উনাদকাট যে আরও এক বার ভারতীয় দলের জার্সি পরবেন, তা তিনি নিজেও ভাবেননি। ছবি: পিটিআই।
দু’টি টেস্টের মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে এক যুগ। ২০১০ সালে তাঁর অভিষেকের সময়ের অধিনায়ক অবসর নিয়ে নিয়েছেন দু’বছর আগে। প্রথম একাদশে থাকা বাকি ক্রিকেটারদের মধ্যে খেলছেন শুধু ইশান্ত শর্মা। তিনিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রায় ছিটকে গিয়েছেন। সেই একাদশে থাকা রাহুল দ্রাবিড় এখন ভারতীয় দলের কোচ। ভিভিএস লক্ষ্মণ জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান। আর জয়দেব উনাদকাট ২০২২ সালে খেললেন তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট।
এই ১২ বছরে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছে। বহু পেসার এসেছেন। তাঁদের কেউ ব্যর্থ হয়েছেন, কেউ সফল হয়েছেন। যশপ্রীত বুমরাকে খুঁজে পেয়েছে ভারত। কিন্তু উনাদকাট খেলে গিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ২০২০ সালে সৌরাষ্ট্রকে প্রথম বার রঞ্জি জিতিয়েছেন অধিনায়ক হিসাবে। ৩১ বছরের পেসার ঘরোয়া ক্রিকেটে ৯৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে ৩৫৩টি উইকেট নিয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম উইকেট এল মীরপুরে। বৃহস্পতিবার উইকেট নিয়ে স্বপ্ন সত্যি হল উনাদকাটের। তিনি বলেন, “প্রথম টেস্ট এবং এই টেস্টের মাঝে অন্তত হাজার বার মনে মনে ভেবেছি যে টেস্টে প্রথম উইকেট নিয়েছি। প্রথম টেস্টে উইকেট পাইনি। ভারতীয় দলে আবার সুযোগ পাওয়ার পরে সকলে সেটাই বলছিল।”
জাহির খান, আশিস নেহরা, ইরফান পাঠানের পর ভারতীয় দলে বাঁহাতি পেসারের অভাব ঢাকতে উনাদকাট, খলিল আহমেদ, বারিন্দর স্রানের মতো ক্রিকেটাররা খেলেছেন। উনাদকাট একটি টেস্ট খেললেও বাকি দু’জন শুধুই সাদা বলের ক্রিকেটে খেলেছেন। ভারতীয় দলের পেস আক্রমণে একটা সময় কোনও বাঁহাতি পেসার ছিল না। খেলেছেন যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব এবং ইশান্ত শর্মা। এই চার ডানহাতি পেসারকে নিয়েই খেলে গিয়েছে ভারত। উনাদকাটরা ঘরের মাঠে রঞ্জি খেলে গিয়েছেন।
উনাদকাট যে আরও এক বার ভারতীয় জার্সি পরবেন তা তিনি নিজেও ভাবেননি। কিন্তু আশা ছাড়েননি তাঁর স্ত্রী রিনি কাঁটারিয়া। উনাদকাট বলেন, “আমার থেকেও রিনির বেশি বিশ্বাস ছিল যে আমি টেস্ট ক্রিকেটে ফিরব। লাল বলের খেলা না থাকলে আমার খারাপ লাগে। শুধু টেস্টের কথা বলছি না, রঞ্জিও খেলতে ভাল লাগে। সকলকে ধন্যবাদ আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য। আমার পরিবার এবং বন্ধু, যারা বাড়িতে বসে খেলা দেখছে সকলকে ধন্যবাদ।”
এ বছরের শুরুতে উনাদকাট একটি টুইট করেছিলেন। লিখেছিলেন, “প্রিয় লাল বল, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও। তোমায় আমি গর্বিত করবই, কথা দিলাম।” কথা রেখেছেন উনাদকাট। মীরপুর টেস্টে সুযোগ পেয়ে তিনি সেটা কাজে লাগিয়েছেন। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম ভাঙনটা তিনিই ধরিয়েছিলেন। জাকির হোসেনকে পর পর তিনটি বল বাইরের দিকে করে একটা ভিতরে নিয়ে আসেন। তাতেই ভুল করেন জাকির। ক্যাচ দিয়ে দেন স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের হাতে। এ ভাবে ব্যাটারকে আউট করতে দেখা যায় স্পিনারদের। সেই কাজ করে দেখালেন অভিজ্ঞ উনাদকাট। উনাদকাটের টেস্ট উইকেট পাওয়া তাঁকে আনন্দ দিয়েছে। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু সেই উইকেট আরও অনেকের স্বপ্নে নতুন করে আশা জাগিয়েছে।
উনাদকাট যখন প্রথম টেস্ট খেলেছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ১৯ বছর। তখন সদ্য ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন। তরুণ বাঁহাতি পেসারকে দলে নিয়ে আশা জাগিয়েছিল ভারত। কিন্তু একটি ম্যাচে উইকেট না পেতেই ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলে গেলেও ডাক আসেনি লাল বলের ক্রিকেটে। সাদা বলে এত বছরে সব মিলিয়ে ১৭টি ম্যাচ খেলেছিলেন। উইকেট নিয়েছিলেন ২২টি। লাল বলের ডাক আসেনি। তিনি হাল ছাড়েননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেট নিয়েছেন। আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স-সহ ছ’টি দলে খেলে ফেলেছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি যেমন আছে, তেমনই হ্যাটট্রিকও করেছেন। ২০১৯-২০ রঞ্জিতে তিনিই ছিলেন সব থেকে বেশি উইকেট নেওয়া বোলার। ১০ ম্যাচে ৬৭টি উইকেট নিয়েছিলেন উনাদকাট।
নিজের কাজ করে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাক আসেনি। উনাদকাট সুযোগ না পেলেও ভারতীয় দলে খেলে গিয়েছেন টি নটরাজন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছেন আরশদীপ সিংহ। উপেক্ষিতই ছিলেন উনাদকাট। শেষ পর্যন্ত সুযোগ এল ১২ বছর পর। উপেক্ষার অবসান। স্বপ্ন সত্যি হল উনাদকাটের। টেস্ট উইকেট এল। এ বার তিনি টানা কত বছর খেলেন সেটার অপেক্ষাতেই থাকবেন সমর্থকরা। অপেক্ষা করবেন উনাদকাটও। কারণ যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা চোট সারিয়ে ফিরে এলে আবারও হয়তো মাঠের বাইরে বসবেন বাঁহাতি পেসার।