রিকি পন্টিং। —ফাইল চিত্র।
অ্যাশেজ সিরিজ়ে আবার ইংরেজ ক্রিকেট ভক্তদের অসভ্যতা। লর্ডস টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজাকে কটূক্তি করেছিলেন তাঁরা। এ বার সিরিজ়ের অন্যতম ধারাভাষ্যকার এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিংকে আঙুর ছুড়ে মারলেন তাঁরা। হেনস্থা করা হল তাঁকে।
ওভালে অ্যাশেজ সিরিজ়ের শেষ টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ় পরাজয় এড়াতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হবে বেন স্টোকসদের। বৃহস্পতিবার ম্যাচের প্রথম দিনই ২৮৩ রানে শেষ হয়ে গিয়েছে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। দিনের খেলা শেষ হওয়ার পর পন্টিং মাঠের এক ধারে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটারদের পারফরম্যন্স বিশ্লেষণ করছিলেন। সে সময় ওভালের গ্যালারি থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে আঙুর ছোড়া হয়। একাধিক আঙুর এসে লাগে পন্টিংয়ের গায়ে। এই ঘটনায় রেগে যান অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ী প্রাক্তন অধিনায়ক। খেলার বিশ্লেষণ থামিয়ে অপরাধীকে খুঁজে বের করতে বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ইয়ান ওয়ার্ড হেসে পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। লাইভ অনুষ্ঠান চলার সময় হেনস্থা নিয়ে পন্টিং বলেন, ‘‘আমাকে আঙুর ছুড়ে মারা হয়েছে। যিনি এই কাজ করেছেন, চাইলে তাঁকে খুঁজে বের করতে পারি।’’ টেলিভিশনের ক্যামেরাতেও দেখা গিয়েছে পন্টিংয়ের পায়ের সামনে একাধিক আঙুর পড়ে থাকতে।
ওভালে ইংল্যান্ড জিতলেও অ্যাশেজ আধারের দখল পাবে না। সিরিজ় অমীমাংসিত ভাবে শেষ হয়ে শেষ বারের জয়ী হিসাবে আধার থাকবে অস্ট্রেলিয়ার দখলেই। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দু’দেশের সম্মানের লড়াই। জাত্যাভিমান। ক্রিকেটারেরা তো বটেই, ক্রিকেটপ্রেমীরাও অনেক সময় আবেগ সংযত না করতে পেরে জড়িয়ে পরেন বাগ্যুদ্ধে। এ বারের অ্যাশেজও তার ব্যতিক্রম নয়। মাত্রা ছাড়িয়ে প্রতিপক্ষ দেশের খেলোয়াড়দের নানা ভাবে বিরক্ত করার চেষ্টা করেন ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। লর্ডসের পর ওভালেও তেমন ঘটনা ঘটল।
অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ১-০ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ অগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।