গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
প্রতি বছর আইপিএল শুরু হওয়া মানে যেমন নতুন প্রতিভাদের উঠে আসা, তেমনই চোখ থাকে তারকা ক্রিকেটারদের দিকেও। রোহিত শর্মা ক’টা ছক্কা মারলেন, বিরাট কোহলি ক’টি বল গ্যালারিতে ফেললেন, মহম্মদ শামি কার স্টাম্প ভেঙে দিলেন, সেই দিকে তাকিয়ে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এ বারের আইপিএলও তার ব্যতিক্রম নয়। কিছু তারকার কাছে যেমন বিদায়ের আগে এই আইপিএল নিজেকে প্রমাণ করার মঞ্চ, তেমনই কারও কাছে ভারতীয় দলে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ।
এ বারের আইপিএলে এখনও হয়েছে ৩১টি ম্যাচ। দেখা যাচ্ছে, অনেক তারকা ক্রিকেটারই এ বার খারাপ খেলছেন। কেউ অর্থের চাপ সামলাতে পারছেন না। আবার কেউ ক্রিজ়ে টিকে থাকার ধৈর্যটাই হারিয়ে ফেলেছেন। আনন্দবাজার ডট কম তুলে ধরল সেই তারকা ক্রিকেটারকে, যাঁরা এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ।
রোহিত শর্মা (১৬.২৫ কোটি, ৫ ম্যাচে ৫৬ রান)
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে সেই ফরম্যাটের জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছিলেন রোহিত। তবে আইপিএলে কত দিন খেলবেন তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। দেখা যাচ্ছে, টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানানোর পর এই ফরম্যাট থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছেন রোহিত। কিছুতেই তাঁর ব্যাটে-বলে হচ্ছে না। ক্রিজ় কামড়ে পড়ে থাকার সেই চেষ্টাটাও উধাও। বরাবরের মতো চেষ্টা করছেন চালিয়ে শুরু করতে। কোনও ম্যাচেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে যাঁর সাতটি শতরান রয়েছে, তাঁর এমন দশা মেনে নিতে পারছেন না কেউই। রোহিত নিজেও হতাশ হয়ে পড়ছেন প্রতি বার আউট হওয়ার পর। এ ভাবে চললে এটাই তাঁর শেষ আইপিএল হতে পারে।
যশস্বী জয়সওয়াল (১৮ কোটি, ৬ ম্যাচে ১৮২ রান)
এই তালিকায় থাকা বাকি ক্রিকেটারদের তুলনায় যশস্বীর পরিসংখ্যান ভাল। তবু তাঁকে এই তালিকায় রাখার কারণ, প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়া। দেশের হয়ে যশস্বী শেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২৪-এ। তবে ইদানীং টি-টোয়েন্টিতে ইদানীং তিনি প্রথম একাদশে কার্যত পাকা। শুভমন গিলকে দল থেকে সরিয়ে নিজের জায়গা মজবুত করে ফেলেছেন। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বেশ কিছু সিরিজ় রয়েছে ভারতের সামনে। যশস্বীর ফর্ম এ রকম উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গেলে বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই পাওয়া কঠিন হবে। শুভমনের রান তাঁর থেকে বেশি। পাশাপাশি অধিনায়কত্বও ভাল করছেন। তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। আইপিএলে ভাল খেললে আগামী টি-টোয়েন্টি সিরিজ়গুলিতে দলে জায়গা পাওয়া কঠিন হবে না যশস্বীর। বিশ্বকাপের দরজাও খুলে যেতে পারে। সবই নির্ভর করছে বাকি আইপিএলটা তাঁর কেমন যায় তার উপরে।
ঋষভ পন্থ (২৭ কোটি, ৭ ম্যাচে ১০৩ রান)
