ওয়াংখেড়ের তারকা দর্শকরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: উৎপল সরকার।
নায়কের দুরন্ত ইনিংসের পরও স্বপ্নভঙ্গ। বিরাট কোহালির দুরন্ত ইনিংসের পরও ব্যর্থ ভারত। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বৃহস্পতিবার ৭ উইকেটে হার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ছিটকে দিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। তবু বিরাটের দুরন্ত ইনিংসের মুগ্ধতায় আরও একবার মাত ক্রিকেট বিশ্ব।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গত চার ম্যাচে থাকলেও এ দিন নামতে পারেননি। চোটের জন্য। দর্শক হিসেবে মাঠের সেরা জায়গা নন স্ট্রাইকার প্রান্ত না-ই বা হল এ দিন, হোক না মাঠের বাইরে থেকে তবু বিরাটের অপার্থিব ইনিংস দেখে কী চুপ করে থাকা যায়। তিনিও পারেননি। তাই ভারতের ইনিংস শেষ হতে না হতেই টুইট ভেসে এল তাঁর — যুবরাজ সিংহের, ‘‘আউটস্ট্যান্ডিং। আবার বিরাট কোহালি! রোহিত আর আজিঙ্কর শুরুটাও দারুণ। এ বার বোলিংটা দারুণ করতে হবে।’’
৪৭ বলে এ দিনের অপরাজিত ৮৯ রানের ইনিংসের পরে এই নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৬০০ রান করে ফেললেন বিরাট ২০১৬-তে। যা রেকর্ড। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কেউ বছরে পাঁচশো রানের গণ্ডিও টপকাননি। চার বছর আগে মার্টিন গাপ্টিলের ৪৭২ রানই ছিল এখনও পর্যন্ত সেরা। নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানের সেই নজির বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়েতে অবলীলায় পেরিয়ে গেল বিরাট শাসনে। কেউ কেউ তো বলছেন ফোর ইন ওয়ান। দ্রাবিড়ের ফিটনেস, ধোনির হার্ড হিট, সৌরভের আগ্রাসন আর সচিনের মতো গ্যাপে শট মারার ক্ষমতা বিরাটের।
সঞ্জয় মঞ্জরেকরের আবার টুইট, ‘‘লারার পর বিরাটকেই দেখলাম এ রকম অসাধারণ গ্রাউন্ড শট খেলতে। বিশেষ করে গ্যাপ খুঁজে খুঁজে।’’ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার আরও বেশি উচ্ছ্বসিত ঝুঁকি না নিয়ে শট মেরেও বিরাটের স্ট্রাইক রেট নিয়ে। ‘‘গোটা ইনিংসে মাত্র একটা ছক্কা বিরাটের। তার পরও স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৯০। এটাই বিরাটের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ব্যাপার। অবশ্য ওকে আজ কিছুটা ভাগ্যও সঙ্গ দিয়েছে।’’
শুধু বিরাটের ব্যাটের দাপটই নয়, বিরাটের ভক্তকুল উদ্বেলিত তাঁর খুচরো রান নেওয়ার গতি দেখেও। অস্ট্রেলিয়াকে বেঙ্গালুরুতে হারানোর পরই বিরাট বলেছিলেন অজিদের বিরুদ্ধে তাঁর অন্যতম বড় পরিকল্পনা ছিল খুচরো রান নিয়ে আরও চাপ বাড়ানো। ঠিক সেই কাজটাও এ দিন ধোনির সঙ্গে আবার সফল ভাবে প্রয়োগ করলেন। ঘন ঘন দু’রান নিয়ে। যা দেখে বিরাট-ভক্তদের কেউ কেউ টুইট করেছেন, ‘‘আচ্ছা অলিম্পিক্সে ক্রিকেট না থাক স্প্রিন্ট তো আছে। তা হলে বিরাট আর ধোনিকে সেখানে নামিয়ে দেওয়া যায় না! যে গতিতে দু’জন দৌড়চ্ছে রান নিতে গিয়ে, নিশ্চিত অলিম্পিক্সে এই গতি দেখালে ভারত সোনা জিতবেই।’’ প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটার আজহার মেহমুদের টুইট, ‘‘বিরাটের মাস্টারক্লাস। ওর ফিটনেস দেখে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। কতগুলো দু’রান নিল আজ বিরাট! ওয়ার্ল্ডক্লাস।’’
প্রাক্তন ক্রিকেটার, ভক্তদের সঙ্গে উচ্ছ্বাস দেখানোর তালিকায় আরও এক জন আছেন। গত ম্যাচেই যাঁর টিমকে হারিয়ে ভারতকে সেমিফাইনালে তুলেছেন বিরাট। সঙ্গে তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ারেও দাঁড়ি টেনে দিয়েছেন। আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন ওয়াটসন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক কেরিয়ার থেকে অবসর নেবেন। স্টিভ স্মিথদের হারিয়ে বিরাট তাই ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই থামিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে, ওয়াটসনকেও। তাতে কী! বিরাট মায়ায় তিনিও মুগ্ধ। এতটাই যে শেন ওয়াটসনের টুইট, ‘‘বিরাট ফের আগুনে ফর্মে। দারুণ লাগছে এটা ভেবে যে শেষ পর্যন্ত আমি ওর সঙ্গে একই দলে খেলব আইপিএলে। ওর সঙ্গে ব্যাট করতে নামার আর তর সইছে না।’’
এটা ঠিক, এত সবের পাশাপাশি এ দিন দু’বলে তিন বার রান আউট করার সুযোগ ছিল বিরাটকে। কিন্তু ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা সে সুযোগ নিতে পারেননি। তার পর আবার ক্যাচআউট হওয়ার সুযোগও দিয়েছেন বিরাট। কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ের দাপট দেখার পর ও সব আর কে মনে রাখে! নায়কের এ রকম ইনিংসের পরও তো ফাইনালে উঠতে পারল না ‘মেন ইন ব্লু’।