দুই প্রজন্ম
ক্রিকেট টিমগেম হলেও একটা টিমে এমন কিছু ক্রিকেটার থাকে, যাদের উপর বেশি নির্ভর করতেই হয়। মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দা, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়রা রঞ্জিতে বাংলাকে যথেষ্ট ভরসা জোগালেও দলটাকে কিন্তু আরও উন্নত করে তুলেছে প্রজ্ঞান ওঝা। ছেলেটা বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে এখন যেন একটা আতঙ্ক। কোনও সন্দেহ নেই ও বাংলার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার হয়ে উঠছে। আর এই প্রজ্ঞানকে দেখে বারবার আমার মনে পড়ছে দিলীপ দোশীর কথা।
বেশ মনে আছে, দিলীপকে একটা দিক থেকে ৩০-৩৫ ওভার বল করাতাম। আর অন্য দিক থেকে সমীর চক্রবর্তী, রমেশ ভাটিয়া, সুব্রত গুহ-রা পালা করে বল করে যেত। একটা দিক দিলীপই ধরে থাকত। আর বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতাম ওর উপরই। এখন যেমন বাংলা দলে সেই দিলীপের ভূমিকাতেই দেখা যাচ্ছে প্রজ্ঞানকে। মনোজ তিওয়ারি যে ভাবে ব্যবহার করছে ওকে, তার প্রশংসা করতেই হবে।
বাঁ-হাতি স্পিনারদের দলে পাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, ডানহাতি ব্যাটসম্যানরা তাদের যথেষ্ট সমীহ করে চলে। সাধারণত যে কোনও দলের ৭০ শতাংশ ব্যাটসম্যানই ডান হাতি হয়। বাঁ-হাতি স্পিনারদের সমঝে না খেললে তাদের বিপদ। বিষেণ সিংহ বেদী, বিনু মাঁকড়, ইংল্যান্ডের হেডলি ভেরিটিরা এই সুবিধাটা মারাত্মক ভাবে কাজে লাগাত। উইকেটে যদি টার্ন না-ও থাকে, যদি পাটাও হয়, তা হলেও লেগ-মিডল স্টাম্পে বল করে ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে পারে বাঁ-হাতি স্পিনাররা।
বাঁ-হাতিরা যদি লেগ-মিডলে বল করে আর সেই বল যদি স্পিন করে, ব্যাটসম্যানের পক্ষে তা শরীর দিয়ে খেলা ঝুঁকির হয়ে যায়। পায়ে লাগলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ব্যাটে খেলতে গেলে কট বিহাইন্ড বা ক্লোজ ইন ফিল্ডারদের হাতে ক্যাচ যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর ফস্কালে তো বোল্ড। কয়েক জনের কাছে শুনলাম মঙ্গলবার বিদর্ভের এক ব্যাটসম্যানকে এ ভাবেই বোল্ড করে দিয়েছে প্রজ্ঞান।
আবার বাঁ-হাতি স্পিনাররা অন দ্য লেগ বল করলে রান তোলা খুব কঠিন। এ ভাবেই একই জায়গায় বলটা রেখে ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখত বিনু মাঁকড়। এই ধরণের বল অ্যাক্রস বা আড়াআড়ি খেলতে গেলে তা টপ এজ লেগে ক্যাচ আউট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জন্যই বাঁ-হাতি স্পিনাররা ব্যাটসম্যানদের কাছে অস্বস্তির কারণ। দোশীর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা যে রকম ছিল, এখন প্রজ্ঞানের ক্ষেত্রেও তাই। ওর বোলিংয়ে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা চরম অস্বস্তিতে পড়ছে।
সম্প্রতি ওকে চাকিংয়ের দায়ে সাময়িক নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। অথচ নিজের বোলিং অ্যাকশন শুধরে কী দারুণ ভাবে ফিরে এসেছে ছেলেটা। পঞ্চাশের দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ অফ স্পিনার সোনি রামাদিন বা আমাদের বাপু নাদকার্নিদের দেখতাম ফুল হাতা শার্ট পড়ে খেলত। যাতে ওদের যেটুকু কনুই ভাঙত, সেটুকুও যেন বোঝা না যায়। প্রজ্ঞান তো তাও করছে না। অর্থাৎ, ও নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কতটা আত্মবিশ্বাসী, এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
মোট কথা প্রজ্ঞান এসে যাওয়ায় বাংলা দলটার মধ্যে দারুণ একটা ব্যালান্স এসে গিয়েছে। যার জন্য মনোজরা এখন সেমিফাইনালের দিকে দৌড়চ্ছে। যদিও ক্রিকেটে যখন, যা খুশি হতে পারে। তাই যতক্ষণ না শেষ চারে পৌঁছচ্ছে, ততক্ষণ কিছু বলা উচিত নয়।
তবে এটুকু বলব, বাংলা এবং প্রজ্ঞানকে নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়।