ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী পেসার মদন লাল জানিয়ে দিলেন, লালার ব্যবহার বর্জনে সুইংয়ে সমস্যা হবেই। তিনি বলছিলেন, ‘‘শেষ দু’বছর ধরে ক্রিকেট দেখে আমার মনে হয়েছে, আগের মতো বল সুইং করছে না। বল চকচকে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় কিন্তু লালা ব্যবহার করা।
অকপট: লালা নিষিদ্ধ হওয়ায় চিন্তিত নন ফ্যানি। ফাইল চিত্র
বলের উপরে লালা ব্যবহার করে এক দিক চকচকে রাখার প্রথা দু’বছর আগেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল আইসিসি। তবে অনেকেই মনে করছিলেন, করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলেই আগের মতো লালার ব্যবহারে বলের এক দিন চকচকে রাখার ঐতিহ্য ফিরে আসবে। বুধবার মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিল। পাকাপাকি ভাবে নিষিদ্ধ করে দিল লালার ব্যবহার। কোনও পেসার তবুও যদি বলের উপরে লালা ব্যবহার করেন, সে ক্ষেত্রে বল-বিকৃতির আওতায় পড়বে সেই ঘটনা।
বলের এক পাশে লালা ব্যবহার করা হলে সেই দিকটা চকচকে হয়ে যায়। বাতাসে বল ছাড়ার পরে চকচকে দিক হাওয়া কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। তাতেই তৈরি হয় সুইং। পুরনো বলের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্য রকম। এক দিকে ক্রমাগত লালা ব্যবহার করা হলে সেই দিক ভারী হয়ে যায়। এক দিক খরখরে ও এক দিক ভারী হয়ে গেলে বল সব সময় ভারী হয়ে যাওয়া দিকে বাঁক নেয়। যা রিভার্স সুইং হিসেবে পরিচিত। কিন্তু শেষ দু’বছর ধরে ঘামের ব্যবহারে পেসাররা অনায়াসেই সুইং করাচ্ছেন। তাই পাকাপাকি ভাবে লালা ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ায় সুইংয়ে যে খুব একটা পার্থক্য হবে না, সেটাই মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন পেসার ফ্যানি ডিভিলিয়ার্স। টেস্টে ৮৫ উইকেট ও ওয়ান ডে-তে ৯৫ উইকেট নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই আনন্দবাজারকে ফোনে ফ্যানি বলছিলেন, ‘‘লালার ব্যবহার ছাড়া শেষ দু’বছর ধরে ক্রিকেট চলছে। বোলাররা যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছে ঘামের ব্যবহারে বল পালিশ করে। লালার ব্যবহার বর্জন হওয়ায় খুব একটা পার্থক্য দেখা যাবে না।’’
ফ্যানির আরও বক্তব্য, ‘‘রিভার্স সুইংও কিন্তু বন্ধ হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাবায় দ্বিতীয় ইনিংসে মহম্মদ সিরাজ যে ভাবে রিভার্স সুইং করিয়েছিল, তা দেখে কি মনে হয়েছে লালার ব্যবহার ছাড়া সুইংয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে?’’ এখানেই না থেমে ফ্যানি বলে চলেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মোহালিতে মহম্মদ শামিও রিভার্স সুইং পেয়েছে।’’
ফ্যানি মনে করেন, বল সুইং করানোর ক্ষেত্রে পেসারের ভূমিকাও যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে সতীর্থদের ভূমিকা। বল পালিশ করার দায়িত্ব সকলের। তবে লালার ব্যবহার বন্ধ করার পরে অন্য কোনও বস্তু দিয়ে বলে পালিশ রাখার নিয়ম কেন চালু করা হচ্ছে না, প্রশ্ন তাঁর। বলছিলেন, ‘‘লালা কিন্তু ঘামের চেয়ে অনেক হাল্কা। তাই সুইংয়ের ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ পার্থক্য হতেই পারে। লালার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ, কোভিড সংক্রমণ। তা হলে এমন কোনও বস্তু ব্যবহার করতে দেওয়া হোক, যা দিয়ে বল পালিশ করা যেতে পারে। সেই বস্তু রাখা যেতে পারে আম্পায়ারের কাছে। বোলাররা পালিশ করার সময় আম্পায়ারের থেকে তা নিয়ে বলের এক দিক চকচকে রাখুক।’’
ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী পেসার মদন লাল জানিয়ে দিলেন, লালার ব্যবহার বর্জনে সুইংয়ে সমস্যা হবেই। তিনি বলছিলেন, ‘‘শেষ দু’বছর ধরে ক্রিকেট দেখে আমার মনে হয়েছে, আগের মতো বল সুইং করছে না। বল চকচকে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় কিন্তু লালা ব্যবহার করা। কারণ সবার তো আর সমান ঘাম হয় না। লালা দিয়ে বল পালিশ করার প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হলে একজন পেসারের কাছে সাফল্যের রাস্তা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়।’’ প্রাক্তন বাঁ-হাতি পেসার কারসন ঘাউড়ি যদিও জানিয়ে দিলেন, লালা ব্যবহার বর্জনই সঠিক সিদ্ধান্ত। তাঁর মত, ‘‘বল যারা সুইং করাতে পারে, তাদের এত কিছুর প্রয়োজন হয় না। বলের এক দিক ভাল করে ঘষলেই চকচকে করে দেওয়া যায়। তা ছাড়া ঘামের ব্যবহারে তো আর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। সেটা তো ব্যবহার করা যেতেই পারে।’’
শেষ দু’বছর ধরে এই প্রথা নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে পেসারদের খুব একটা ব্যর্থতা নজরে পড়েনি কারও। এমসিসি-র এই নতুন সিদ্ধান্তে তাই অবাক হচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা।