টাউনের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত দাস সিএবি-র যুগ্ম-সচিবও। সেই কারণে নিজেদের সতীর্থ পদাধিকারীকে সিএবি-র অন্য কর্তারা আড়াল করার চেষ্টা করছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় লিগ ক্রিকেটে টাউন ও মহমেডানের ম্যাচ ঘিরেই গড়াপেটার গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। এ সপ্তাহেই হওয়া সেই ম্যাচে মহমেডানের বেশ কয়েক জন ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃত ভাবে উইকেট বিসর্জন দিয়ে টাউনকে বিশেষ সুবিধা করে দিতে চেয়েছিল বলে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে। ম্যাচটিতে প্রথমে ব্যাট করে টাউন তুলেছিল ৪৪৬। জবাবে মহমেডান একটা সময় ছিল ২১২-২। মানে রান তাড়া করার সময় ভাল মতো লড়াইয়ে ছিল তারা। সেখান থেকে অলআউট হয়ে যায় ২৮১ রানে। দৃষ্টিকটূভাবে আউট হতে থাকেন তাদের ব্যাটসম্যানেরা। এখনকার দিনে স্থানীয় ক্রিকেটের ম্যাচের ভিডিয়োও বাজারে বেরিয়ে পড়ে। সেই সব আউটের কদর্য ভঙ্গি দেখে কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে, ক্রিকেটীয় যুক্তি-ব্যাখ্যা মেনে আউটগুলি হয়নি। দেখা যায়, স্টাম্পের বল ইচ্ছাকৃত ভাবে ছেড়ে দিয়ে মহমেডানের ব্যাটসম্যান আউট হচ্ছে।
সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘৬ তারিখে টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। তার পরে অ্যাপেক্স কাউন্সিলে যাবে। অম্বাডসমান দেখবেন। উনি যা রায় দেওয়ার দেবেন।’’ কিন্তু ময়দানে খুব আলোচিত হচ্ছে সিএবি-প্রধানের একটি মন্তব্য। একটি চ্যানেলে তিনি নাকি বলেছেন, ‘‘গর্ডন গ্রিনিজ়ও তো জাজমেন্ট দিয়ে তিরাশি বিশ্বকাপ ফাইনালে আউট হয়েছিলেন!’’ আগ বাড়িয়ে সেই মন্তব্য তা হলে তিনি কী করে করলেন?
ম্যাচের প্রথম দিনে টাউন লিখিত ভাবে অভিযোগ জানায়, মহমেডানের ক্রিকেটার হর্ষিত সাইনির বিরুদ্ধে। অভিযোগ কী? না, ২০২২-’২৩ মরসুমে হরিয়ানার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলার পরেও বোর্ডের ‘নো অবজেকশন’ না নিয়ে কলকাতায় স্থানীয় ক্রিকেট খেলতে এসেছেন। নিয়ম অনুযায়ী না কি তখনই ১০ পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে যায় টাউনের। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে ক্লাব স্তরের ক্রিকেট খেলতে গেলে ‘নো অবজ়েকশন’ লাগে কি না তা নিয়ে কিন্তু তর্ক রয়েছে। কারও কারও মত, ‘‘রাজ্য তো পাল্টাচ্ছি না। যে রাজ্যে খেলতাম, সেই রাজ্যের হয়েই রঞ্জি ট্রফি খেলব। অন্য রাজ্যে গিয়ে শুধুমাত্র তাদের স্থানীয় ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছি। তা হলেও কি ‘নো-অবজেকশন’ লাগবে? বোর্ড কি এই ধরনের ‘নো-অবজেকশন’ দেয়?’’ তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, হর্ষিত সাইনি যদি অবৈধ ক্রিকেটার হন, তা হলে সিএবি-র রেজিস্ট্রেশন পেলেন কি করে? তখন কি দেখা হয়নি তিনি অবৈধ ক্রিকেটার?