আইপিএল শুরু হওয়ার আগেই তাঁর মাথায় একটা বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্জীব গোয়েন্কা। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার হওয়ার বোঝা। আইপিএলের প্রায় অর্ধেক কেটে গেলেও সেই বোঝা এখনও ঘাড় থেকে নামাতে পারেননি পন্থ। ২৭ কোটি পাওয়ার পর থেকেই হিসাব শুরু হয়েছিল যে, প্রতি ম্যাচে, প্রতি বল খেলে কত টাকা রোজগার করবেন তিনি। পন্থ নিজেও সেটা বেশ উপভোগ করছিলেন। কিন্তু আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হয়েছে তাঁকে। দল হয়তো জিতছে। তবে সেটা যত না পন্থের অধিনায়কত্বে, তার চেয়ে বেশি সতীর্থদের ব্যাটে-বলে। গম্ভীর কোচ হওয়ার পর থেকে এমনিতেই ভারতের সাদা বলের ক্রিকেটের দরজা প্রায় বন্ধ হতে বসেছে তাঁর কাছে। যা অবস্থা, তাতে লাল বলের ক্রিকেটেও দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও দিন। বিকল্প হিসাবে থাকা ক্রিকেটারদের সংখ্যা কম নয়। সোমবার চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে পন্থের ব্যাট চলেছে। অর্ধশতরান করেছেন। কিন্তু দল জিততে পারেনি। ফলে পন্থের গুরুত্ব একটা ইনিংসে বেড়েছে, এমনটাও নয়।
রবীন্দ্র জাডেজা (১৮ কোটি, ৭ ম্যাচে ৯২ রান এবং ৪ উইকেট)
রোহিতের মতোই তিনিও বিশ্বকাপ জিতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় জানান। ফলে ন’মাস পরে আইপিএলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলতে নেমেছেন। রোহিতের মতোই তাঁরও সেই ফর্ম উধাও। যে জাডেজার অলরাউন্ড দক্ষতার জন্য গোটা বিশ্ব তাঁকে কুর্নিশ করত, ভারতের সব ফরম্যাটে যাঁর স্থান বাঁধা ছিল, তিনিই ব্যাট করতে নামছেন সাতে বা আটে। বল করার সময় কোনও ম্যাচেই পুরো ওভার করানো হচ্ছে না। এ বারের আইপিএলে জাডেজা সে ভাবে ব্যাট করার সুযোগই পাননি। আগে যেমন তাঁকে দরকারের সময় উপরে তুলে আনা হত, এ বার তা হচ্ছে না। পাশাপাশি, বল করার সময়ও ‘লুকিয়ে’ রাখা হচ্ছে। মাত্র ১৬.১ ওভার বল করেছেন, অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি মাত্র দুই ওভার! রান দিয়েছেন ১৩৮, অর্থাৎ প্রায় ১০-এর কাছাকাছি। দু’বছর আগেও তাঁর চার-ছক্কায় আইপিএল জিতেছিল চেন্নাই। কিন্তু এই জাডেজাকে চেনেন না কেউ।
মহম্মদ শামি (১০ কোটি, ৬ ম্যাচে ৫ উইকেট)
টেস্ট বা এক দিনের ক্রিকেটে এখনও তাঁর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় আসেনি। তবে টি-টোয়েন্টিতে, বিশেষ করে আইপিএলে তিনি আর কত দিন? ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার সময় হয়তো এসেছে এ বার। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে এমনিতেই আজকাল বোলারদের জন্য কিছু থাকে না। শামি যেন আরও অচল হয়ে পড়ছেন। তাঁর বোলিং লাল বলের ক্রিকেটে কার্যকর হতে পারে। কিন্তু আইপিএলের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বলের সুতো (সিম) কাজে লাগিয়ে বোলিং আর চলছে না। পঞ্জাবের বিরুদ্ধে চার ওভারে ৭৫ রান হজম করেছেন শামি। মার্কাস স্টোইনিস তাঁকে শেষ ওভারে চারটি ছয় মেরেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আইপিএলে শামির বোলিংয়ে কোনও ‘প্ল্যান বি’ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরাবর যে সিমিং পজিশন রেখে সাফল্য পেয়ে এসেছেন সেটাই করছেন। পাটা উইকেটে অনেক সময় সে ধরনের বলে কোনও লাভ হয় না। স্লোয়ার, সুইংয়ের মতো বৈচিত্র লাগে। শামি কিছু দিন আগেই মুখ খুলেছিলেন বলে থুতু লাগানো নিয়ে। দেখা যাচ্ছে, নিজেই সেই কাজ করে সাফল্য পাচ্ছেন না! এখনও পর্যন্ত ২১ ওভার বল করে ২৩৩ রান দিয়েছেন। ওভারপ্রতি ১১-রও বেশি রান।