একাগ্র: আগমনেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ক্ষমতা। —নিজস্ব চিত্র।
ছত্রপতি শিবাজি বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে কুড়ি মিনিটের পথ। অনিতা অ্যাপার্টমেন্টের দ্বিতীয় তলায় মুম্বই ক্রিকেট ক্লাবের দফতর। কাছাকাছি ল্যান্ডমার্ক ভাকোলা ব্রিজ, গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল। সান্তাক্রুজ় ইস্ট। ক’দিন আগে হলেও কেউ চিনত না বললেও অত্যুক্তি হত। কেউ চেনার আগ্রহও কি দেখাত? ও রকম ছোটখাটো স্থানীয় ক্লাব মুম্বইয়ের আনাচেকানাচে কত পড়ে আছে। অথচ, গত এক মাসে এখানেই যা গাড়ির লম্বা লাইন পড়েছে, যে পরিমাণ দর্শনার্থীর ভিড় জমেছে, গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া দেখতেও অত লোক ছুটেছে কি না সন্দেহ।
রাজকোট আসার পথে বিখ্যাত হয়ে ওঠা মুম্বই ক্রিকেট ক্লাবের দফতরে ঢুকে পাওয়া গেল তাঁকে। ও, লিখতে ভুলে গেলাম— আসমুদ্র হিমাচল আলোড়ন ফেলে দেওয়া তাঁকে। সচিন তেন্ডুলকরের গুরু রমাকান্ত আচরেকর ও বিরাট কোহলির ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মার পরে এত হইচই আর কোনও ভারতীয় কোচকে নিয়ে হয়নি। দেওয়াল জুড়ে তৈরি ক্যাবিনেটে সুদৃশ্য ট্রফির মেলা। ছবির কোলাজ। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্বলজ্বল করছে বিশ্ব ক্রিকেটের নবতম নক্ষত্র। সদ্য দ্বিশতরান করে যিনি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজ়ে ভারতের সমতা ফেরানোর অন্যতম নায়ক। যাঁর সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পরবর্তী মহাতারকা এসে গিয়েছে। আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠেন কোচ, ‘‘জানেন, কত লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে শুধু বোঝানোর জন্য যে, ও বয়স ভাঁড়িয়ে খেলছে না! আজকের এই দিনটাই আসত না যদি না ওই লড়াইটা জিততে পারতাম!’’
গুরু-শিষ্য: স্বপ্নপূরণ কোচ জ্বালা সিংহের। ছাত্র যশস্বীর মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন নিজের অতীত। —নিজস্ব চিত্র।
যিনি বলছেন, তাঁর নাম জ্বালা সিংহ। কয়েক দিন আগেও ওই নামটা বললে লোকে জানতে চাইত, কোথাকার কে জ্বালা সিংহ? এখন খুব সহজেই যে কেউ বলে দিতে পারছে, ও আচ্ছা, যশস্বী জয়সওয়ালের কোচ। ‘‘যশস্বীকে যখন আমি প্রথম হাতে পেয়েছিলাম, ভয়ে একদম সিঁটিয়ে রয়েছে,’’ বলতে থাকেন জ্বালা, ‘‘কে বা কারা ওর নামে ভুয়ো সার্টিফিকেট বার করে খেলিয়ে দেয়। তার পরে কিছু লোক ভয় দেখানোর জন্য ওকে বলতে থাকে, তুমি খেললেই পুলিশে ডায়েরি হবে। জেল খাটতে হবে। তাতে ও ক্রিকেট খেলাটাই ভুলে গিয়েছিল। কোনও ম্যাচ খেলতে চাইত না। আর অপবাদ এমনই রটে যায় যে, কোনও ক্লাবও ওকে খেলাতে চাইত না। ওরাও শঙ্কিত থাকত, বয়স ভাঁড়ানো ক্রিকেটারকে খেলালে যদি ক্লাব সাসপেন্ড হয়ে যায়।’’ তাঁর ছাত্র সম্পর্কে চোখে জল এনে দেওয়া অনেক কথাই শোনা গিয়েছে। পানিপুরি বিক্রি করতেন। আজাদ ময়দানের তাঁবুতে শুয়েছেন। পয়সার অভাবে দিন মজুরের মতো খাটতেন যদি বাসের ভাড়াটা অন্তত তোলা যায়। কিন্তু বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ খেলাই বন্ধ করে দিচ্ছিল, এটা তো শুনিনি।
কোচের ক্লাসে যশস্বী। —নিজস্ব চিত্র।
চমকে ওঠার মতো তথ্য ফাঁস করে উঠে পড়েন জ্বালা। বলেন, ‘‘চলুন আপনাকে কতগুলো জায়গা ঘুরিয়ে দেখাই।’’ কে জানত, পরবর্তী সাত-আট ঘণ্টায় মুম্বইয়ের এ মাথা থেকে ও মাথা চষে ফেলার ফাঁকে এক রুদ্ধশ্বাস, রোমহর্ষক, অবিশ্বাস্য কাহিনির সন্ধান পাওয়া যাবে। বলিউডের কোনও অসমসাহসী চিত্রনাট্য লিখিয়েও এমন আজগুবি কাহিনি ভাবার দুঃসাহস দেখাবে না।
পরের স্টপ ঐতিহাসিক আজাদ ময়দান। যেখানে দাঁড়িয়ে ১৯৩১-এর ডিসেম্বরে মহাত্মা গান্ধী ইতিহাসের বৃহত্তম রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য রেখেছিলেন। অতীতে নাম ছিল মুম্বই জিমখানা ময়দান। পাশাপাশি বাইশটি পিচে যেখানে প্রতি মুহূর্তে খুদে প্রতিভার ব্যাটের ঝনঝনানি চলছে। আর জহুরির চোখ নিয়ে বসে ওঁত পেতে বসে থাকেন দ্রোণাচার্যরা। ভারতীয় ক্রিকেটে প্রতিভা অন্বেষণের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি। এখানেই স্কুল ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সারা বিশ্বের নজরে এসেছিলেন রমাকান্ত আচরেকরের দুই ছাত্র। তাঁদের নাম? সচিন তেন্ডুলকর ও বিনোদ কাম্বলি। নবতম রত্ন যশস্বী আবিষ্কারের মঞ্চও আজাদ ময়দান। ‘‘আমার মতো অনেক কোচই আজাদ ময়দানে আসে খেলা দেখতে। সে দিনও আমি গিয়েছিলাম,’’ বলে চলেন জ্বালা, ‘‘দেখলাম, একটা পিচে ব্যাট করে এক কিশোর খুব অভিযোগ জানাচ্ছে। এত খারাপ পিচে কী করে ব্যাট করব?এর পরেই আর একটা বাচ্চা ছেলে ঢুকল। অভিযোগের নামগন্ধ নেই। উল্টে সাবলীল ভাবে দুর্দান্ত সব স্ট্রোক খেলতে থাকল। আমার বন্ধুকে তখন জিজ্ঞেস করি ওর কথা।’’ বন্ধু তখন জানায়, ছেলেটি খুব কষ্টে আছে। ওকে কেউ খেলতে নিচ্ছে না। বয়স ভাঁড়ানোর মারাত্মক অভিযোগ গায়ে সেঁটে গিয়েছে। জ্বালা তখন কাছে ডাকেন কিশোরকে। জানতে চান, তোমার নাম কী? উত্তর আসে— যশস্বী জয়সওয়াল।
মহড়া: তৃতীয় টেস্টের অনুশীলনে হাল্কা মেজাজে সরফরাজের সঙ্গে যশস্বী। মঙ্গলবার রাজকোটে। ছবি: সংগৃহীত।
