প্রতিপক্ষ: ২০১৯ বিশ্বকাপে ফাইনালের পরে এ বার সেমিফাইনালে মর্গ্যানদের মুখোমুখি কেনরা। ফাইল চিত্র।
এক জনের সামনে দুটো বিশ্বকাপে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ। অন্য জনের সামনে সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের।
এই রকম একটা উত্তেজক পরিস্থিতির মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলতে নামার ২৪ ঘণ্টা আগে অদ্ভুত শান্ত দুই অধিনায়ক। কিন্তু সেই অবস্থাতেও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধটা শুরু করে দিয়েছেন নিউজ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন এবং ইংল্যান্ডের অইন মর্গ্যান। নিজেদের ওপর বিন্দুমাত্র চাপ না নিয়ে দুই অধিনায়কই বলছেন, ‘‘ওরা তো খুব শক্তিশালী দল।’’
মঙ্গলবার ভারতীয় সময় দুপুর দেড়টা নাগাদ উইলিয়ামসনের সাংবাদিক বৈঠকে যে ছবিটা দেখা গেল, প্রায় একই রকম চিত্র ভেসে উঠল সন্ধ্যায় ইংল্যান্ড অধিনায়কের ভিডিয়ো-বৈঠকেও।
বিশ্বকাপে তো ইংল্যান্ড বড় ধাক্কা খেয়েছে ইতিমধ্যেই। ফাস্ট বোলার টাইমল মিলস এবং ওপেনার জেসন রয় চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। এর ফলে নিউজ়িল্যান্ডের তো বড় সুবিধা হয়ে গেল সেমিফাইনালে? সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে উঠলেন উইলিয়ামসন— ‘‘সন্দেহ নেই, জেসন এবং মিলস খুব ভাল ক্রিকেটার। কিন্তু ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি হল ওদের দলের গভীরতা। বার্মিংহ্যাম ফিনিক্স আর ‘দ্য হান্ড্রেড’ প্রতিযোগিতার সঙ্গে কিছু দিন যুক্ত থাকার ফলে ইংল্যান্ড দলের শক্তি এবং গভীরতা সম্পর্কে আমি ভালই ওয়াকিবহাল।’’
প্রায় একই ধাঁচের প্রশ্ন উঠল মর্গ্যানের সাংবাদিক বৈঠকেও। ইংল্যান্ড তো দুরন্ত খেলছে সাদা বলের ক্রিকেটে। দলের গভীরতাও অসাধারণ। এর আগে আপনারা ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১৯ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে এই নিউজ়িল্যান্ডকেই হারিয়েছেন। এ বার সেমিফাইনালে নামার আগে কি নিজেদের ফেভারিট বলবেন? সঙ্গে সঙ্গে মর্গ্যানের জবাব, ‘‘একদমই নয়। নিউজ়িল্যান্ড যথেষ্ট শক্তিশালী দল। তা ছাড়া আমরা দু’জন ক্রিকেটারকে হারিয়েছি। যা আমাদের ধাক্কা দিয়েছে। এটুকু বলব, নিউজ়িল্যান্ডকে হারাতে গেলে আমাদের দারুণ খেলতে হবে।’’
আবু ধাবির সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ড দলে বদলের সম্ভাবনা নেই। উইলিয়ামসন জানিয়ে দিলেন, সবাই সুস্থ। কিন্তু ইংল্যান্ড দলে পরিবর্তন হচ্ছে। যদিও মর্গ্যান বলে গেলেন, সেই পরিবর্তন কী, তা জানাবেন না। তবে শোনা যাচ্ছে, জস বাটলারের সঙ্গে ওপেন করবেন জনি বেয়ারস্টো। আর আবু ধাবির উইকেট দেখে ঠিক হবে বাড়তি এক জন বোলার দলে আসবেন, না ব্যাটার। বোলার হলে পেসার ডেভিড উইলি বা টম কারেনের মধ্যে কেউ। ব্যাটার হলে স্যাম বিলিংস।
বিশ্বকাপের আগে আইপিএল হওয়ায় ক্রিকেটারদের সমস্যা হয়েছে কি না, এই বিতর্কে এখন উত্তাল ক্রিকেটবিশ্ব। উইলিয়ামসন আবার মনে করছেন, আইপিএলের অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে দেবে। নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়কের মন্তব্য, ‘‘আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাটা অবশ্যই এই প্রতিযোগিতায় কাজে দিচ্ছে। এখানকার পিচ, পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে।’’ মর্গ্যান আবার উপকৃত হয়েছেন অন্য একটা ব্যাপার থেকে— ড্রেসিংরুম থেকে আসা সাঙ্কেতিক বার্তায়।
গত বছরের শুরু থেকে সাদা বলের ক্রিকেট চলাকালীন ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে থাকা মর্গ্যানের জন্য সাঙ্কেতিক চিহ্নের মাধ্যমে নানা বার্তা আসে। যা নিয়ে মর্গ্যান বলছেন, ‘‘অধিনায়ক হিসেবে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি এই কৌশলে। আমাকে আর বাটলারকে নানা সময় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে ড্রেসিংরুম থেকে আসা এই সব বার্তা।’’ সেমিফাইনালেও যার অপেক্ষায় থাকবেন তিনি।
শেষ যে আইসিসি প্রতিযোগিতায় মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল, সেখানে বিতর্কিত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বকাপ হাতছাড়া হয়ে যায় নিউজ়িল্যান্ডের। ফাইনালের সেই হার কী রকম যন্ত্রণাবিদ্ধ করেছিল দলকে? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে উইলিয়ামসন বলছিলেন, ‘‘দারুণ একটা খেলা হয়েছিল সে দিন। শেষ দিকে কয়েকটা ব্যাপার আমাদের পক্ষে যায়নি ঠিকই, কিন্তু সে সব এখন অতীত। এ বার সামনে অন্য একটা চ্যালেঞ্জ।’’
এক বিশ্বকাপের সেই হারের জবাব আর এক বিশ্বকাপে এসে দিতে পারেন কি না উইলিয়ামসন, সেটাই দেখার।