মহম্মদ শামি। — ফাইল চিত্র।
এক দিনের বিশ্বকাপে দারুণ খেলেছিলেন মহম্মদ শামি। ২৪টি উইকেট নিয়ে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়েছিলেন। প্রথম চারটি ম্যাচে দলে না থাকার পরেও যে ভাবে খেলেছিলেন, তাতে প্রশংসা আদায় করেছেন সবার থেকেই। এ বার জানা গেল, বিশ্বকাপে শামি নাকি খেলেছিলেন চোট নিয়েই। এক ওয়েবসাইটের দাবি, গোড়ালির চোটে ভুগলেও শামি বিশ্বকাপে একটানা খেলে গিয়েছিলেন। কাউকে চোটের কথা বুঝতেই দেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাদা বলের ক্রিকেটে রাখা হয়নি শামিকে। তিনি খেলবেন শুধু টেস্ট সিরিজ়ে, যা শুরু হবে ২৬ ডিসেম্বর। অর্থাৎ শামির হাতে অনেকটাই সময় রয়েছে। তাতেও অবশ্য তিনি সেরা উঠবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। ‘ক্রিকবাজ়’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, শামি গোড়ালিতে চোট পেয়েছেন। বিশ্বকাপের খেলা চলাকালীন বল করার সময় ল্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অস্বস্তি হচ্ছিল শামির। তাই নিয়েই খেলে গিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দল ঘোষণা করার সময় বোর্ড জানিয়েছিল, আপাতত চিকিৎসা চলছে শামির। টেস্ট সিরিজ়ের আগে সম্পূর্ণ ফিটনেস হলে তবেই তাঁকে খেলানো হতে পারে। তার আগে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, শামিকে মুম্বইয়ের এক চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দিয়েছে বিসিসিআই। সেখান থেকে চোট সারানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হবে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে (এনসিএ)।
তবে চোট নিয়ে খেলার খবর সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোনও বোলার সাফল্য পেতে থাকলেও তাঁকে চোট নিয়ে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে তর্কবিতর্ক চলছে। অতীতে যশপ্রীত বুমরাকে জোর করে দলে নিয়েও বাদ দিতে হয়েছিল। কয়েক বছর আগেও একের পর এক চোটের কারণে এনসিএ-র ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
শামির চোট ঠিক কতটা গুরুতর, সে ব্যাপারে সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) তরফ থেকে। যদিও তাঁর চোট নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বোর্ড কর্তারা। বোর্ডের এক কর্তা জানিয়েছেন, মুম্বইয়ে চিকিৎসককে দেখানোর পর শামিকে পাঠানো হবে বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানে তাঁর রিহ্যাব (সুস্থতার প্রক্রিয়া) চলবে। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির চোট উদ্বেগজনক নয় বলেই জানা গিয়েছে বিসিসিআই সূত্রে।
ভারতীয় বোর্ড সূত্রে খবর, এখনই শামিকে সাদা বলের ক্রিকেটে খেলানো হবে না। সামনে সাতটি টেস্ট ম্যাচ রয়েছে ভারতের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দু’টি এবং দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচটি টেস্ট রয়েছে। বিশ্বকাপের পর বোর্ড কর্তা মনে করছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পিচে টেস্ট ক্রিকেটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন বাংলার জোরে বোলার। তাই শামির চাপ সীমিত রাখতে তাঁকে শুধু লাল বলের ক্রিকেটে খেলানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এখনই অবশ্য সাদা বলের ক্রিকেট থেকে শামিকে একদম দূরে রাখতে চাইছেন না বোর্ড কর্তারা। সামনের বছর জুন মাসে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এক দিনের বিশ্বকাপে ভারতকে ফাইনালে তোলার অন্যতম কারিগরকে দেখে নেওয়া হবে আইপিএলে। গুজরাত টাইটান্সের হয়ে তাঁর পারফরম্যান্স দেখার পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। চার বছর পর শামির পক্ষে এক দিনের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা কম। তাঁর সামনে বিশ্বপর্যায়ের সাদা বলের প্রতিযোগিতা বলতে আগামী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাই তাঁকে মূলত টেস্ট ক্রিকেটের জন্য ভাবা হচ্ছে।
পর পর দু’বার টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ভারত। সেই আক্ষেপ মেটাতে টেস্ট ক্রিকেটকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছেন বোর্ড কর্তারা। সেই পরিকল্পনার কেন্দ্রে থাকছেন বাংলার জোরে বোলার। যদিও সাদা বলের ক্রিকেট শামির পরিসংখ্যান যথেষ্ট ভাল। দেশের হয়ে ১০১টি এক দিনের ম্যাচ খেলে ১৯৫টি উইকেট নিয়েছেন। এক দিনের বিশ্বকাপে ভারতীয়দের মধ্যে সব থেকে বেশি ৫৫টি উইকেটও তাঁর ঝুলিতে। এ ছাড়া ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৪টি উইকেট পেয়েছেন তিনি।