ইসলামাবাদে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। ছবি: টুইটার থেকে
দীর্ঘ ২৪ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে পা রাখল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল। কড়া নিরাপত্তায় ক্রিকেটারদের ইসলামাবাদ বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের ছ’সপ্তাহের সফরের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে পাকিস্তান সরকার।
সন্ত্রাসের আতঙ্ক কাটিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়েছে আগেই। তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পূর্ণাঙ্গ সফরে পাকিস্তান পৌঁছল অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল। ছ’সপ্তাহের সফরে প্যাট কামিন্সরা তিনটি টেস্ট, তিনটি এক দিনের ম্যাচ এবং একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবেন।
অজি ক্রিকেটারদের নিয়ে বিশেষ বিমান ইসলামাবাদের মাটিতে নামার পরই টুইট করে তাঁদের আগমনের বার্তা দেন প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। ২০০৯ সালে সফররত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বাসে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানের মাটিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। তার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে সিরিজ আয়োজন করত পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। গত বছর পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা ছিল ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের। শেষ পর্যন্ত সফর বাতিল করে ইংল্যান্ড। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আতঙ্কে প্রথম ম্যাচ খেলার আগেই তড়িঘড়ি দেশে ফিরে যায় নিউজিল্যান্ডও।
তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে সম্ভাব্য সবরকম ব্যবস্থা করেছে পাকিস্তান। সে দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘অতিথি ক্রিকেটারদের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সমতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই রকম ব্যবস্থা কেবল করা হয় উচ্চ পর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধি দলের জন্য। দেশের মধ্যে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীই শুধু এমন নিরাপত্তা পান।’’
ইসলামাবাদে অস্ট্রেলিয়ার টিম হোটেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয়েছে চার হাজার পুলিশ কর্মী ও সেনা জওয়ানকে। কামিন্সরা যখন বাসে করে অনুশীলনে বা ম্যাচ খেলতে যাবেন, সে সময় সংশ্লিষ্ট রাস্তার ১৫ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত সমস্ত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গোটা যাত্রা পথে নজরদারি চালাবে সেনা হেলিকপ্টার। রাওয়ালপিণ্ডির স্টেডিয়ামকেও পরিণত করা হয়েছে দুর্গে। স্টেডিয়ামের কাছাকাছি বহুতলগুলিতে মোতায়ন থাকবে স্নাইপার। খেলার দিন স্টেডিয়ামের কাছাকাছি সমস্ত দোকান এবং অফিস বন্ধ রাখতে হবে।
করাচি এবং লাহৌরেও একই রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপেক্ষা করছে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের জন্য। পাকিস্তানে পৌঁছনোর পর ২৪ ঘণ্টা বিচ্ছিন্নবাসে থাকতে হবে অজি ক্রিকেটারদের। তার পর সকলের করোনা পরীক্ষা হবে। সব ঠিক থাকলে অনুশীলন শুরু করতে পারবেন কামিন্সরা। উল্লেখ্য ৪ মার্চ থেকে শুরু হবে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্ট ম্যাচ।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং আতিথেয়তায় খুশি অজিরা। অধিনায়ক কামিন্স বলেছেন, ‘‘বিমানে আসার সময় আমরা প্রার্থনা করছিলাম সব যেন ঠিক থাকে। নিরাপত্তা এবং হোটেল কর্মীরা সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করছেন। পিসিবি দুর্দান্ত আয়োজন করেছে। হোটেলে থাকার এবং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা দারুণ।’’ দলের সকলেই নিশ্চিন্ত বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক। তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের চার পাশে হয়তো এমন অনেক কিছু থাকবে, যেগুলোয় আমরা অভ্যস্ত নই। জানি আমাদের সুরক্ষার জন্যই সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সফরটা উপভোগ করতে চাই। পাকিস্তান দুর্দান্ত ক্রিকেট দল। আমরা ভাগ্যবান এখানে খেলতে আসতে পেরে। কয়েকটা প্রজন্ম তো পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট খেলার সুযোগই পেল না।’’ আত্মবিশ্বাসী কামিন্সের আশা, অ্যাশেজের মতো ফল করতে পারবেন তাঁদের প্রথম পাকিস্তান সফরে।
পাঁচ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায় লাহৌরের চার্চে বিস্ফোরণের জেরে। অজিরা শেষ বার পাকিস্তান সফর করেছিল ১৯৯৮ সালে। সে বার তিন টেস্টের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এবং এক দিনের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।