সেই প্রথম তাঁর নাম জানতে পারলেন জ্বালা। তখন কি তিনি এক বারের জন্যও ভাবতে পেরেছিলেন, এভারেস্ট অভিযানের মতো রুদ্ধশ্বাস এক যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে! বিশ্ব জয় করবেন তাঁরা দু’জনে গুরু-ছাত্র মিলে! এক দিন এই নামটাই প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে সারা ক্রিকেট বিশ্ব জুড়ে! তখনই জ্বালা জানতে পারেন, ছেলেটার থাকার জায়গাটুকুও নেই। উত্তরপ্রদেশের গ্রাম থেকে চলে এসেছে ক্রিকেট খেলার তাড়নায়। অজ্ঞাতকুলশীল এক ভবঘুরে এত বড় একটা শহরে এসে পড়েছে শুধু বুক ভর্তি সাহস আর দু’চোখে স্বপ্ন নিয়ে। সঙ্গে আর কিছু নেই। রাস্তায় খাবারের স্টলে কাজ করে হাতখরচ জোগাড় করে। আজাদ ময়দানের তাঁবুতে শুয়ে রাত কাটায়। জ্বালা সঙ্গে সঙ্গে বলে দেন, আমার বাড়িতে এসে দেখা করো। ‘‘নেটে দেখে আমার ভাল লেগেছিল ঠিকই। তবু আমি পরখ করতে চেয়েছিলাম, ও কত দূর যেতে চায়। দীর্ঘ লড়াই করার মানসিকতা আছে কি না। সেই কারণে বাড়িতে এসে দেখা করতে বলি।’’
তার পর? জ্বালা বলেন, ‘‘দু’দিন পরে এক সকালে এল। কথা বললাম। আমার ভিতর থেকেই কেউ যেন বলছিল, ছেলেটা পারবে।’’ জ্বালার ভিতরেও অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা গুমরোচ্ছিল। বাবার থেকে অল্প কিছু পয়সা নিয়ে তিনিও এক দিন এ ভাবে মুম্বই চলে এসেছিলেন। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। যশস্বীর মতোই উত্তরপ্রদেশ থেকে। রমাকান্ত আচরেকরের সারদাশ্রম স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। বিনায়ক মানেদের ব্যাচে ছিলেন। কিন্তু ওই যে, অ্যায় দিল হ্যায় মুস্কিল, জিনা ইয়াহা...! কে দেবে তাঁকে মাথার উপরে চাল? আজাদ ময়দান থেকে বেরিয়ে দ্রুত কয়েকটা জায়গায় নিয়ে গেলেন জ্বালা। আবর্জনায় ভর্তি, পায়রার বাসার মধ্যে একটা ছোট্ট খুপড়ি খুলে দিলেন। ভাল করে পা ছড়িয়ে বসা পর্যন্ত যায় না, শোয়া তো দূরের কথা। ‘‘মুম্বইয়ে আসার পরে সাড়ে তিন বছর এটাই ছিল আমার ঠিকানা। এত মশা বোধ হয় সারা মুম্বইতে নেই। সারাদিন ধরে ম্যাচ খেলে এখানে ফিরে এসে কিছু
ক্ষণ ঘুমোতাম।’’
ঘরের বাইরের দিকটায় জিম। ভোর পাঁচটা থেকে সেখানে ব্যয়াম করতে চলে আসত ছাত্ররা। তাই ভোরবেলাতেই বেরিয়ে যেতে হত। সেখানে এখন জ্বালা ভাল করে জিম বানিয়েছেন। তাঁর অ্যাকাডেমির ছাত্ররা শরীরচর্চা করতে আসে। মেঝে অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নানা রকম সরঞ্জামে ভর্তি। যশস্বীর পেশিবহুল চেহারার নেপথ্যে এই জিম। তার লাগোয়া দোতলায় ছোটখাটো ইন্ডোর প্র্যাক্টিসের জায়গা। বর্ষাকালে যশস্বীকে এখানে নিয়ে চলে আসতেন জ্বালা। স্বপ্ন সফল করতে হলে সামান্য বৃষ্টির কাছে হার
মানলে চলবে?
বেশির ভাগ দিনই খাবার জুটত না জ্বালার। রাস্তায় লোকের কাছে ভিক্ষার হাতও পেতেছেন, যদি দয়া পরবশ হয়ে কেউ দু’চার পয়সা গুঁজে দেয়। কাজের জন্য হাত পেতেছেন। মাঝেসাঝে কারও বরাত পেয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য পাল্টায়নি। এর মধ্যেই বজ্রপাতের মতো আছড়ে পড়ল দুঃসংবাদ। বাবার ক্যানসার ধরা পড়েছে। ‘‘আমাকে মুম্বই আসার ব্যাপারে চোখ বুজে সমর্থন করেছিলেন বাবা। নিজের যা কিছু জমানো পুঁজি ছিল, তা আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছিলেন, যাও গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করো।’’ বলতে বলতে গলা ধরে আসে জ্বালার। চোখের কোণ ভিজে ওঠে। ‘‘ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারিনি কারণ চোট পেয়ে গেলাম। তখন ঠিক করি, কোচিংয়ে যাব। বড় ক্রিকেটার তৈরি করব। মারণ রোগ ধরা পড়ার পরে বাবার সামনে বসে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কোচ হিসেবে এমন এক জন ক্রিকেটার তৈরি করবই যে ভারতের হয়ে খেলবে। দুনিয়া শাসন করবে।’’ বাড়ি-ঘর ছেড়ে মুম্বই চলে আসার পরে যুদ্ধটা হারতে চাননি জ্বালা। কঠিন তবুও ‘মুম্বই মেরি জান।’ যশস্বীর মধ্যে বাবার সামনে করা প্রতিজ্ঞা পূরণের মশলা খুঁজে পেয়েছিলেন জ্বালা। কোথাও তিনি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যশস্বীর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে। তাঁরও তো সেই এক ভবঘুরের মুম্বই এসে যশ-সন্ধানের কাহিনি। গুরু-ছাত্রের কৃচ্ছ্রসাধনের জায়গাগুলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, যশস্বী জয়সওয়ালের কাহিনি আসলে রুদ্ধশ্বাস ওয়েব সিরিজ়ের পর্ব ২। পর্ব ১ জুড়ে শুধুই তাঁর কোচ থাকবেন। জ্বালা সিংহ। প্রথমটা না হলে যে দ্বিতীয়টার জন্মই হয় না। কলকাতাতেও এক সময় ভাগ্য অন্বেষণে গিয়েছেন তিনি। লক্ষ্মীরতন শুক্লের বাড়িতে থেকে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছেন যদি ওখানে কিছু জোটানো যায়। সেই তিনি এত বড় প্রতিভার কোচ শুধু নন, পালকপিতা। আজ বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে ঘোরেন, খুদে শিক্ষার্থীরা লাইন দিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটার হবে বলে। মনে হবে না, যশস্বীর লড়াইকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতোও কেউ আছেন মুম্বই শহরে! তিনি তাঁর কোচ।
অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি যে, যশস্বীর বাবা-মা আইনসিদ্ধ ভাবে এমনকি তাঁকে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’-ও দিয়েছিলেন। যাতে বয়স ভাঁড়ানো নিয়ে তিনি লড়াই করতে পারেন। ‘‘একাধিক ই-মেল লিখেছি, দফতরে দফতরে গিয়ে ঝগড়া করেছি যে, ছেলেটা মোটেও বয়স ভাঁড়িয়ে খেলেনি। কোন ক্লাবের কোন অসাধু কর্তারা ওর সার্টিফিকেট জাল করেছে, তার দায় ওর হবে কেন?’’ উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকেন জ্বালা। ‘‘মুম্বইয়ের হয়েও বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেলা আটকে গিয়েছিল ওর,’’ ফাঁস করেন তিনি, ‘‘বয়স নিয়ে মেঘ কাটাতে না পারলে আজকের এই ঝকঝকে আকাশটা দেখাই হত না।’’ আজাদ ময়দানের এক আচমকা সাক্ষাৎ! কে জানত, শাপমুক্তি ঘটিয়ে ‘আজাদ’ করে দিয়ে যাবে ভবিষ্যতের এক তারকাকে!
