সচিন তেন্ডুলকরের (ডান দিকে) হাতে জীবনকৃতি সম্মান তুলে দিচ্ছেন জয় শাহ। ছবি: পিটিআই।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে জীবনকৃতি সম্মান দিয়েছে। শনিবার সেই সম্মান নিতে গিয়ে নিজের খেলোয়াড় জীবনের কথা মনে পড়েছে সচিন তেন্ডুলকরের। মনে পড়েছে অবসরের দিনের কথা। তরুণ ক্রিকেটারদের পরামর্শ দিয়েছেন সচিন। সব প্রলোভন দূরে সরিয়ে একমনে ক্রিকেট সাধনার কথা বলেছেন তিনি।
শনিবার বোর্ডের অনুষ্ঠানে সচিনকে ভারতীয় ক্রিকেটে অবদানের জন্য ‘কর্নেল সিকে নাইডু’ জীবনকৃতি সম্মান তুলে দেন বোর্ডের প্রাক্তন সচিব তথা বর্তমানে আইসিসির চেয়ারম্যান জয় শাহ। সেই অনুষ্ঠানেই সচিন জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে মূল্যবোধের কতটা গুরুত্ব। তিনি বলেন, “নব্বইয়ের দশকে দু’বছর আমার ব্যাটের কোনও স্পনসর ছিল না। তার পরেও মদ বা তামাকের বিজ্ঞাপন করিনি। কারণ, আমার জীবনে মূল্যবোধের বড় ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের শিক্ষা সবসময় আমাকে সামনে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।” উঠতি ক্রিকেটারদেরও সেই মূল্যবোধ মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সচিন।
১৯৮৯ সালে ভারতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে ক্রিকেটই তাঁকে পথ দেখিয়েছে। ব্যাট হয়েছে তাঁর হাতিয়ার। সেই ব্যাটকে তাই অনেক যত্নে রাখেন তিনি। এখনও ব্যাটকে প্রণাম করেন। কেরিয়ারে কোনও কিছুই হালকা ভাবে নেননি সচিন। সব কিছুকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সকলের আগে রেখেছেন ক্রিকেটকে। সেই কথা শোনা গিয়েছে তাঁর গলায়। সচিন বলেন, “ক্রিকেট না থাকলে এই ঘরে আমরা বসে থাকতাম না। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। আমাদের কাছে ব্যাট-বল আছে। শক্ত করে তাকে ধরে থাকতে হবে। মুঠো আলগা করলে চলবে না। যদি মুঠো আলগা হয় তা হলে কেরিয়ারও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাবে।”
সেই কারণেই নিজের মনঃসংযোগ ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সচিন। কোনও প্রলোভনে পা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সচিন বলেন, “আমি শুধু বলব, মনঃসংযোগ ধরে রেখে এক লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। কেরিয়ারে অনেক প্রলোভন আসবে। তাতে পা দিলে হবে না। সকলের আগে দেশ। তার জন্য খেলতে হবে। এখানে যারা আছে তাদের প্রত্যেকের মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট বেঁচে আছে। সেটা কাজে লাগাতে হবে। কারণ, অবসরের পরে বুঝবে খেলার মাঠটা কত আনন্দের ছিল।”
২০১৩ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলে অবসর নিয়েছিলেন সচিন। সেই ম্যাচ শেষে একটি বিদায়ী ভাষণও দিয়েছিলেন তিনি। সে দিনের কথা এখনও মনে পড়ে সচিনের। তাঁর জন্য মাঠেই বিশেষ বন্দোবস্ত করেছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা। সে কথা জানিয়েছেন সচিন। তিনি বলেন, “ওই মুহূর্ত জীবনে এক বারই আসে। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। ধোনি বলল, আমার জন্য ওরা কিছু ব্যবস্থা করছে। তার পরে দেখলাম, মাঠেই আমাকে ঘিরে উল্লাস হল। আমাকে গার্ড অফ অনার দিল। বুঝতে পারছিলাম, এটাই শেষ বার। এর পরে আর দেশের হয়ে নামা হবে না। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না।”
ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও ক্রিকেটের বাইরে যাননি সচিন। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মেন্টর তিনি। লেজেন্ডস লিগেও খেলতে দেখা যায় তাঁকে। অবসর নিলেও যে তিনি খেলাকে ছাড়তে পারেননি তা আরও এক বার বুঝিয়ে দিলেন ১০০টি শতরানের মালিক।