R G Kar Medical College And Hospital Incident

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে হরভজনের খোলা চিঠি, সমাজমাধ্যমে মুখ খুললেন সূর্যকুমারও

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রত্যেক দিন যে ভাবে পথে নেমেছেন চিকিৎসকেরা, তা দেখার পরে রাগে গর্জে উঠেছেন বিশ্বক্রিকেটে ‘টার্বোনেটর’ নামে পরিচিত হরভজন। মুখ খুলেছেন সূর্য়কুমার যাদবও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৬:০০
Share:

(বাঁ দিকে) হরভজন সিংহ এবং সূর্য়কুমার যাদব। —ফাইল চিত্র।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, সিবিআই এবং দেশের নাগরিকদের উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিংহ। জানালেন, গোটা ঘটনায় তিনি যেমন গভীর ভাবে মর্মাহত, তেমনই রাগে ফুঁসছেন। নির্যতিতা যাতে ঠিক বিচার পান, তার দাবি জানিয়েছেন হরভজন।

Advertisement

হরভজনের মতো আরজি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ খুলেছেন সূর্য়কুমার যাদবও। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনার মেয়েকে রক্ষা করুন।’’ তার পরে সেই লাইন কেটে দিয়ে সূর্য আরও লিখেছেন, ‘‘আপনার ছেলেকে শিক্ষিত করুন, এবং আপনার বাবাকে, আপনার স্বামীকে এবং আপনার বন্ধুদেরও।’’

খোলা চিঠিতে প্রাক্তন ভারতীয় অফস্পিনার লিখেছেন, ‘‘কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং নির্মম হত্যার ঘটনায় গভীর যন্ত্রণা ও রাগ থেকে এই চিঠি লিখছি। বাকরুদ্ধ করে দেওয়ার মতো এই হিংস্রতা শুধু আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়ে যায়নি, তারই সঙ্গে আমাদের সমাজে প্রত্যেক নারীর সম্মান এবং সুরক্ষা নিয়েও জোরালো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এটাকে কোনও বিশেষ একজনের সঙ্কট হিসেবে বিচার করবেন না। এই সমাজের গভীরেই যে কত বড় নৃশংসতা লুকিয়ে রয়েছে, এ তারই প্রতিফলন। যা আমাদের ফের মনে করিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, যত দ্রুত সম্ভব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন প্রয়োজন এবং সেই বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।’’

Advertisement

হরভজন আরও লিখেছেন, ‘‘তার চেয়েও বড় কথা, এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে একটি হাসপাতালের মধ্যে, যেখানে মানুষের জীবন রক্ষা করার কাজ চলে। এই ঘটনা যেমন নৃশংস, তেমনই কোনও অবস্থায় গ্রহণযোগ্য নয়। চিকিসক মহলকে এমনিতেই অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। এমন একটা ঘটনার পরে আমরা কী করে আশা করব, তাঁরা দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করবেন, যেখানে তাঁদেরই সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে?’’

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রত্যেক দিন যে ভাবে পথে নেমেছেন চিকিৎসকেরা, তা দেখার পরে রাগে গর্জে উঠেছেন বিশ্বক্রিকেটে ‘টার্বোনেটর’ নামে পরিচিত হরভজন। তিনি লিখেছেন, ‘‘এক সপ্তাহ হয়ে গেল, তা নিয়ে আমরা কোনও সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দেখতে পেলাম না, যেখানে গোটা চিকিৎসক মহল প্রত্যেক দিন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ওঁদের প্রতিবাদের অর্থ আমি অনুভব করেছি এবং তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ওঁরা প্রকৃত ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই করছেন।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘প্রতিবাদের কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগিদের এবং চিকিৎসকেরাও তা উপলব্ধি করছেন। কিন্তু প্রশাসনের একাংশের নিষ্ক্রিয়তা তাঁদের এমন একটা দিকে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে রাস্তায় নেমে সরব হওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই চিকিৎসকদের কাছে।’’

হরভজনের দাবি, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-র কাছে আমার অনুরোধ, দ্রুততার সঙ্গে এই অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’’ আরও লিখেছেন, ‘‘শুধু পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত এই ঘটনা ঘটে চলেছে এবং যা সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তার জন্য সরকারকেই কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে। তার মধ্যে হাসপাতালগুলিতে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এমন নির্মম ঘটনায় আক্রান্তের পাশে থাকতে হবে। এমন এক ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা নির্বিঘ্নে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘একই সঙ্গে সরকারকেও বিশদে তদন্ত করে এটা খুঁজে বার করতে হবে হাসপাতালের মতো এক সুরক্ষিত জায়গায় এমন পরিস্থিতি কী ভাবে তৈরি হল। প্রশাসন স্বচ্ছতা বজায় রাখুক। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।’’

খোলা চিঠিতে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে হরভজন আরও লিখেছেন, ‘‘বৃহত্তর সমাজের দিকে তাকিয়ে এটা বলতে চাই, এই মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের সকলকে এই প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে, লিঙ্গবৈষম্যের এই ছবি আর কত দেখতে হবে। আর কত প্রাণ গেলে আমাদের ঘুম ভাঙবে এবং আমরা অনুভব করব, কত নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে রয়েছি? যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত ঘটনাগুলিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে উদাসীনতা এবং তাচ্ছিল্য দেখানো হয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে এ বার রুখে দাঁড়াতে হবে। না হলে এই সঙ্কট থেকে মুক্তি নেই।’’

হরভজনের বার্তা, ‘‘সমাজবদ্ধ মানুষ হিসেবে আমাদের এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতেই হবে, যেখানে নারীরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করেন। যেন তাঁদের সম্মান এবং সামাজিক অবদান সমান গুরুত্ব পায়। কর্মক্ষেত্র থেকে নিজেদের বাড়ি অথবা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেও যেন তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত বলে মনে করতে পারেন।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘নারীবিদ্বেষ যে ভাবে আমাদের সমাজে প্লেগ রোগের মতো গভীরে ছড়িয়ে গিয়েছে, তাকে রুখতে শিক্ষা, দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আনতে হবে। তা হলেই নারীরা তাঁদের যোগ্য সম্মান পাবেন। সেটা সুনিশ্চিত করতেই হবে।’’

তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার এই খোলা চিঠি ন্যায়বিচার ও সামাজিক জাগরণের আবেদন নিয়ে লেখা। এমন অমানবিক ঘটনা থেকে আমরা মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি না। নীরব থাকা সম্ভব নয়। নির্যাতিতার উপরে অত্যাচারের যথাযথ বিচার চাই। চাই ভয়মুক্ত সমাজ। চাই ইতিবাচক পরিবর্তন। এই মুহূর্তে চিকিৎসকদের দাবির পাশেই রয়েছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement