রোড টু স্পেন: ঘরে ফেরার সফর-ডায়েরি কিবু ভিকুনার
Coronavirus

কাজে মগ্ন কৃষক, চেনা ছবি শুধু এটাই

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে প্রথমেই যে প্রশ্নটা মনের মধ্যে তোলপাড় করছিল, সেটা হল স্পেনে কী করে ফিরব?

Advertisement

কিবু ভিকুনা(মোহনবাগান কোচ)

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৪:৩৮
Share:

বিস্ময়: পরিচিত শহরের অবস্থা দেখে চমকে গিয়েছেন কিবু। নিজস্ব চিত্র

অনেক দিন পরে খুব চাপমুক্ত লাগছে। করোনা-আতঙ্কে এত দিন কার্যত নিদ্রাহীন কাটিয়েছি। বাড়ি ফেরার আনন্দে শনিবারের রাতটা খুব ভাল ঘুমিয়েছি। ঠিক করেছি, এ রকম অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। তাই স্পেনযাত্রাটা ডায়েরিতে লিখে রাখব।

Advertisement

লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে প্রথমেই যে প্রশ্নটা মনের মধ্যে তোলপাড় করছিল, সেটা হল স্পেনে কী করে ফিরব? ভারতে স্প্যানিশ দূতাবাসের কর্মীরা নিয়মিত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন যাতে দ্রুত আমরা দেশে ফিরতে পারি। কিন্তু মনের মধ্যে সংশয়টা থেকেই গিয়েছিল। গত সপ্তাহে যখন স্পেনের দূতাবাস থেকে জানানো হল, আমাদের কলকাতা থেকে বাসে করে দিল্লি যেতে হবে, সেখান থেকে বিমানে আমস্টারডাম। তখনও পুরোপুরি দুশ্চিন্তা দূর হয়নি। বার বারই মনে হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত বাস আসবে তো কলকাতায়? শনিবার রাতে যখন খবর পেলাম, বাস কলকাতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে উদ্বেগ দূর হয়ে গেল। পোলান্ডে স্ত্রীকে ফোন করে বললাম, আর কোনও চিন্তা নেই। রবিবার সকাল পৌঁনে ন’টায় যাত্রা শুরু হবে।

সকাল আটটাতেই আমরা সবাই আবাসনের গেটের সামনে লাগেজ নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাসের দেখা নেই। রক্তচাপ বাড়তে শুরু করল। তা হলে কি তীরে এসে তরী ডুববে? আবার কী কলকাতায় গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হবে? জোসেবা বেইতিয়া, ফ্রান গঞ্জালেস, ইস্টবেঙ্গল কোচ মারিয়ো রিভেরা থেকে খুয়ান মেরা— সকলকেই দেখে মনে হল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: নাইটদের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার আগে শাহরুখকে কী বলবেন, জানিয়ে দিলেন রাসেল

অবশেষে স্বস্তি। সাড়ে ন’টার সময় বাসের এক কর্মী ফোন করে জানালেন, মিনিট কুড়ির মধ্যেই চলে আসছেন। আবাসনের গেটের বাইরে দেখলাম, লকডাউনের মধ্যেও কয়েক জন এসেছেন আমাদের বিদায় জানাতে। মনটা খারাপ হল। আগামী মরসুমে তো আর কলকাতায় ফেরা হবে না।

ঠিক পৌঁনে দশটায় বাস এসে দাঁড়াল আবাসনের গেটের সামনে। সকলকে বিদায় জানিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হল। যে রাস্তা দিয়ে গত এক বছরে অসংখ্যবার যাতায়াত করেছি, তা সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। রাস্তার ধারের অধিকাংশ দোকান বন্ধ। মনে হচ্ছিল যেন শহরের মানুষ ঘুমিয়ে আছেন। তাঁদের পাহারা দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা।

বাসে উঠেই শুনেছিলাম, রাস্তা ফাঁকা, তাই মিনিট কুড়ির মধ্যেই হাইওয়েতে পৌঁছে যাব। কিন্তু আমাদের পৌঁছতে লাগল প্রায় এক ঘণ্টা। বার চারেক পুলিশ আমাদের আটকাল কাগজপত্র পরীক্ষা করতে। এগারোটা নাগাদ হাইওয়েতে ওঠার পরে চারপাশের ছবিটা বদলাতে শুরু করল। রাস্তা ফাঁকা, দোকান-বাজার অধিকাংশই বন্ধ। কিন্তু মাঠে কৃষকেরা কাজ করছেন। অনেক দিন পরে চেনা দৃশ্য দেখে খুব আনন্দ হচ্ছিল। বাসে বসেই স্যান্ডউইচ ও ফল দিয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম।

আরও পড়ুন: ‘এই সময়টা যেন ভয়ঙ্কর উইকেটে টেস্ট ম্যাচ খেলা’

আমাদের পরিকল্পনা ছিল, রবিবার রাতটা আমরা বারাণসীর হোটেলে বিশ্রাম নেব। সোমবার সকালে দিল্লির উদ্দেশে আবার যাত্রা করব। কিন্তু কলকাতা ছাড়ার আগেই দূতাবাস থেকে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, হোটেল কর্তৃপক্ষ বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন। কারণ, বারাণসী শহরে বাইরের কাউকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সঙ্গে মহিলা ও শিশু সবাই মিলে আলোচনা করে ঠিক করলাম, সঙ্গে যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার-দাবার ও জল রয়েছে, তখন যাত্রা থামাব না। একেবারে দিল্লিতে পৌঁছেই বিশ্রাম নেব। তবে তুর্সুনভ, পাপা ও সাইরাস বাড়ি ফিরতে পারল না বলে খারাপ লাগছে।

(সাক্ষাৎকার-ভিত্তিক অনুলিখন: শুভজিৎ মজুমদার)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement