ঋদ্ধিমান দলের নীরব নায়ক, বলছেন উচ্ছ্বসিত হেড কোচ

টেস্টে দেখা সেরা কিপিং ঋদ্ধির: শাস্ত্রী

পঁয়ত্রিশ বছরের ওপর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত শাস্ত্রী। হয় নিজে খেলেছেন, নয়তো কমেন্ট্রি করেছেন, অথবা ভারতীয় দলের ডিরেক্টর বা কোচের ভূমিকা সামলাচ্ছেন। অ্যালান নট থেকে জেফ দুঁজো থেকে ইয়ান হিলি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলম্বো শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

দুরন্ত: আরও এক শিকার ঋদ্ধির। স্টাম্পড হলেন পেরেরা। ছবি: এএফপি।

কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠে চার দিনে দ্বিতীয় টেস্ট জেতার পরে তাঁর ‘ম্যাচের সেরা’ বেছে নিলেন রবি শাস্ত্রী। পছন্দের সেই নাম? ঋদ্ধিমান সাহা।

Advertisement

ভারতীয় দলের হেড কোচ আনন্দবাজার-কে বলে দিলেন, ‘‘এ রকম কঠিন পিচে ঋদ্ধি যা উইকেটকিপিং করেছে, আমি মুগ্ধ। কখনও এতটা উচ্চমানের কিপিং দেখিনি। আমার কাছে এই টেস্টের সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক হচ্ছে ঋদ্ধিমান সাহার উইকেটকিপিং।’’

পঁয়ত্রিশ বছরের ওপর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত শাস্ত্রী। হয় নিজে খেলেছেন, নয়তো কমেন্ট্রি করেছেন, অথবা ভারতীয় দলের ডিরেক্টর বা কোচের ভূমিকা সামলাচ্ছেন। অ্যালান নট থেকে জেফ দুঁজো থেকে ইয়ান হিলি। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি— নানা প্রজন্মের সেরা উইকেটকিপারদের কাছ থেকে দেখেছেন শাস্ত্রী। অনেকের কিপিং নিয়ে বিশ্লেষণও করতে হয়েছে তাঁকে ধারাভাষ্যকার থাকার সময়। কিন্তু মনে করতে পারছেন না টেস্টে কঠিন পিচে এত ভাল কিপিং আর কখনও দেখেছেন বলে। ‘‘নাহ্‌, টেস্ট ক্রিকেটে এটাই আমার দেখা সেরা কিপিং,’’ মাঠ থেকে ফিরে টিম হোটেলের সুইমিং পুলের ধারে বসে দ্বিধাহীন ভাবে বলে দিলেন ঋদ্ধির হেড কোচ।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঘরে-বাইরে ভাবনাটাই ভুলে যেতে চান বিরাট

এমনিতেই ঋদ্ধিমানের মানসিকতার বিরাট ভক্ত শাস্ত্রী। মনে করেন, ছোটখাটো শরীরটার ভিতরে আগুনে এক যোদ্ধা আছে। যে বিনা যুদ্ধে এক কণা জমিও কখনও ছাড়বে না। বাইরে যতই নমনীয় আর শান্ত দেখাক, ঋদ্ধির ভিতরের এই আগুনটাকে শ্রদ্ধা করেন দলের সকলে। এই মানসিকতা ব্যাট হাতে বারবার দেখিয়েছেন বাংলার উইকেটকিপার। কলম্বোর এসএসসি মাঠেও এই টেস্টে সাত নম্বরে নেমে ৬৭ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেছেন ঋদ্ধি। যা দলের ৬২২-৯ স্কোর তোলার পিছনে অনেক বড় ভূমিকা নিয়েছে।

• ভারত জয়ী ইনিংস ও ৫৩ রানে, সেরা: জাডেজা ৭০ রান ও ৭ উইকেট।

• শ্রীলঙ্কায় এটাই ভারতের প্রথম ইনিংসে জয়। গলে সবচেয়ে বড় রানের ব্যবধানে টেস্ট জিতেছিল ভারত।

• শ্রীলঙ্কায় এই নিয়ে আটটি টেস্ট জিতল ভারত। আর কোনও সফরকারী দল শ্রীলঙ্কায় এত টেস্ট জিততে পারেনি। ভারত আর কোনও দেশে এতগুলো টেস্ট জেতেনি।
• এই নিয়ে টানা আটটা টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত। ২০১৫ থেকে ২০১৭-য়। এর আগে অস্ট্রেলিয়া টানা ন’টা টেস্ট সিরিজ জিতেছে ২০০৫ থেকে ২০০৮-এ।
• শ্রীলঙ্কাকে এই নিয়ে টানা দু’টি টেস্ট সিরিজে হারাল ভারত। দু’বছর আগে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ হারিয়েছিল ভারত। এ বার ২-০ এগিয়ে।
• টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে বিরাট কোহালি ২৮টির মধ্যে ১৮টি টেস্টে দলকে জেতালেন। শুধু স্টিভ ওয় (২১) ও রিকি পন্টিংয়ের (২০) ক্যাপ্টেন হিসেবে ২৮ টেস্টের পর তাঁর চেয়ে বেশি সাফল্য রয়েছে।
• ক্যাপ্টেন হিসেবে প্রথম ২৮টি টেস্টের মধ্যে এমএস ধোনি ১৫টি ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ১২টি টেস্টে ভারতকে জিতিয়েছিলেন।

কিন্তু রবিবাসরীয় কলম্বোয় বসে শাস্ত্রীর মুখে বেশি করে শোনা গেল কিপার ঋদ্ধির কথা। ‘‘অসাধারণ ফুটওয়ার্ক। কী দারুণ কালেকশন! বল ধরার ভঙ্গি নিখুঁত। তেমনই ভাল টেকনিক আর অ্যান্টিসিপেশন।’’ উচ্ছ্বসিত ভাবে বলতে থাকেন তিনি। তার পরেই বলে ওঠেন, ‘‘ওর কিপিং দেখে আমার বব টেলরের কথা মনে পড়ে। টেলরেরও এ রকম নিখুঁত কালেকশন ছিল।’’

কথা বলতে বলতেই শাস্ত্রী হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন তাঁর উইকেটকিপারকে নিয়ে। বলে উঠলেন, ‘‘ঋদ্ধি এই টিমের প্রচারহীন নায়ক। খুব বেশি কথাবার্তা ওকে নিয়ে হয় না। সেই কারণে ওর অবদানটা আড়ালেই থেকে যায়। কিন্তু এই টেস্টে ও যা কিপিং করেছে, সর্বকালের সেরা কিপিং পারফরম্যান্সের মধ্যে জায়গা পাবে।’’ এখানেই আবেগ থামল না শাস্ত্রীর। আরও বললেন, ‘‘একটা টিম যখন মাঠে খেলতে নামে, দু’জন একাকী যোদ্ধা থাকে। এক জন অধিনায়ক। অন্য জন উইকেটকিপার। সেই কারণে এই দু’জন দারুণ কিছু করলে সেটার আলাদা গুরুত্ব থাকে।’’

ঋদ্ধিমানের কিপিংয়ে মুগ্ধ শাস্ত্রী।

গত কাল শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। তাঁকে হার্দিক পাণ্ড্যের বলে দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান ঋদ্ধিই। যেটাকে শাস্ত্রী বর্ণনা করছেন, তাঁর দেখা অন্যতম সেরা এবং ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে। মেন্ডিসের ব্যাটের ভিতরের দিকের কাণায় লেগে লেগসাইডের দিকে নিচু ক্যাচ আসছিল। ঋদ্ধি তাঁর বাঁ দিকে শরীর ছুড়তে গিয়ে দেখেন বল পড়ছে সামনে। অসাধারণ ফিটনেস ও রিফ্লেক্স দেখিয়ে শরীরের ভারসাম্য ধরে রেখে সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় নিচু ক্যাচটি তুলে নেন তিনি। যা দেখার পরে ক্রিকেট দুনিয়ায় ফের ‘সুপারম্যান ঋদ্ধিমান’-কে নিয়ে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে।

ঋদ্ধিমানকে কি সেরা কিপার বলবেন? দ্রুত জবাব দিলেন শাস্ত্রী, ‘‘সেরা কিপারদের সঙ্গে অবশ্যই তুলনা করা যেতে পারে ঋদ্ধির। ও সবচেয়ে ভালদের পাশাপাশি থাকার যোগ্য।’’ এ দিন রবীন্দ্র জাডেজার বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের দুর্দান্ত ক্যাচও নিলেন ঋদ্ধি। এসএসসি-র এই পিচে বল পড়ে আসছিল খুব মন্থর গতিতে। যে কারণে উইকেটের পিছনে বা আশেপাশে ফিল্ডিং করা খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর তৃতীয় বা চতুর্থ দিনের উপমহাদেশীয় উইকেট বলে কোনও বল লাফাচ্ছে, কোনওটা গড়াচ্ছে। অসমান বাউন্স উইকেটকিপারের কাজ আরও কঠিন করে দিচ্ছিল। এ রকম পিচে ঋদ্ধি ‘বাই’ দিলেন মাত্র ৪ রান। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে তাঁর উইকেটকিপারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে গেলেন অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে টেস্টে সেরা কিপার ঋদ্ধিমানই। উইকেটের পিছনে সব সময় সক্রিয়। খুবই নিরাপদ কিপার।’’ যাঁর সম্পর্কে বলা, সেই ঋদ্ধিমান চলতি টেস্টেই তাঁর ৫০তম ক্যাচ নিয়েছেন। এই টেস্টের পরে তাঁর শিকার সংখ্যা এখন ৫২ ক্যাচ এবং ৯ স্টাম্প।

স্কোরকার্ড

ভারত (প্রথম ইনিংস) ৬২২-৯ (ডি)

শ্রীলঙ্কা ১৮৩ ও ৩৮৬

শ্রীলঙ্কা (আগের দিন ২০৯-২)

(দ্বিতীয় ইনিংস)

মালিন্দা পুষ্পকুমার বো অশ্বিন ১৬

চণ্ডীমল ক রাহানে বো জাডেজা ২

ম্যাথিউজ ক ঋদ্ধি বো জাডেজা ৩৬

ডিকওয়েলা ক রাহানে বো হার্দিক ৩১

দিলরুয়ান স্টা. ঋদ্ধি বো জাডেজা ৪

ধনঞ্জয় ক রাহানে বো জাডেজা ১৭

রঙ্গনা হেরাথ ন. আ. ১৭

নুয়ান প্রদীপ ক শিখর বো অশ্বিন ১

অতিরিক্ত ৯
মোট ৩৮৬

পতন: ২৩৮-৩ (মালিন্দা, ৭২.২), ২৪১-৪ (চণ্ডীমল, ৭৩.৫), ৩১০-৫ (করুণারত্ন, ৯৫.৪), ৩১৫-৬ (ম্যাথিউজ, ৯৭.৩), ৩২১-৭
(দিলরুয়ান, ৯৯.৩), ৩৪৩-৮ (ধনঞ্জয়, ১০৫.৪), ৩৮৪-৯ (ডিকওয়েলা, ১১৫.১), ৩৮৬-১০ (প্রদীপ, ১১৬.৫)।

বোলিং: উমেশ যাদব ১৩-২-৩৯-১, আর. অশ্বিন ৩৭.৫-৭-১৩২-২,
মহম্মদ শামি ১২-৩-২৭-০, রবীন্দ্র জাডেজা ৩৯-৫-১৫২-৫, হার্দিক পাণ্ড্য ১৫-২-৩১-২।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement