এক ডজনেরও বেশি দুর্নীতি নিয়ে একটি লিগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আইসিসি। প্রতীকী ছবি
ক্রিকেটবিশ্বে শোরগোল ফেলে চালু হয়েছিল আবু ধাবি টি-টেন লিগ। খেলেছিলেন ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা। ব্যাপক গড়াপেটার দায়ে সেই প্রতিযোগিতাই এখন আইসিসি-র আতএকাচের তলায়। এক ডজনেরও বেশি দুর্নীতি নিয়ে সেই লিগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে আইসিসি। ইংল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডেইলি মেল’-এর সৌজন্যে এই খবর প্রকাশ্যে এসেছে। মইন আলি, আদিল রশিদ, অ্যালেক্স হেলস, দাউইদ মালান এবং আন্দ্রে রাসেলের মতো ক্রিকেটাররা এই লিগে খেলেছেন। ভারতীয়দের মধ্যে এস শ্রীসন্থ, সুরেশ রায়না এবং স্টুয়ার্ট বিনি খেলেছেন।
ওই সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিসি-র দুর্নীতি বিরোধী শাখা এক ডজনেরও বেশি দুর্নীতিমূলক কার্যকলাপের অভিযোগ পেয়েছে। জুয়া নিয়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। টি-টেন লিগের সব ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির স্পনসর কোনও না কোনও জুয়া সংস্থা। ম্যাচগুলিতে খুব বেশি দর্শক হাজির থাকত না। কিন্তু বিরাট পরিমাণ অর্থে জুয়া খেলা হত। প্রতি ম্যাচে সাড়ে আট কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়েছে। আইসিসি-র মতে, এ ধরনের ছোট প্রতিযোগিতার নিরিখে এটি বিরাট অর্থ।
আরও কিছু বিষয় নজরে রয়েছে আইসিসি-র। জানা গিয়েছে, মাঠের পরিস্থিতি বা পিচের কথা না ভেবেই ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি মালিকরা দলের ব্যাটিং এবং বোলিং অর্ডার ঠিক করতেন। হঠাৎ করে ভাল ক্রিকেটারদের বসিয়ে দেওয়া হত। ক্রিকেটাররা এমন শট খেলে আউট হতেন যা অকল্পনীয়। চেন্নাই ব্রেভসের মালিক ডারেন হার্ফ্টের ছেলে একটি ম্যাচে ওপেন করেন ইংল্যান্ডের ব্যাটার ড্যান লরেন্সের সঙ্গে। কিন্তু আগে তিনি কখনও একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলেননি। শিবিরে যোগ দেওয়ার আগের দিনই এক দলের মালিক ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চেয়েছিলেন। তার কারণ জানা যায়নি। ভারতের এক ক্রিকেটার তাঁর বেতন পেয়েছেন লিগের আয়োজকদের থেকে, দলের মালিকের থেকে নয়।
ওই সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রতি ম্যাচে একই মুখকে দেখা যেত দর্শকাসনে বসে মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকতে। হোটেলেও অবাধ ছিল তাঁর আনাগোনা। তিনি লিখেছেন, “এশিয়ার কিছু ব্যক্তি দর্শকাসনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে থাকত। প্রত্যেকের কানে ইয়ারফোন এবং হাতে মোবাইল থাকত। বেঙ্গালুরু, মুম্বই, দিল্লি এবং ঢাকার বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কেউ কেউ কথাই বলতে চায়নি। অনেকে ইঙ্গিত দিয়েছে, এখানে টাকা উপার্জন করা কতটা সহজ।”
তিনি আরও লিখেছেন, “টিভিতে খেলা দেখানোর আগেই অনেকে ইয়ারফোনে ম্যাচের গতিপ্রকৃতির ব্যাপারে অন্য কাউকে বলে দিত। ওরা প্রত্যেকেই জানত কোন কোন ক্রিকেটারকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আানা যায়। পুরো চিত্রনাট্য লেখা থাকত আগে থেকেই। ব্যাটারের হেলমেট বা গ্লাভস খোলা জাতীয় ইঙ্গিতের সাহায্যে বোঝানো হত যে ম্যাচ গড়াপেটা হচ্ছে। হোটেল এবং বারে গিয়ে ক্রিকেটারদের গড়াপেটার প্রস্তাব দেওয়া হত।”