কারিগর: ওয়ান্ডারার্সের বাইশ গজ তৈরিতে ব্যস্ত ফ্লিন্ট। ছবি: টুইটার থেকে
বছর তিনেক আগে ভারতের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সের বাইশ গজকে ‘গ্রিন মাম্বা’ সাপের সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৎকালীন পিচ প্রস্তুতকারক।
নতুন বছরে, ৩ জানুয়ারি থেকে এই ওয়ান্ডারার্সেই শুরু হচ্ছে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ। তার আগে আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বাইশ গজ কী হতে চলেছে, তা পরিষ্কার করে জানালেন জোহানেসবার্গের পিচ প্রস্তুতকারক ইভান ফ্লিন্ট।
বছর দেড়েক হল এই মাঠের প্রধান কিউরেটরের দায়িত্ব পেয়েছেন ফ্লিন্ট। তার আগে সহকারী হিসেবে কাজ চালাতেন। কী হতে চলেছে বাইশ গজ? শনিবার জোহানেসবার্গ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ফ্লিন্ট যা বললেন, তা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচ প্রস্তুতকারক চিন্তায় আছেন, বাইশ গজ না দ্রুত ফেটে যায়!
কেন এ রকম বলছেন? ফ্লিন্টের জবাব, ‘‘দুটো কারণ আছে। এক, ওয়ান্ডারার্সের পিচ যে মাটি দিয়ে তৈরি হয়, তা বেশি আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে না। ফলে ফাটল দেখা দেয় পিচে। দু’নম্বর কারণ, এখানে খুব গরম চলছে। দু’টো দিন খুব গরম গিয়েছে। কালও এ রকম গরম থাকার পূর্বাভাস আছে। তাই পিচের ফাটল নিয়ে একটা চিন্তা থেকে যাচ্ছে আমার।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি যখন থেকে পিচের দায়িত্বে আছি, ওয়ান্ডারার্সের এই ফাটল আমাকে চিন্তায় রাখে। এটা সামলানোই আমার সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।’’
গত সাত দিন ধরে পুরোদস্তুর পিচ তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন ফ্লিন্ট। চলছে জল দেওয়া, পিচ রোল করার কাজ। বলছিলেন, ‘‘এ দিন যেমন আমরা ভাল করে পিচটা রোল করলাম। কাল আবার জল দেওয়া হবে পিচে। লক্ষ্য থাকবে, বাইশ গজের মাটি যেন আদ্রর্তা ধরে রাখতে পারে। পিচের ফাটলগুলো যেন আগেভাগে দেখা না যায়।’’
পিচের ফাটল কিন্তু আরও একটা সমস্যা তৈরি করে দেবে ব্যাটারদের জন্য। কী সেটা? ফ্লিন্টের সতর্কবার্তা, ‘‘ফাটল দেখা দিলে পিচে অসমান বাউন্স তৈরি হতে পারে। আর সেটা হলে কিন্তু ব্যাটারদের পরীক্ষা বাড়বে।’’ পিচ প্রস্তুতকারক প্রার্থনা করে চলেছেন, তৃতীয় দিনের পরে যেন এই ফাটল দেখা দেয়। তার আগে নয়। ফাটল আর অসমান বাউন্স মিলে কিন্তু দু’দলের পেসাররা আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেন ওয়ান্ডারার্সে।
সেঞ্চুরিয়নে প্রথম টেস্ট ম্যাচ জেতা ভারতের কাছে কিন্তু জোহানেসবার্গ বেশ পয়া মাঠ। এই মাঠে ভারত একটা টেস্টও হারেনি। এখানেই ১৯৯৭ সালে সেঞ্চুরি করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। ২০০৬ সালে প্রথম টেস্ট জিতেছিল ভারত। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াও এই মাঠে। শুধু ২০০৩ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে হারতে হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলকে।
অতীতে ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এলেই ঘাসের পিচ বানানোর দাবি যেত পিচ প্রস্তুতকারকদের কাছে। এ বারও কি ডিন এলগারের তরফে সে রকম কোনও দাবি রাখা হয়েছে? হাল্কা হেসে ফ্লিন্টের জবাব, ‘‘আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যখন বিপক্ষ দলের পেস আক্রমণ ভাল থাকে না বা পেস আক্রমণ সামলানোর মতো ব্যাটার থাকে না, তখনই সবুজ পিচ চাওয়ার দাবি ওঠে।’’ এ বার পরিবর্তন কোথায় দেখছেন? জবাব এল, ‘‘গত কয়েক বছরে ভারতীয় দলটা দারুণ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। যে রকম পেস আক্রমণ, সে রকমই ব্যাটিং শক্তি। আমি নিশ্চিত, ভারতের বিরুদ্ধে আলাদা করে কেউ ঘাসের পিচ চাইবে না।’’
দু’দলের অধিনায়ক বা কোচেদের কারও সঙ্গে কি কথাবার্তা হয়েছে? ‘‘না, আমার সঙ্গে কারও এখনও কথা হয়নি। আসলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে সবাইকে থাকতে হচ্ছে বলে সে ভাবে কারও সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে না। যদিও রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে আছে আমার,’’ বলেন তিনি। ফ্লিন্ট মনে করেন, এই ভাবে একান্তে পিচ তৈরি করার একটা ভাল দিকও আছে, একটা খারাপ দিকও আছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও রকম চাপ ছাড়াই নিজের কাজটা করা যায়। কিন্তু আবার কারও মতামতটা জানা যায় না।’’
সোমবার টস করতে নামার আগে কী পরামর্শ দেবেন দুই অধিনায়ককে? পিচ প্রস্তুতকারকের জবাব, ‘‘টস জিতলে আগে ব্যাটিং। ঘাস একটু থাকবে পিচটার বাঁধুনি ধরে রাখতে। দু’ঘণ্টা দেখে খেলতে হবে। কিন্তু শেষ দিনে ব্যাট করা আরও কঠিন হবে।’’