সান্তাক্রুজ়ে নিজের অ্যাকাডেমির মাঠ দেখাতে নিয়ে গেলেন জ্বালা। পাশাপাশি বেশ কয়েকটা নেট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই নেটগুলোতেই পড়ে থেকে তিনি যশস্বীকে তৈরি করেছেন। পাশেই মুম্বই বিমানবন্দর। মাঠের উপর দিয়ে গর্জন করে একের পর এক বিমান উড়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে মনে হবে, সান্তাক্রুজ় থেকে সবচেয়ে বড় উড়ানের নাম তো যশস্বী এয়ারলাইন্স। যা এই মাঠ থেকেই আকাশে উড়েছে।
‘‘আজাদ ময়দানে প্রথম সাক্ষাতের সময়েই শুনেছিলাম, খাবারের স্টলে ও কাজ করত। তাঁবুতে শুয়ে রাত কাটাত। তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম, যদি ওকে আমার কাছে রাখি, কষ্ট পেতে দেব না,’’ অরত্য স্নেহ নিয়ে বলছিলেন জ্বালা। ছাত্রকে জিমে নিয়ে গিয়েছেন, সুইমিং পুলে নিয়মিত সাঁতার কাটিয়েছেন। সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন, জন্মদিন পালন করেছেন। ইংল্যান্ডে খেলতে পাঠিয়েছেন। দিলীপ বেঙ্গসরকরের কাছে নিয়ে গিয়েছেন, বেঙ্গসরকর প্রতিভাবান দেখে খুব সাহায্যও করেছেন। বোলিংয়ে ধার বাড়াবেন বলে শ্রীলঙ্কার স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের সঙ্গে কথা বলিয়েছেন। বিয়ে করার সময় স্ত্রীকে আগাম বলেছেন, ‘‘এই ছেলেটা আমার। ওকে কিন্তু ফেলে দিতে পারব না।’’ স্ত্রী খুশি মনে গ্রহণ করেছেন। স্বামীর মতোই স্নেহ, ভালবাসার অভাব রাখেননি। শুনতে শুনতে মনে হবে না, উত্তরপ্রদেশের এক অজ্ঞাত গ্রামের ছেলের ক্রিকেট ব্যাট হাতে যশলাভের কাহিনি একক সাফল্যের কাহিনি কোথায়? এ তো দু’জনের স্বপ্ন পূরণের রুদ্ধশ্বাস যাত্রা। রূপকথা নয়, বরং রূপকথাকেও হার মানানো গুরু-ছাত্র জুটির সত্য ঘটনা!
যশস্বী কি পারবেন এই সাফল্য ধরে রাখতে? কত প্রতিভাই তো ঝলক দেখিয়ে হারিয়ে যায়। এই মুম্বই শহরেই কত উদাহরণ আছে। বিনোদ কাম্বলি রয়েছেন। জ্বালার কাছে তিন বছর অনুশীলন করা পৃথ্বী শ আছেন। ‘‘যশস্বী ওদের মধ্যে পড়বে না। ওর মধ্যে সেই খিদেটা আমি সব সময় দেখতে পেয়েছি। পরিসংখ্যান খুলে দেখুন। ও যেখানে যা ক্রিকেট খেলেছে, সব জায়গায় রান করেছে। যশস্বী ক্রিকেট দুনিয়াকে শাসন করতে এসেছে।’’ বলতে বলতে হঠাৎ জ্বালার চোখ চলে গেল এক খুদে শিক্ষার্থীর দিকে। মেরেকেটে দশ-এগারো বছরের। কাঁধে বিশাল ব্যাগ নিয়ে ছোট্ট ছেলেটা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে উঠছে ইন্ডোর কোচিং সেন্টারের উদ্দেশে। জ্বালা চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘অ্যাই, তুমি কোথা থেকে আসছ?’’ ছেলেটা বলল, ‘‘স্যর, বান্দ্রা থেকে।’’
জ্বালা চুপ। ওই বাড়তি উদ্যম দেখে তাঁর চোখে মনে হল কিছু ধরা পড়েছে। দৈনন্দিন রুটিনের মধ্যে কোথাও যেন বাড়তি স্ফুলিঙ্গ। চকমকি পাথরের সন্ধান। এক দিন আজাদ ময়দানে দাঁড়িয়ে যে রকম ১২ বছরের যশস্বী জয়সওয়ালকে আবিষ্কার করেছিলেন! মন কি আজ আবার বলে উঠল— ইউরেকা, ইউরেকা!