কমনওয়েলথে ব্রোঞ্জ জিতেছে ভারতীয় মহিলা হকি দল ছবি: পিটিআই
পদকের সংখ্যা ৬১। তার মধ্যে ২২টি সোনা। ১২টি খেলায় এসেছে এই পদক। কমনওয়েলথ গেমসে চমক দেখিয়েছেন ভারতীয় খেলোয়াড়রা। এ বারের প্রতিযোগিতায় নতুন চারটি খেলায় পদক জিতেছে ভারত। শ্যুটিং, তিরন্দাজির মতো খেলা এ বারের কমনওয়েলথ গেমসে ছিল না। থাকলে পদকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। কারণ, ভারত এই খেলাগুলিতে শক্তিশালী। কিন্তু কমনওয়েলথের এই ছন্দ কি এর পরেও ধরে রাখতে পারবে ভারত? বিশেষ করে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ, অলিম্পিক্স বা এশিয়াডের মতো প্রতিযোগিতায় কি ভারতীয় খেলোয়াড়দের এই দাপট দেখা যাবে?
কমনওয়েলথে সাফল্যের মধ্যেই ভবিষ্যতের প্রশ্ন উঠছে। কারণ, কমনওয়েলথ গেমসে আমেরিকা, চিন অংশ নেয় না। অ্যাথলেটিক্সে জামাইকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ খেললেও তারা দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের এই প্রতিযোগিতায় পাঠায় না। এখানে বরং দেখে নেওয়া হয় নতুন প্রতিযোগীদের, যাঁরা আগামী দিনে তারকা হয়ে উঠতে পারেন। সেরা ক্রীড়াবিদদের রেখে দেওয়া হয় অলিম্পিক্স, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ বা ডায়মন্ড লিগগুলির জন্য। ভারত থেকে সেখানে প্রথম সারির ক্রীড়াবিদরাই এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তাই বিশ্বমঞ্চে এই সব শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে খেলা কিন্তু মোটেই সহজ হবে না। তার জন্য খেলার মান আরও বাড়াতে হবে ভারতীয় ক্রীড়াবিদদের।
এ বার কমনওয়েলথ গেমসে ২২টি সোনা, ১৬টি রুপো ও ২৩টি ব্রোঞ্জ (মোট ৬১টি) জিতে পদক তালিকায় চার নম্বরে শেষ করেছে ভারত। ২০১৮ সালে গোল্ড কোস্টে ৬৬টি পদক জিতেছিল ভারত। তার মধ্যে ২৬টি সোনা, ২০টি রুপো ও ২০টি ব্রোঞ্জ ছিল। কিন্তু সে বার শুধু শ্যুটিংয়েই ১৬টি পদক জিতেছিল ভারত। তার মধ্যে ছিল সাতটি সোনা, চারটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ। এ বার শ্যুটিং থাকলে পদকের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা ছিল।
এ বারের ৬১টি পদকের মধ্যে নতুন যে খেলাগুলি থেকে পদক এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লন বোল। এই প্রতিযোগিতায় একটি করে সোনা ও রুপো জিতেছে ভারত। এ ছাড়া জুডোয় দু’টি রুপো ও একটি ব্রোঞ্জ, হকিতে একটি রুপো ও ব্রোঞ্জ পদক রয়েছে। রুপো এসেছে মহিলাদের ক্রিকেট থেকে। ২০১৮ সালে গোল্ড কোস্টে এই খেলাগুলিতে কোনও পদক ছিল না ভারতের।
নজর কেড়েছে অ্যাথলেটিক্স। একটি সোনা, চারটি রুপো ও তিনটি ব্রোঞ্জ মিলিয়ে মোট আটটি পদক এসেছে, যা গোল্ড কোস্টের থেকে পাঁচটি বেশি। এ বার ট্রিপল জাম্পের মতো ইভেন্টে সোনা, রুপো দুটোই জিতেছে ভারত। লং জাম্পে পদক জিতেছেন মুরলী শ্রীশঙ্কর। রেস ওয়াকে দু’টি পদক এসেছে। স্টিপলচেজে ১৯৯৮ সাল থেকে প্রথম তিনটি স্থান দখল করে এসেছে কেনিয়া। ২৪ বছর পরে প্রথম বার ভারতের অবিনাশ সাবলে সেই একাধিপত্যে থাবা বসিয়েছেন। রুপো পেয়েছেন তিনি।
অ্যাথলেটিক্সে ভারত সব থেকে বেশি পদক পেয়েছিল ২০১০ সালের দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসে। কিন্তু সে বারের ১২ পদকের থেকে এ বারের আট পদকের গুরুত্ব বেশি বলে মনে করছেন প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ অঞ্জু ববি জর্জ। এখন ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সহ-সভাপতি অঞ্জু। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের মাটিতে, দেশের সমর্থকদের সামনে জেতা আর বিদেশে ওই চাপের মধ্যে জেতা এক নয়। তা ছাড়া গত ১২ বছরে খেলার মান আরও বেড়েছে। এ বার ভারতীয় ক্রীড়াবিদরা যে ভাবে অ্যাথলেটিক্সের আলাদা আলাদা ইভেন্টে জিতেছে সেটা সব থেকে বেশি ভাল লাগছে। সাবলের পারফরম্যান্সটাই দেখুন।’’ সত্যি তো, ৩০০০ মিটার স্টিপলচেজে যে ভাবে কেনিয়ার প্রতিযোগীদের মধ্যে সাবলে জায়গা করে নিয়েছেন তা উল্লেখযোগ্য। ০.০৫ মিলিসেকেন্ডের জন্য সোনা জিততে পারেননি তিনি।
চমক দেখিয়েছেন স্কোয়াশ খেলোয়াড় সৌরভ ঘোষাল। পুরুষদের সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন তিনি। ব্রোঞ্জ পদকের খেলায় ইংল্যান্ডের জেমস উইলস্ট্রপকে হারিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, এই জেমসের বাবা ম্যালকমের কাছেই ১৫ বছর ধরে স্কোয়াশের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সৌরভ।
টেবিল টেনিসে শরথ কমল আবার কমনওয়েলথে ভারতীয়দের মধ্যে রেকর্ড গড়েছেন। সব মিলিয়ে কমনওয়েলথে মোট ১৩টি পদক জিতেছেন তিনি। এ বারই এসেছে সব থেকে বেশি চারটি পদক। তার মধ্যে তিনটি সোনা ও একটি রুপো। প্রতিযোগিতার ১১ দিনই খেলতে নেমেছেন তিনি।