হাত মেলানোর সময় সঞ্জীব গোয়েন্কাকে (ডান দিকে) এড়িয়ে গেলেন লোকেশ রাহুল (বাঁ দিকে)। ছবি: সমাজমাধ্যম।
লোকেশ রাহুলের সোজা ব্যাটে বল উড়ে গিয়ে পড়ল সাইটস্ক্রিনে। গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে সঞ্জীব গোয়েন্কা অবাক হয়ে দেখলেন। তাঁর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, শটের তারিফ করছেন। কিন্তু রাহুল নেমেছিলেন জবাব দিতে। জবাব দিলেনও। রান তাড়া করতে নেমে ৫৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়লেন। আর মাঠ ছাড়ার সময় গোয়েন্কাকে জবাবও দিলেন রাহুল। অবশেষে সাক্ষাৎ হল তাঁদের। ২ সেকেন্ডের সেই সাক্ষাতে রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, গত বারের অপমানের জ্বালা এখনও ভোলেননি তিনি।
খেলা শেষে যখন দু’দলের ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরা হাত মেলাচ্ছিলেন, তখন মাঠে দেখা গেল গোয়েন্কাকে। রাহুল সকলের সঙ্গে ভাল ভাবে হাত মেলাচ্ছিলেন। এমনকি, তাঁর বদলে যিনি লখনউয়ের অধিনায়ক হয়েছেন, সেই পন্থকেও জড়িয়ে ধরলেন তিনি। পুরনো সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছিলেন। হঠাৎ সামনে এলেন গোয়েন্কা। হাত মেলালেন তাঁরা। তবে রাহুলকে দেখে বোঝা গেল, নিয়ম মেনে হাত মিলিয়েছেন। যদি উপায় থাকত, হয়তো সেটাও এড়িয়ে যেতেন। গোয়েন্কা কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। রাহুল হাত মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরেও পিছনে ঘুরে কথা বলছিলেন তিনি। কিন্তু রাহুল আর কথা বলেননি। তিনি সোজা এগিয়ে যান। বাকিদের সঙ্গে হাত মেলান। আর দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায়নি।
রাহুল বুঝিয়ে দিলেন, গত বারের অপমান তিনি ভোলেননি। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতীয় দলে খেলছেন। সিনিয়র ক্রিকেটার তিনি। সেই ক্রিকেটারকে প্রকাশ্যে অপমান করেছিলেন গোয়েন্কা। তা হজম করা কঠিন। এত দিন পরেও তা হজম করতে পারেননি রাহুল। তবে মুখে কোনও জবাব দেননি। দিয়েছেন ব্যাটে। এই ম্যাচের পরে গোয়েন্কাও হয়তো বুঝে গিয়েছেন, কাকে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।
শেষ বার যখন আইপিএলে লখনউয়ের এই মাঠে রাহুল খেলেছিলেন, সেই দিনটা হয়তো জীবনে কখনও ভুলবেন না তিনি। প্লে-অফে উঠতে ব্যর্থ লখনউয়ের অধিনায়ক রাহুলকে মাঠে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছিলেন গোয়েন্কা। চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনেছিলেন রাহুল। যে দলকে পর পর দু’বছর প্লে-অফে তুলেছেন, সেই দলের মালিকের কাছে ধমক খাবেন, ভাবতেই পারেননি। সে দিনই হয়তো তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, আর লখনউয়ে থাকবেন না। পরের বার নিলামে দিল্লি কেনে তাঁকে। আইপিএলে দিল্লির প্রথম ম্যাচেই প্রতিপক্ষ ছিল লখনউ। কিন্তু সেই ম্যাচে খেলেননি রাহুল। সন্তান হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ হারালেন না। লখনউয়ের মাঠে গিয়ে দিল্লিকে জিতিয়ে গোয়েন্কার ধমকের জবাব দিলেন তিনি।
করুণ নায়ার আউট হওয়ার পর রাহুল যখন ব্যাট করতে নামেন, তখনই তাঁর চোখমুখে আলাদা প্রত্যয় দেখা যাচ্ছিল। প্রতিটি রানের জন্য যে ভাবে দৌড়চ্ছিলেন, তাতে বোঝা যাচ্ছিল সহজে তাঁকে আউট করা যাবে না। হলও তা-ই। গোটা ইনিংসে সুযোগ দিলেন না। নির্ভুল ইনিংস খেললেন। কব্জির মোচড়ে যেমন বল বাউন্ডারিতে পাঠালেন, তেমনই খারাপ বলে বড় শট খেললেন। অর্ধশতরান করলেন। ছক্কা মেরে খেলা শেষ করলেন। ৫৭ রানের ইনিংসে তিনটি চার ও তিনটি ছক্কা মারলেন তিনি। ম্যাচ জিতিয়ে ব্যাট দিয়ে নিজের জার্সির পিছনে লেখা নাম দেখালেন রাহুল। বুঝিয়ে দিলেন, এখনও লখনউয়ের পিচ তাঁর থেকে ভাল কেউ চেনেন না। এই ম্যাচে রেকর্ডও করলেন রাহুল। আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ৫ হাজার রান করলেন তিনি।
রাহুলের জন্য সমর্থনের অভাব ছিল না স্টেডিয়ামে। সবচেয়ে বেশি তাঁর জার্সিই চোখে পড়ল। এখানেও হেরে গেলেন গোয়েন্কা। রাহুলকে দল থেকে বাদ দিলেও লখনউয়ের সমর্থকদের মন থেকে বার করতে পারেননি তিনি। রাহুলকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসাবে গোয়েন্কা জানিয়েছিলেন, তিনি দলে এমন ক্রিকেটার চান, যাঁরা দলের জন্য খেলেন। নিজের জন্য নয়। রাহুলকে সরিয়ে যে ঋষভ পন্থকে তিনি রেকর্ড ২৭ কোটি টাকায় কিনেছেন, তিনি তো নামতেই চাইছিলেন না। ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে আয়ুষ বদোনিকে নামিয়ে দেন আগে। শেষ দু’বলে খেলতে নেমেছিলেন পন্থ। দু’বল খেলে শূন্য রানে ফেরেন। তা হলে পন্থের এই সিদ্ধান্তকে কী বলবেন গোয়েন্কা? তিনি কি দলের জন্য খেলছেন? না কি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন? গোয়েন্কা জানিয়েছিলেন, তাঁর দলের অধিনায়ক পন্থ আইপিএলের সেরা ক্রিকেটার। সেই সেরা ক্রিকেটারকে বলে বলে গোল দিলেন রাহুল। এই রাতটার অপেক্ষাতেই যেন ছিলেন তিনি। গোয়েন্কাও বুঝে গেলেন, কাউকে প্রকাশ্যে অপমান করলে প্রকাশ্যেই তার জবাব পেতে হবে।